‘লেখক বলছি’ পাঠক-লেখকের সংযোগ সেতু
শুরু হয়েছে পাঠক-লেখক-প্রকাশকের প্রাণের উৎসব। দেখতে দেখতে চলে গেল কয়েকটি দিন। শুরুর দিকে মেলার কেনাবেচা তেমন জমে না উঠলেও অন্যান্য আয়োজনে কমতি ছিল না। তার মধ্যে এ বছরই শুরু হয়েছে ‘লেখক বলছি’ নামের নতুন আয়োজন। আয়োজনটি মূলত পাঠক-লেখকের সংযোগ সেতু হয়ে কাজ করবে।
নতুন এ আয়োজনকে ঘিরে লেখকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। লেখক তার পাঠকের সঙ্গে মন খুলে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। পাঠকও তার প্রিয় লেখককে প্রশ্ন করার উৎসাহ পাচ্ছেন।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে এজন্য একটি দৃষ্টিনন্দন মঞ্চও সাজানো হয়েছে। মঞ্চ সাজাতে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রামীণ উপাদান বাঁশ, যা গ্রামবাংলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সামনে পাঠক-দর্শকদের বসার জন্য রাখা হয়েছে চেয়ার।
আলো-আঁধারির মঞ্চে নির্ধারিত কবি অথবা লেখক বসেন। তার নতুন বই নিয়ে প্রশ্ন করেন উপস্থাপক। একজন কবি বা লেখক নিজের লেখালেখি সম্পর্কে, বই সম্পর্কে কথা বলার জন্য সময় পান ২০ মিনিট।
> আরও পড়ুন- বাণিজ্য গুরুত্ব পেলে বইমেলার মান থাকে না
মেলার প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে এ আয়োজন। চতুর্থ দিন ঘুরে দেখা গেছে, এ আয়োজনের প্রতি বাড়ছে লেখক-পাঠকদের আগ্রহ। আয়োজনে অংশ নেওয়া তরুণ কবি গিরীশ গৈরিক বলেন, একুশে বইমেলার নতুন আকর্ষণ ‘লেখক বলছি’ আয়োজনটি। নবীন-প্রবীণ সবার কাছেই ভালো লেগেছে। পাঠকের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে পেরে ভালো লেগেছে।
বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা গল্পকার ও প্রাবন্ধিক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানের জন্য লেখক ও বই বাছাই করে দেয় মেলা কর্তৃপক্ষ। এজন্য আগের দিন বই জমা দিতে হয় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখান থেকে প্রতিদিন পাঁচজনকে নির্বাচন করা হয়। তারা পরদিন আলোচনায় অংশ নিতে পারেন।
গতকাল সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেক পাড়ে এ আয়োজনে আলোচনায় অংশ নেন গিরীশ গৈরিক, জাকির তালুকদার, তিথি আফরোজ, নাসিমা আনিস এবং বিধান রিবেরু। তারা প্রত্যেকেই তাদের বইয়ের ওপর ২০ মিনিট কথা বলেন। এরপর পাঠকরা তাদের প্রিয় লেখককে প্রশ্ন করেন।
এ আয়োজনে উপস্থাপনা করেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা খালিদ মারুফ, স্বকৃত নোমান ও মনি হায়দার। তাদের সাবলীল উপস্থাপনা লেখক ও পাঠককে মুগ্ধ করেছে। কাটিয়েছে লেখকের কথা বলার জড়তা। একটি ঘরোয়া পরিবেশের অবতারণা করেছে।
> আরও পড়ুন- বেশ রূপ এসেছে মেলায়
লেখক বলছি আয়োজনে অংশগ্রহণের নিয়ম হচ্ছে, ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে অমর একুশে বইমেলা ২০১৯ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের লেখকরাই ‘লেখক বলছি’ মঞ্চের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন।
আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য লেখক কিংবা তার প্রতিনিধি বা প্রকাশক বইমেলার তথ্যকেন্দ্রের (বর্ধমান হাউসের) সামনে বই জমা দেবেন। বই জমা দেওয়ার সময় আলাদা কাগজে অবশ্যই লেখকের যোগাযোগের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে।
বাংলা একাডেমির ‘মানসম্পন্ন বই বাছাই উপ-কমিটি’ জমাকৃত বই থেকে লেখক নির্বাচন করবে। বাংলাদেশি যে কোনো লেখক এ মঞ্চে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। লেখক নির্বাচনের ক্ষেত্রে লেখকের বয়সসীমা প্রাসঙ্গিক নয়। লেখকের সাহিত্যিক অবস্থান এবং তার সাহিত্যকর্মের মানদণ্ডই নির্ধারক উপাদান হিসেবে পরিগণিত হবে।
আয়োজন প্রসঙ্গে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘আয়োজনটি নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয়তা পাবে বলে বিশ্বাস করি। তাছাড়া মেলায় এসে পাঠকরা বই কেনার বিষয়ে একটি ভালো ধারণা পাবেন।’
এসইউ/আরআইপি