নিরাশ হয়েছি কিন্তু ভেঙে পড়িনি: অঞ্জন হাসান পবন
ষষ্ঠ বর্ষে পা রেখেছে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কিংবদন্তী পাবলিকেশন। সৃজনশীলতাকে সহজে ছড়িয়ে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন কথাশিল্পী অঞ্জন হাসান পবন। গত পাঁচ বছরে কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস এবং গল্পগ্রন্থের পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণামূলক বই প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ পর্যন্ত তাদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। প্রতিষ্ঠানটির এগিয়ে চলা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন অঞ্জন হাসান পবন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাশিল্পী ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: বইমেলা অতি সন্নিকটে। আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যস্ততা কেমন?
অঞ্জন হাসান পবন: মারাত্মক রকমের ব্যস্ততা এবং প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত কাটাচ্ছি। বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিতব্য বইগুলোর কোনোটা এখন চূড়ান্ত মেকাপ হচ্ছে, কোনোটা প্রেসে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি সবগুলো বইয়ের প্রোডাকশন বইমেলার আগেই শেষ করার। তাই খুব প্রেসারে আছি বলা যেতে পারে।
জাগো নিউজ: জানতে পারলাম, কিংবদন্তী পাবলিকেশন অর্ধযুগে পা রাখছে। আপনার অনুভূতি কেমন?
অঞ্জন হাসান পবন: ঠিকই জেনেছেন। ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি একদম শূন্য হাতে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। এরপর কীভাবেই যেন পাঁচটা বছর পার করে দিলাম, ভাবতেই অবাক হচ্ছি! এই পাঁচ বছরে আমার অনেক মিশ্র অনুভূতি হয়েছে। কখনো কাজের চাপে ক্লান্ত হয়েছি, নিরাশ হয়েছি কিন্তু ভেঙে পড়িনি। এখনো অনেক কাজ বাকি। আমার মনে হয়, আমরা সবেমাত্র শুরু করলাম।
জাগো নিউজ: পাণ্ডুলিপি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাদের পদ্ধতি কেমন?
অঞ্জন হাসান পবন: আমরা সব সময় চেষ্টা করছি মানসম্মত পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করতে। যার ফলে আমাদের বইগুলো থাকে নির্ধারিত। আমরা লেখকদের থেকে টাকা নিয়ে বই প্রকাশ করি না। কিংবদন্তী পাবলিকেশন খুব গুনেবেছে কাজ করে। যেহেতু আমাদের বইমেলায় বই প্রকাশের সংখ্যা খুবই কম, সেহেতু আমরা পাণ্ডুলিপির মানোন্নয়নের সময় পাই। সর্বোচ্চ চেষ্টা করি পাঠকদের নির্ভুল বই উপহার দিতে। তা-ও ক্ষেত্রবিশেষ অসাবধানতা বশত দু-একটা ভুল থাকা অসম্ভব নয়।
আরও পড়ুন
জাগো নিউজ: অভিযোগ আছে, আপনার প্রকাশনীর বইয়ের মূল্য বেশি; এ বিষয়ে কী বলবেন?
অঞ্জন হাসান পবন: অভিযোগটা আমিও শুনি হুটহাট। কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতা আছে। জিনিস যেটা ভালো, দাম তার একটু বেশি হবে—সেটাই স্বাভাবিক। আমরা বর্তমান বাজারে সব বই একই মান বজায় রেখে দেশের সবচেয়ে উন্নত কোয়ালিটির প্রোডাকশন নিশ্চিত করছি। এতটা উন্নত কোয়ালিটি নিশ্চিত করার ফলে বই প্রতি প্রোডাকশন কস্ট অনেক বেশি হয়। যার ফলে কিছু পাঠকের কাছে আমাদের বইয়ের দাম বেশি মনে হওয়াটা অযৌক্তিক নয়। বর্তমান বাজারে বই তৈরির সব উপাদানের দাম বাড়তি। তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি—বইয়ের দাম কীভাবে আরও কম রাখা যায় সে বিষয়ে।
জাগো নিউজ: মানোত্তীর্ণ বই বলতে আপনি কী বোঝেন? কেমন বই প্রকাশ করা উচিত?
অঞ্জন হাসান পবন: মানোত্তীর্ণ বই বলতে এমন বইকে বোঝানো হয়, যা গুণগত মানে উৎকৃষ্ট। একটা বইয়ে বেশকিছু গুণগত মান ঠিকঠাক থাকলে আমরা তাকে মানোত্তীর্ণ বইয়ের তালিকায় রাখতে পারি। যেমন ধরুন, কন্টেন্ট ভালো কিন্তু প্রোডাকশন খুব দুর্বল, আবার প্রোডাকশন খুবই ভালো কিন্তু কন্টেন্ট দুর্বল—এ ধরনের বই আমার চোখে মানোত্তীর্ণ বই নয়। একটা বই মানোত্তীর্ণ হতে হলে সবদিক থেকেই উত্তীর্ণ হতে হবে বলে আমি মনে করি।
জাগো নিউজ: প্রকাশনা জগতের সমস্যা এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
অঞ্জন হাসান পবন: সমস্যা সবখানেই আছে আবার সমাধানও আছে। বিগত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমরা এখনো প্রকাশনা জগতের সমস্যা সমাধানে একে অপরের প্রতি আন্তরিক নই। সবচেয়ে বড় সমস্যা—একটি অসৎ শ্রেণি অনেকদিন ধরে প্রকাশনা সেক্টরে অসৎ উপায় অবলম্বন করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একটা বৈষম্য সৃষ্টি করছে। ফলে আরেকজন সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আগে আমাদের ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। একে অপরের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিকল্প নেই।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? পাঠকের জন্য কী ভাবছেন?
অঞ্জন হাসান পবন: এটি আমার জন্য খুব কঠিন প্রশ্ন। আমার মতে, প্রত্যেকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের একটা রুটম্যাপ থাকা উচিত। এতে কর্মপরিধি সম্পর্কে অবগত থাকা যায়। আমরা আমাদের রুটম্যাপ অনুযায়ী চেষ্টা করছি পাঠকদের আগামীতে মানসম্মত বই উপহার দেওয়ার এবং নিজেদের আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।
এসইউ/এমএস