‘চৈতালি বাতাসে’ ডা. তাহমিনার জীবনমুখী উপন্যাস
আমার সাথে তাহমিনা সুলতানা তানির সাথে পরিচয় তার লেখার মাধ্যমে। তানির লেখা খুব স্বাচ্ছন্দে পড়া যায়। ওর লেখা পড়তে পড়তে ওকে চেনা। তানির জন্ম ১৯৮২ সালে। চট্টগ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। মা একজন শিক্ষক , বাবা ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। পড়াশোনা চট্টগ্রামেই।
বরাবরই মেধাবী ছাত্রী ছিল তানি। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে তানি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে ২০০৬ সালে। তানি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে দু বছর কাজ করেছিল ক্যান্সার বিভাগে। তার পর পরই ২০১০ এ অস্ট্রেলিয়াতে চলে আসে তানি তার স্বামীর সাথে।
জীবনচলার বৈচিত্র তানির লেখায় অনেক বৈচিত্র এনে দিয়েছে। করেছে অনন্য। ডা. তাহমিনা সুলতানা তানি স্কুল জীবন থেকেই লেখাজোখাতে হাত পাকিয়েছে। কিছু ছড়া, কিছু কবিতা, গল্প ছাপাও হয়েছিল ছোটদের মাসিক/ ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিনে।
পরবর্তীতে বেশি না লিখলেও সাহিত্যের প্রতি তার অনুরাগ প্রবল। তানি পড়তে ভালোবাসে। পেশা, সংসার, সামাজিক জীবনের পাশাপাশি তানি আবার লিখতে শুরু করেছে গত কয়েক বছর।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওর লেখা পড়ি। আমি ওর লেখার একজন ভক্ত। তাহমিনার একটি বিরাট নিজস্ব পাঠক শ্রেণিও তৈরি হয়েছে এরই মাঝে। বই মেলায় তাহমিনার প্রথম বই 'চৈতালি বাতাসে ' প্রকাশিত হয়েছে। নন্দিতা প্রকাশ এর প্রকাশক। এটি তাহমিনার দীর্ঘ সময় ধরে অনলাইনে লেখা গল্পের বই হিসেবে প্রকাশ।
'চৈতালি বাতাসে' তাহমিনা সাধারণ কিছু মানুষের অসাধারণ বা অতি সাধারণ জীবনের স্রোতের গল্প বলতে চেয়েছেন। উপন্যাসটি অনলাইনে প্রকাশ করার সময় তাহমিনা বলেছিলো , এটি কাল্পনিক ও দ্রুত গতির উপন্যাস। গল্পের ঘটনা প্রবাহ শুরু থেকে শেষ মোটামুটি ১০ বছরের কাহিনী। ১০ বছর অনেক দীর্ঘ সময়।
খুটিয়ে খুটিয়ে এর বর্ণনা দিতে গেলে উপন্যাসটি পেটমোটাই হবে শুধু, তাতে তার উদ্দেশ্য কতটুকু সাধন হবে তাতে তার সন্দেহ ছিলো । যেহেতু বই হিসেবে প্রকাশ করার অভিপ্রায়ে লিখা উপন্যাসটি, তাই তানি শুরুতেই চিন্তা করে নিয়েছিল এর শব্দ সংখ্যা কেমন হবে কিংবা শেষ পর্বে কি হবে। আর সে চিন্তা মাথায় রেখেই সে এক পর্ব এক পর্ব করে এগিয়েছে ।
এ গল্পে আছে পনেরো বছরের এক কিশোরী। দুচোখে তার রঙিন স্বপ্ন। সামনে ওপর ভবিষ্যৎ। সে হুট্ করে প্রেমে পড়ে যায় দ্বিগুন বয়সী এক যুবকের। এরপর শুরু হয় আবেগ আর বাস্তবতার দ্বন্দ্ব। ভুল আর শুদ্ধের নানা জটিল প্রশ্নের মাঝে পরে যায় এ কিশোরীর জীবন।
এখানে আছে মাঝবয়সের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া সু প্রতিষ্ঠিত একজন চিকিৎসক। যে বহু ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে প্রবেশ করেছে কর্ম জীবনে। অথচ সে অনুভব করে কি যেন নেই তার জীবনে। আর তাই নিয়ে যুদ্ধ তার। একদিন অসতর্কতায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় তিনি পৌঁছে যান মৃত্যুর দুয়ারে।
এরপর আছেন একজন বিধবা কর্মজীবী মহিলা। স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্পদটুকু গড়তে বদ্ধপরিকর তিনি। একদিকে বাস্তবতা, সন্তান, অন্যদিকে প্রতিযোগিতার সাথে টিকে থাকার লড়াই। এসব টানা পোড়েনের মাঝে তার সাথে সন্তানের সৃষ্টি হয় বিশাল দূরত্ব।
এরপর আছে একজন অবহেলিত নারী , যার জীবনের বিচিত্রতা অনেকগুলো প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় তাকে। যার এক পর্যায়ে জীবনকে মনে হয় অর্থহীন।
এ সব গল্পের দেয়াল জুড়ে আছে আমাদের চেনা মানুষদের জীবনের উপাখ্যান। ১৪৪ পাতার এ বইটির প্রচ্ছদ করেছেন অনুপম কর। প্রচ্ছদটি যথাযথ হয়েছে। বইটির ভূমিকাটি খুব চমৎকার ভাবে লিখেছে তাহমিনা। বইটি তার বাবাকে উৎসর্গকৃত। তিনি আজ বেঁচে থাকলে তাহমিনাকে নিয়ে আরো গর্ব করতে পারতেন।
এটি তাহমিনার দ্বিতীয় উপন্যাস। তবে প্রথম প্রকাশের জন্য তৈরি। এটি একটি রোমান্টিক উপন্যাস। তবে জটিলতার বুনন আছে এখানে। যা আপনাকে অনেক কিছু ভাববার অবকাশ করে দেবে। এখানেই তাহমিনার সার্থকতা।
আমার বাংলাদেশ ভ্রমণকালে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাহমিনা এ বইটি আমার হাতে পৌঁছে দিয়েছিল। আমি তাহমিনার কাছে কৃতজ্ঞ। এ বইটি পড়ে আমি মুগ্ধ।
আমি মনে করি এই সুপাঠ্য বইটি সবার পড়া উচি। Rokomary.com এ বইটি পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি আপনি এটি সংগ্রহ করবেন এবং পড়বেন। আমি বইটির সুপ্রচার কামনা করি।
আমরা তাহমিনার আরও বই পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
এইচআর/জিকেএস