ভিডিও EN
  1. Home/
  2. একুশে বইমেলা

রাতের ঘোড়া থেকে তিনটি কবিতা

প্রকাশিত: ০২:১৫ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

এ-পর্যন্ত কবি ও গবেষক আহমেদ ফিরোজের কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ-গবেষণা ও সম্পাদনাসহ মোট ২৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এবার বইমেলায় প্রকাশ হচ্ছে ২৬তম বই। এটি কবির ৩য় কাব্যগ্রন্থ, নাম ‘রাতের ঘোড়া’। বইটি থেকে তিনটি কবিতা পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো-

ভাগাড়

ভাগাড়,
যেন তার নিচে চাপা পড়া মানুষেরা শিশুর রূপ ধরে কাঁদছে;

একদল লোক পালাতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল
বিজলি চমকানোর আলোয় অন্ধকার উদ্ভাসিত হয়ে উঠল
হতচকিত হয়ে দেখতে পেল, কী সামান্য পথই না পার হয়েছে তারা
মাথা নত হয়ে আসছিল পরাজয়েরর গ্লানিতে
তারা হাঁটু গেড়ে বসে গন্ধ শুঁকে শুঁকে
        ক্ষীণ কান্নার উৎসের দিকে এগলো
হঠাৎ তাদের চোখে পড়ল একদলা শাদা বস্তু
হতবুদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ
তারপর...

একজন
চলে যাবার জন্য ইতস্তত কয়েক পা এগিয়েও
বেশি দূর যেতে পারল না
কান্নার শব্দ পেছনে টেনে ধরে রাখল
একটু একটু করে আবার ফিরে এলো, ঘন ঘন শ্বাস নিল
হাঁটু গেড়ে বসল, তখনো দ্বিধান্বিত
তারপর দু’হাত বাড়িয়ে দিল
শাদা পিণ্ডের মোড়কটি নড়েচড়ে উঠল
কতগুলো খবরের কাগজের পাতার মধ্যে যুদ্ধ করছে
        ছোট্ট একটি মানবশিশু

লোকটি তাকে কোলে তুলে নিল
তার ভাবভঙ্গি অনিশ্চিত
অনেকটা যেন প্রবৃত্তিতাড়িতের মতো
যেন সে কী করছে নিজেই জানে না
অথচ না করেও পারছে না
ধীরে ধীরে সে সোজা হয়ে দাঁড়াল
আচমকা অপ্রত্যাশিত কোমল ভাবাবেগের জন্য নিজের ওপর বিরক্ত হলো
তারপর নিজের অজ্ঞাতেই গায়ের জ্যাকেট খুলে
জলে ভেজা কান্নারত শিশুটির গায় জড়িয়ে দিল

এরপর হঠাৎ গতি বাড়িয়ে দিয়ে অনেকটা দৌড়ানোর ভঙ্গিতে
সে ঐ কান্নাকে সঙ্গে নিয়ে ভাগাড় থেকে বেরিয়ে
অন্ধকারে মিলিয়ে গেল...

****

কান

অদ্ভুত পাণ্ডুর বর্ণ কান
‘কমিকে’র নৃপতির মতো স্থির, অভিব্যক্তিহীন;
কোনো এক দূরাগত সতর্কসঙ্কেত শুনে
বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে
পথ অনুসরণ করল
লতি বেয়ে
এরপর ফোঁকরে, আশপাশ, মুহূর্তে দখল করে ফেলল
পিঁপড়েরা;
লোকটি নদীর দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিল
যেন খোদাই করা কাঠের মূর্তি

পিঁপড়েরা
গোটা কানটাই গ্রাস করতে শুরু করেছে
সে শুধু দেখছিল অপলক চোখে
উদ্বেগ, আনন্দ, ঘৃণায়
যেন কোনো সম্পর্ক নেই
সবই অপ্রতিরোধ্য, অনিবার্যতা

নীল আকাশ
গোধূলিবেলা
রক্তিমাভা
ছায়া ঘনিয়ে আসছিল
কী এক রহস্য যেন
কণ্ঠ নীরব
কেবল এলোমেলো ডাকাডাকি
একঘেয়ে...

এখানে জলের শব্দ ভিন্ন রকম
যেন মৃত্যুভাবনায় আত্মমগ্ন ঈশ্বরের আর্তস্বর;
কাঁপন লাগা ঠান্ডা হাওয়া ছুটে আসছে
চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরল
এক এক করে সব গ্রাস করছে পিঁপড়েরা
অথচ লোকটির কাছে জগতের সব মানে হারিয়ে গেছে

যখন বুক ফুঁড়ে ময়লা-গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে
আলোকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে
চতুর্দিকে খাটাসের দল, পাল বেঁধে দৌড়ূচ্ছে, হাঁফাচ্ছে
তখন লোকটা শরীরটা সম্পূর্ণভাবে আটকে রাখল
        একটা বইয়ের ভাঁজে...

****

স্মৃতিভ্রষ্ট বারান্দায় আয়না অদরকারি

রাত কিংবা দিনে আলাদা করে স্বপ্নেরা হানা দেয় না এখন
ক্যালেন্ডারের পাতায় ঘড়ির মিনিট সেকেন্ডের কাটা বেজে ওঠে
ঘণ্টা বাজে সোনার তলোয়ারের মতো
তীব্র ঝড়ের মিছিলে
স্বপ্নগুলো কখনো কখনো শিশু হয়ে যায়
ডুবসাঁতারে ফেরার চোখে, তবু সে সতর্ক

আবছা গোধূলি ঢুকে পড়ে ঘরে, ঘরের ঈশানকোণে
যেখানে অশান্ত আগুনের শিস জ্বলজ্বলে
গ্রীষ্মের জ্বলন্ত উত্তাপ পুড়িয়ে দিচ্ছিল জলের প্রবাহ ও সম্ভাবনা
আমি, তুমি ও সে চোখ ধাঁধানো আন্দোলনের ফাঁদে পড়ে যাই
ড্রেসিংরুমে আয়নায় যন্ত্রণার বিপরীতে
খালি পা পালিয়ে চুপি চুপি আরেকটি তীব্র রোষে কেঁপে ওঠে

অমানিশাকাল, ঠান্ডা আলোর আভায় বিবর্ণ শিরায় রক্তদাগ
নগ্ন রাস্তার মাঝে রাষ্ট্র
পিঠ ফিরিয়ে একদিকে শোয়া
এতটা বছর মেকি হাসি সহ্য করেছিল সে, অথচ জানতো না যে,
কখনো মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, যাবেও না কোনোদিন
তার কাছে হাসি, চঞ্চলতা, উন্মত্ততা, ভালোবাসার মূল্য কি?

কুঁচকে যাওয়া মুখে পর্দাগুলো ঝকঝকে
একটু যেন কুৎসিত, বীভৎসতায় ভরা
এক ভোরে মুক্ত করে দেওয়া গোপনতা কেড়ে নিয়েছিল ওরা
মিথ্যে তার আত্মসমর্পণ
তারা রোদ্দুরের মুখোশ পরে দাঁড়িয়ে আছে
অথচ সময় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে : স্মৃতিভ্রষ্ট বারান্দায় আয়না অদরকারি...

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন