ভিডিও EN
  1. Home/
  2. একুশে বইমেলা

প্রাণ জাগাতে বইয়ের বিকল্প নেই: ইমরুল ইউসুফ

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ | প্রকাশিত: ০৩:৩২ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

ইমরুল ইউসুফ শিশুসাহিত্যিক। জন্ম ১৯৭৭ সালের ৪ এপ্রিল সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে। ১৯৯৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন ভোরের কাগজের ফিচার বিভাগে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ২০২১ সালে যোগদান করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ক্রিয়েটিভ সেলে। গণনাট্যকেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সূত্রে মঞ্চনাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি কাজ করেছেন বেতার ও টিভি নাটকে। বাংলাদেশ বেতার ঢাকা কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন। বর্তমানে বাংলা একাডেমির উপপরিচালক। তার বইয়ের সংখ্যা ৪১টি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ এসবিএসপি সাহিত্য পুরস্কার (২০২২), এনআরবি লাইফ-প্রতিভা প্রকাশ শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০২২), আলপনা শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ (২০২২) বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

তার উল্লেখযোগ্য বইসমূ—শিশুতোষ গল্প: নানাবাড়ির ছানাভূত (২০২৩), যুদ্ধের খেলা (২০২২), সাতরঙা আইসক্রিম (২০২২), চড়ুই ও কুমড়ো লতা (২০২১), ফ্রিজের মাছের কষ্ট (২০২০), গল্পে গল্পে অঙ্ক শিখি (২০১৬), আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন একটি হনুমান আসে (২০১৬), এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার গল্প (২০১১), ভালোবাসার সবুজ গাছ (২০১১), বৃষ্টির মেয়েটা ব্যাঙের ছেলেটা (২০০৬) প্রভৃতি। বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক বই: বঙ্গবন্ধুর বাড়ি (২০২০), বঙ্গবন্ধুর বাড়ির উঠোনে (২০২০), শিশু ভাবনায় বঙ্গবন্ধু (২০১৮)।

রম্যরচনা: ফাটাফাটি ভালোবাসা (২০১৯), অতি অল্প ট্যারা গল্প (২০০৬)। কবিতা বা ছড়া: আমার ঘরের দেওয়ালে বঙ্গবন্ধুর কোনো ছবি নেই (২০২০), তোমার চুল আকাশে হেলান দিয়ে নক্ষত্র দেখে (২০০৬), মজার পড়া ফলের ছড়া (২০১৮), ক্যাম্পানুকাব্য (২০১২)। জীবনীগ্রন্থ: আমাদের ভাষাশহিদ (২০০৯), শেরে বাংলা (২০০৮), কৃষ্ণ কথা (২০০৬), মানুষের যিশু (২০০৪)। স্থাপত্য: কান্তজীর মন্দির (২০০৫)। অন্যান্য গ্রন্থ: মিলিয়ে নাও তোমার হাতের ছাপ (২০২৩), বাংলাদেশের মাছ (২০১৯), মনে কতো প্রশ্ন জাগে (২০০৩), ছোটোদের বিশ্বরেকর্ড (২০০২) প্রভৃতি।

আরও পড়ুন: পাঠকের ঘাড়ে বই চাপিয়ে দেওয়াটা দোষের: রফিকুজ্জামান রণি 

সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?
ইমরুল ইউসুফ: অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এ আমার ৮টি বই প্রকাশিত হচ্ছে। একটি ছাড়া বাকি সাতটি বই শিশুতোষ।

জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?
ইমরুল ইউসুফ: ভোরের শিশিরের মতো নিটোল, সূর্যালোকের মতো উজ্জ্বল, স্রোতের মতো গতিশীল, জোছনার মতো মনোরম, বন-বনানীর মতো সবুজ ও সজিব, পাখির কুজনের মতো মুখরিত, বাতাসের মতো অবারিত, মায়ের কোলের মতো নিরাপদ বইমেলা দেখতে চাই। বাঙালির প্রাণের যে মেলায় এসে সবার মন নেচে উঠবে আনন্দে, বই কিনবে সানন্দে। খুঁজে খুঁজে পছন্দের বইটি হাতে এলে ঝরা পালকের মতো উচ্ছ্বসিত হবে মন; তেমন বইমেলা দেখতে চাই। দেখতে চাই ছোট, বড় সবার হাতে বই, বই নিয়ে আলোচনা, লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের মেলবন্ধন একে অপরের প্রতি সম্মান ও সম্প্রীতির অটুট বন্ধন। সৌজন্য হিসেবে কেউ বই চাইছে না, কেউ দিচ্ছেও না। বই লেখক ও প্রকাশক দুজনের মুখে লেপ্টে আছে মিষ্টি হাসি।

জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?
ইমরুল ইউসুফ: বৃহৎ কোনো আয়োজনে অসঙ্গতি থাকা দোষের নয়, তবে তার পরিমাণ কতটুকু কিংবা অসঙ্গতি দূরীকরণে আয়োজক প্রতিষ্ঠান কতটা দায়িত্বশীল; সে বিষয়গুলো বিবেচ্য। একজন দর্শনার্থী হিসেবে বলতে পারি মেলা শুরুর দিন থেকে দর্শনার্থীরা যাতে খুব সহজে স্টল খুঁজে পান, স্টলগুলোতে নম্বর লাগানোসহ কোন রোতে কোন কোন প্রকাশনী আছে, কোথায় শিশু কর্নার, তথ্যকেন্দ্র, খাবার দোকান, প্রাথমিক স্বাস্থসেবাকেন্দ্র, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ, লেখক বলছি মঞ্চের দিকনির্দেশনাসহ মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত আলো এবং ধুলোবালি মুক্ত থাকলে দর্শনার্থীরা মেলায় ঘুরে করে স্বস্তি বোধ করবেন।

আরও পড়ুন: প্রতি বছর কিছু নির্দিষ্ট মুখ হাজির হচ্ছেন: রাকিবুল রকি 

জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?
ইমরুল ইউসুফ: এককথায় জবাব হতে পারে, কাগুজে বইয়ের পাঠক কমছে। কারণ একুশে বইমেলায় প্রতিদিন যে পরিমাণে দর্শনার্থী আসেন; সেই পরিমাণে পিয়ানোর রিডের মতো সাজানো বইগুলো পাঠক বা ক্রেতার দর্শন পায় না। একারণেই স্টলগুলোতে হাজার হাজার বই পড়ে থাকে। প্রকাশকরা এখন একটি বইয়ের দুই থেকে তিনশ কপির বেশি ছাপেন না। কারণ হিসেবে বলেন বিক্রি কম। অথচ প্রতি বছর অমর একুশে বইমেলায় গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ-গবেষণা সবমিলিয়ে প্রকাশিত হয় প্রায় পাঁচ হাজার বই। প্রতিটি বই যদি গড়ে তিনশ কপি (দু’চারজন লেখকের বই বাদে) ছাপা হয় তাহলে মেলায় সর্বমোট পনেরো লাখ নতুন বই প্রকাশিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে পুরাতন বইয়ের পসরা। বাংলা একাডেমির পরিসংখ্যান বলছে, একুশে বইমেলায় একমাসে তেরো থেকে পনেরো লাখ দর্শনার্থী আসেন। সবাই যদি এক কপি করেও বই কেনেন, তাহলে স্টলে পুরাতন কিছু বই ছড়া এক কপি বইও থাকার কথা নয়। অথচ স্টগুলোতে মেলা শেষে অবিক্রিত থেকে যায় লাখ লাখ কপি বই। তবে বই, পত্রপত্রিকা পাঠের ক্ষেত্র বেড়েছে। লক্ষ কোটি পাঠক কিন্তু অনলাইনেও ই-বুকের মাধ্যমে বিশ্বের খ্যাতিমান লেখকদের বই পড়ছেন।

জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
ইমরুল ইউসুফ: প্রচারেই প্রসার। এক্ষেত্রে প্রকাশক ও লেখক উভয়ের সমান দায়িত্ব রয়েছে। নতুন একটি বই প্রকাশের পর যদি পত্রপত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ইন্টারনেটের সহায়তা নিয়ে প্রচার না করি, তাহলে পাঠক কীভাবে জানবেন? এজন্য অন্য পণ্যসামগ্রীর মতো বইয়েরও যথাযথ প্রচার চালাতে হবে। এতে মন্দের কিছু দেখি না।

জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
ইমরুল ইউসুফ: পরামর্শ নয়, নয় উপদেশও। বলা যেতে পারে বাস্তব এবং যুক্তিসঙ্গত কথন। সেটি হলো—প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাশাপাশি নতুন লেখকদের বই কিনুন, তাঁদের লেখা বই পড়ুন। বই হোক সবার আনন্দময় সারথি। কারণ মন জোগাতে এবং প্রাণ জাগাতে বইয়ের বিকল্প নেই। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে মোবাইল, ইন্টারনেট যেমন প্রয়োজনীয়; তেমনই বইও অতি প্রয়োজনীয় এবং বিকল্পহীন অবলম্বন।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন