ভিডিও EN
  1. Home/
  2. একুশে বইমেলা

বই পর্যালোচনা

কম্বুরেখপদাবলি: দেহ আর হৃদয়ের রেখা

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ১২ জুন ২০২৪

ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ

কম্বুরেখা কী? ‘কম্বু’ মানে শঙ্খ। শঙ্খ যেমন প্যাচানো একটা আকৃতি নিয়ে দারুণ ধ্বনির দ্যোতনা সৃষ্টি করে; তেমনই কোনো ধ্বনিব্যঞ্জনা ধরার প্রয়াস কি আছে তবে এই ‘কম্বুরেখপদাবলি’তে? নাকি, ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের মতো বায়ুর ঘূর্ণাবর্ত আর শোঁ শোঁ আওয়াজ নিয়ে নতুন কোনো সৃষ্টির ইঙ্গিত বয়ে এনেছে এই বই? নাকি স্রোত? সমুদ্র বা নদীর জলের সেই আবর্তন, যে জল জীবনানন্দের ভাষায় “ঘুরে ঘুরে একা একা কথা কয়”। নাকি এই কম্বুরেখা ডিএনএ’র সেই নিউক্লিওটাইড যেখানে সুরক্ষিত আমাদের জীবনের, স্বাতন্ত্র্যের, অন্তহীন সারাৎসার যা জগতের এই জীবনযজ্ঞে ফিরে ফিরে আসে নতুন নতুন প্রাণে নতুন নতুন রূপে?

অহ নওরোজের কবিতার নতুন বই ‘কম্বুরেখপদাবলি’ হাতে নিয়ে মাথায় এলো এসব জিজ্ঞাসা। এসব জিজ্ঞাসার জবাব কি আছে তার এই বইয়ে? সে পুরোপুরি না থাকলেও আছে তার অল্পসল্প উদ্ভাস ও উদ্ধার। আর যা আছে তা হলো, হ্যাঁ, এই বই কবিতায় ‘দেহ আর হৃদয়ের রেখা প্রকাশ্যে দেখিয়ে দেয়’।

অহ নওরোজের কবিতার বই বেরিয়েছে আগেও অন্তত দুটি। ‘রোমন্থনের সনদ’ এবং ‘অতিলৌকিক কবিতাসমূহ’। ‘কম্বুরেখপদাবলি’ তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। তৃতীয় কাব্যগ্রন্থেও কিন্তু একেবারে নতুন কবিই মনে হয়। এটা যেমন ভালো, তেমনই আবার মন্দও।

‘কম্বুরেখপদাবলি’ বইটি প্রকাশিত হলো আমাদের প্রিয় অহ’র জার্মানিতে চলে যাওয়ার তিন বছর পর। এই বইয়ের ‘শেকড়ের দিকে’ কবিতার প্রথম কয়েকটি লাইন এমন:
“নওয়াপাড়া শহরে ফিরে এলে সমস্ত শরীর
সন্ধ্যার কিনার ঘেঁষে বেঁচে থাকা আলোর মতন
শাঁসালো উত্তাপ আর পুরনো প্রলাপে নড়ে ওঠে—
নওয়াপাড়া শহরে ফেরা হলে ক্রমশই শুধু
পিপাসার দিকে ফিরি; যেন ডুবো নদীর আড়ালে
লুকিয়ে রয়েছে এক ঝকঝকে তারা ভরা রাত,”

আরও পড়ুন

অহ নওরোজের বইটির ফ্ল্যাপে কবি জাহিদ সোহাগ লিখেছেন, ‘‘অহ নিজেকে ক্রমাগত খুঁড়ে চলেছেন, যদিও সেই লক্ষ্যমুখ আমাদের অজ্ঞাত, কিন্তু টের পাই কোথাও নিভৃতে গড়ে উঠেছে মাতৃভূমি ও পরবাসের মেটাফরজনিত দ্বৈরথ। তিনি জানেন কবির ফেরা বলে কিছু নেই, বৃত্তাকার পৃথিবীর পৃষ্ঠাই তার দিশা ও বিদিশার পান্থশালা।”

অহ নওরোজকে খুব কাছ থেকে জানি। প্রবাসে জীবন গড়ার যে দুঃসহ সংগ্রাম সেটি তাকে খেয়ে ফেলেনি। সে লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছে। জীবনের কান্তি ও ক্লেদ মাখিয়ে রাখছে তার লেখায়। নিজেকে প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে সে বেছে নিয়েছে লেখাকে। এটিই তাকে নিয়ে আমার, আমাদের, আশা ও আনন্দ।

গত পরশু অহ তার বান্ধবীকে নিয়ে গেল জার্মানির ব্রান্ডেনবুর্গের রেসকোর্স ময়দানে। ওখানে ঘোড়দৌড়ে ওকে বাজি ধরতে বললাম। ও আমার নামে বাজি রাখল মাত্র পাঁচ ইউরো। হারল। বললাম, ‘মাত্র পাঁচ ইউরো, মাত্র পাঁচ! আমার দাম এত কম! তুমি আমাকে অবমূল্যায়ন করলেও দৌড়ের ঘোড়া তো তা করবে না। এই কারণেই ঘোড়া তোমাকে হারিয়ে দিলো, এই কারণেই তুমি হারলে মনা।’

অহ নওরোজ ‘কম্বুরেখপদাবলি’ উৎসর্গ করেছে রাসেল পারভেজ এবং আমাকে। গোপনে বলে রাখি। উৎসর্গ একটা সামাজিক ব্যাপার ছাড়া আমার কাছে আর কিছু নয়। দুনিয়ার সেরা সব বই কারো না কারো নামে উৎসর্গ করা, ওই বইগুলো আমরা পড়ি, ওই বইয়ের লেখককে আমরা জানি, কিন্তু কাকে কোনটি উৎসর্গ করা তা খুব একটা খেয়াল করি না, মনে রাখি না। অহ নওরোজের কাছ থেকে তেমন সেরা বেশ কয়েকটি বই পাবো ভবিষ্যতে, সেই আশায় তার এই ‘কম্বুরেখপদাবলি’ নিয়ে এই লেখা।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন