স্টল বিন্যাসে বৈষম্য দূর হওয়া দরকার: প্রিন্স আশরাফ
প্রিন্স আশরাফ পেশায় চিকিৎসক হয়েও লেখালেখিতে বেশি মনোযোগী। তার জন্ম ৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার বড়দলে। বাবা ডা. সফেদ আলী সানা, মা সাহারা খাতুন। তিনি রহস্য, থ্রিলার, হরর, অতিপ্রাকৃত, সায়েন্স ফিকশনের পাশাপাশি গল্প-উপন্যাসেও দক্ষতা অর্জন করেছেন। শিশুসাহিত্যেও পদচারণা লক্ষ্যণীয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। আলো ও ছায়া নামে সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। শিশু-কিশোর ম্যাগাজিন ‘রোদ্দুর’ সম্পাদনা করছেন। দৈনিক যায়যায়দিনের সিনিয়র সাব-এডিটরের দায়িত্বে আছেন। অনুবাদ সাহিত্যেও তার স্বাচ্ছন্দ্য পদচারণা রয়েছে।
‘ধুয়াশা গন্তব্যে’, ‘রূ’, ‘মৃত্যুছায়া’, ‘চক্র’, ‘মূর্তিরহস্য’, ‘ছিন্নমস্থা’, ‘পিশাচসাধক’, ‘যুযুধা’, ‘দানব’, ‘নিশাচর’, ‘হিম’, ‘দস্যিপনা’, ‘অপচ্ছায়া’, ‘রক্তচক্র’, ‘একাত্তরের রঙিন ঘুড়ি’, ‘সুন্দরবনে শিহরণ’, ‘মগজধোলাই’, ‘অপরাধযাপন’, ‘আগুনের ফুল’, ‘আপনালয়’, ‘অশুভ কথন’, ‘মেঘমুখী ফুল’ তার উল্লেখযোগ্য বই। ইতোপূর্বে থ্রিলার উপন্যাস ‘তামাম শুদ’, ‘দ্বিতীয় রমণী’, ‘পার্শ্বচরিত্র’ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।
প্রিন্স আশরাফ বৈশাখী টিভি চ্যানেলে নাট্যকার প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছেন। বেহুলা বাংলা থেকে প্রকাশিত ‘গুরুদাসী মা’ বইটি বিশাল বাংলা সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ পেয়েছে। ২০১৮ সালে দেশজ পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতায় উপন্যাস ‘কাঁটাতারে পুষ্পলতা’ ও গল্পগ্রন্থ ‘অন্ধের শহরে একজন আয়নার ফেরিওয়ালা’র জন্য সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া কিশোর কলম সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯, প্রিয় বাংলা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০১৯, অক্ষরবৃত্ত পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০১৯, বাসাসপ সাহিত্য পুরস্কার ২০২০, এসবিএসপি সোনার বাংলা সাহিত্য পুরস্কার ২০২০ লাভ করেন। সুলেখিকা স্ত্রী তাহমিনা সানি, কন্যা সারাহ ও পুত্র রিহানকে নিয়ে বাস করেন আপন ভুবনে।
সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?
প্রিন্স আশরাফ: অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ এখনো যেহেতু কয়েক মাস বাকি আছে; সেহেতু সঠিক তথ্য দিতে পারছি না। কারণ বইমেলার ঠিক আগে আগেই প্রকাশকদের তাগাদা বেড়ে যায়। তবে এখন পর্যন্ত মোটামুটি চারটি বইয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা হয়ে গেছে। অবসর প্রকাশনী থেকে রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস ‘আমি হয়তো মানুষ নই’, বাবুই থেকে ‘কিশোর উপন্যাস সমগ্র-১’, নয়েস পাবলিকেশন থেকে ছড়ার বইয়ের সংকলন ‘ছন্দপুর’ এবং আরেকটি প্রকাশনী থেকে মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস ‘প্রাক্তন’ আসার সম্ভাবনা আছে।
আরও পড়ুন: লিখতে চান অনেকেই কিন্তু পড়তে চান কম: শফিক হাসান
জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?
প্রিন্স আশরাফ: বইমেলার স্টল বিন্যাসটা এমন হওয়া উচিত—যাতে মোটামুটি সহজেই কাঙ্ক্ষিত প্রকাশনী খুঁজে বের করা যায়। তাছাড়া মাৎস্যন্যায়ের মতো বড় প্রকাশনীগুলোকে হাইলাইটে রেখে ছোট প্রকাশনীগুলো আতশ কাচের তলায় নিয়ে খুঁজে বের করার বৈষম্যও দূর হওয়া দরকার। বইমেলার বইয়ের পাতায় পাতায় লেখকরা হাজারও রকম বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন। অথচ সেই বইমেলার স্টল বিন্যাসেই সবচেয়ে বড় বৈষম্য ধরা পড়ে। যা-ই হোক—পরিচ্ছন্ন, গোছানো, ধুলা-বালিহীন বইমেলা দেখতে চাই।
জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসংগতি চোখে পড়েছে?
প্রিন্স আশরাফ: প্রথম কথা—আমি বইমেলায় খুব কমই যাই। প্রফেশনাল ব্যস্ততার পাশাপাশি ঢাকা শহরের জ্যামের দূরত্বও অনেকখানি ভয় ঢুকিয়ে দেয়। তবে এবার যেহেতু মেট্রোরেলের সুবিধা পাওয়া যাবে, এবার বেশি বেশি বইমেলায় যেতে চাই। অসংগতি তো আগেই বললাম—স্টল বিন্যাস, প্রবেশপথের ধকল, দু’একটা প্রবেশপথ বন্ধ রাখা, খাবারের দোকানের আধিক্য—এসবই যেন একটু অসংগতির কাতারে পড়ে। তাছাড়া গতানুগতিক যেভাবে বইমেলা হয়; সেরকম সংগতিপূর্ণই দেখে আসছি সব সময়।
জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?
প্রিন্স আশরাফ: প্রকাশকরাই ভালো বলতে পারবেন। বাংলা একাডেমির হিসেবে তো দেখি বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, কাগজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বইয়ের দাম বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। সে কারণে হয়তো সার্বিক ভাবে কোটির অঙ্কে বইয়ের বিক্রি বেড়েছে। তবে সেটা সংখ্যায় কমও হতে পারে। এখন প্রকাশনীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে, বাড়ছে। সেই হিসেবে তো বইয়ের বিক্রি বেশি হওয়ারই কথা। তবে মনে হয় ব্যাপারটা আপেক্ষিক। হয়তো কিছু প্রকাশনীর নির্দিষ্ট কিছু লেখকের কিছু বইয়ের বিক্রি বেড়েছে, আর অধিকাংশ লেখকের বইয়ের বিক্রি কমেছে বলেই আমার মনে হয়।
আরও পড়ুন: সারাবছরই বইয়ের প্রচার করা উচিত: ফখরুল হাসান
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
প্রিন্স আশরাফ: ভালো-মন্দ দুই দৃষ্টিতেই দেখি। প্রথম কথা, বইয়ের প্রচার হওয়াটা দরকার, না হলে মানুষ সেই বইয়ের কথা জানতে পারবে না। আবার এত বেশি প্রচার হওয়া দরকার নেই। যাতে প্রচারের প্রেসার পড়ে পাঠক বই কিনে মনোক্ষুণ্ন হন। একসময় প্রবাদ ছিল, ‘প্রচারেই প্রসার’। কিন্তু সেটাই যেন এখন হয়ে গেছে ‘প্রচারেই প্রেসার’। অর্থাৎ প্রচারের প্রেসারে পড়ে আমরা অনেক সময় ভুল বই কিনে নিজেরা যেমন ঠকি; তেমন লেখককেও ঠকাই। মাঝে লাভবান হন প্রকাশকরা। একটা সিনেমার প্রচার প্রমোশনের জন্য নায়ক-নায়িকারা যখন আটঘাট বেঁধে নামতে পারেন; তখন লেখকরাও নয় কেন। তবে সেটা যেন অবশ্যই শালীনতার মধ্যে রেখে।
জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
প্রিন্স আশরাফ: বইমেলার পাঠকদের জন্য পরামর্শ হলো—কষ্ট করে বইমেলায় গেলে বই কেনার টাকা দিয়ে উদরপূর্তি না করে একটি করে হলেও আপনার পছন্দের বই কিনুন। তাতে প্রকাশনা শিল্প মাথা তুলে দাঁড়াবে।
আর শুধু পাঠকের জন্য পরামর্শ হলো, যে বইয়ের মধ্যে আনন্দ পাওয়া যায়, নতুন জগত, নতুন পৃথিবী উন্মোচিত হয়; সেরকম ভালো বই পড়ুন। অন্যের পছন্দে নয়, আপনার নিজের পছন্দে নিজের মন যেরকম চায়; সেরকম বই পড়ুন। তাই সেই বই অন্য পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও।
এসইউ/এএসএম