বসন্ত আর ভালোবাসার রঙে রঙিন বইমেলা
এবার একই দিনে বসন্তের সূচনা আর ভালোবাসা দিবস। রাত পোহালেই বিদায় নেবে শীতকাল। শুরু হবে ঋতুরাজ বসন্ত। এর সঙ্গে যোগ হবে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। এ দুইয়ের আগমন উপলক্ষে রঙিন নাগরিক কোলাহল। একদিন আগেই নাগরিক প্রাণে দোলা দিচ্ছে এ দুই উৎসব। আর এ উৎসবের বাতাসে রঙিন অমর একুশে বইমেলা।
বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী লোকজন বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরে মেলায় এসেছেন। এর মধ্যে হলুদ ও বাসন্তি রঙের পোশাকের আধিক্য বেশি। তবে, বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে অনেকেই হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ঘুরছেন। তরুণীরা খোঁপায় বেঁধেছেন রঙিন ফুল, মাথায় ফুলের বন্ধনী। মধ্যবয়সী নারীদের মধ্যে অনেকেই ফুলের মালা পরেছেন।
আজকের (১৩ ফেব্রুয়ারি) মেলায় বেশি নজর কেড়েছেন প্রেমিক যুগল। তবে, বিশেষ আকর্ষণ ছিল ষাটোর্ধ্ব স্বামী-স্ত্রী রাশেদ-লায়লাকে জুটিকে নিয়ে। ফুলের বন্ধনী মাথায় দিয়ে ধীর পায়ে স্বামীর সঙ্গে হেঁটে চলছেন লায়লা। তাদের নিয়ে বলাবলি করছিলেন প্রেমিক যুগলেরা।
জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হলে রাশেদ বলেন, আমাদের সংসার জীবন তিন দশক পেরিয়েছে। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি চার বছর আগে। একমাত্র মেয়ে স্বামীর সঙ্গ দেশের বাইরে থাকে। দুইজনেই দেশে থাকি। বইমেলা এলে নিজের কাছে খুব ভালো লাগে। প্রতিবছর কয়েকবার আসি। বই কিনতে তো খুব বেশি টাকা লাগে না।
আরও পড়ুন>> বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল
রাশেদের কথা থামিয়ে লায়লা বলেন, এ জীবনে কত শখ ছিল। তোমার কথা চিন্তা করে কম দামি পোশাক পরেই জীবন পার করে দিচ্ছি। আর তুমি এখন এসব কথা সবাইকে বলে বেড়াচ্ছো। এমন করে তারা নিজেদের মধ্যে কথায় মজেছেন।
মেলায় বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে কয়েকজন তরুণী ঘুরছিলেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে থাকেন। তাদের সিনিয়র ফাল্গুনী দাস তন্বীর সঙ্গে এসেছেন। ফাল্গুনী বলেন, ফাল্গুন আমার প্রিয় মাস। এ মাসে আমার জন্মদিন। এ মাসে অন্য কোনো বিশেষ দিন নেই আমার। বিশেষ ‘কেউ’ না থাকায় কাল হল থেকে বের হবো না। আজই ছোট বোনদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি।
অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিন আজ। আজ মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৫টি। মেলার বিভিন্ন স্টলে পাওয়া যাচ্ছে এসব বই। সোমবার বাংলা একাডেমির জনসংযোগ দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন>> বইমেলায় লাকি জাদুর কাব্যগ্রন্থ ‘জাদুর কথন’
আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: সাহিত্যিক ও গীতিকার আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন হারিসুল হক এবং অপূর্ব শর্মা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবেদ খান।
প্রাবন্ধিকেরা বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী দীর্ঘজীবী কর্মবীর ব্যক্তিত্ব। তার প্রধান পরিচয় সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে। উভয় ক্ষেত্রে তার হাতে ছিল কলম যা অপূর্ব আলোর ঝলকানিতে জ্বলে উঠেছিল বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের পর। আবেগ ও উপলব্ধির মিশেল ঘটিয়ে তিনি এমন এক কবিতা লিখেছিলেন যা ছুঁয়ে গিয়েছিল জাতির অন্তর, আলতাফ মাহমুদের সুরে একুশের প্রভাতফেরিতে গীত হয়ে যুগিয়েছিল জাগরণের বাণীমন্ত্র। সেই থেকে তার কলম নানা সন্ধিক্ষণে সমাজের চিন্তাস্রোতকে প্রভাবিত করেছে, মানুষকে আলোড়িত করেছে, বাঙালিকে করেছে জাতিচেতনায় সংহত।
আলোচকেরা বলেন, বাঙালির ভাষা আন্দোলন নিয়ে বহু গান রচিত হলেও সাংবাদিক, কবি, কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি বাঙালির মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। পেশাগত জীবনে সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রাণের আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন লেখালেখিতে। আজীবন তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেছেন এবং অন্যায় বিরুদ্ধে কলম ধরেছে।
আরও পড়ুন>> বইমেলায় জিয়া হকের ‘ঢেউ দোলানো নদীর মায়া’
সভাপতির বক্তব্যে আবেদ খান বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জীবন ও কর্ম অনেক বিস্তৃত। তিনি ছিলেন দেশের সাংবাদিকতা জগতের মহীরুহের একজন। যে আদর্শ ও সৃজনশীলতা নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সাংবাদিকতা করেছেন তা আমাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।
‘আজ লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহনাজ মুন্নী, তসিকুল ইসলাম, দন্ত্যস রওশন ও মামুন রশীদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন শাহনাজ মুন্নী, ওবায়েদ আকাশ, সাকিরা পারভীন, হানিফ খান ও জিললুর রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নাসিমা খান বকুল ও জয়ন্ত রায়। এছাড়া ছিল ঝর্ণা আলমগীরের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’, সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানি’র পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন মো. খালেদ মাহমুদ মুন্না, অনন্যা আচার্য্য, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মো. রেজওয়ানুল হক, ফারহানা শিরিন, শরণ বড়ুয়া এবং নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সৌমিত্র মুখার্জি (তবলা), সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড), অমিত দাস (গিটার) ও মনির হোসেন (অক্টোপ্যাড)।
মঙ্গলবারের (১৪ ফেব্রুয়ারি) সময়সূচি
আগামীকাল বইমেলার ১৪তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ এবং বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জিএইচ হাবীব এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেবেন সম্পদ বড়ুয়া, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মো. আবু জাফর ও মাহবুবা রহমান।
আল-সাদী ভূঁইয়া/এমএএইচ/এএসএম