প্রতি বছর কিছু নির্দিষ্ট মুখ হাজির হচ্ছেন: রাকিবুল রকি
বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের নানা শাখায় যেসব তরুণ বিচরণ করছেন রাকিবুল রকি তাদের অন্যতম। তিনি ১৯৮৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার কাশীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আ. আউয়াল এবং রানু বেগমের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। পড়াশোনা করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে। বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। তিনি বাবুই শিশুসাহিত্য পাণ্ডুলিপি পুরস্কার (২০১৮), প্রিয় বাংলা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার (২০২১), নক্ষত্রের খোঁজে পাণ্ডুলিপি পুরস্কার (২০২২) লাভ করেছেন।
তার প্রকাশিত বইগুলো হলো—কাব্যগ্রন্থ: তুমি হাসলে সূর্যটা কেমন মন খারাপ করে নিভে যায় (২০১৫), ধান-কাউনের গল্প (২০১৮), মায়াবতীর জলে (২০২০)। প্রবন্ধগ্রন্থ: কবিতার জানালা (২০২১), হুমায়ূন আহমেদ ও অন্যান্য গদ্য (২০২৩)। গল্পগ্রন্থ: নিষিদ্ধ গল্প (২০১৭)। কিশোরগ্রন্থ: আবীর ও হায়েনার গল্প (২০১৬), জমিদার বাড়ির গুপ্তধন (২০১৮), চাঁদবনের জাদুর বাড়ি (২০২৩), গুপ্তধন আবারো গুপ্তধন (২০২৩), বিপদ ভয়ংকর (২০২৩), চাঁদের বুকে এলিয়েন (২০২৩)। অনুবাদগ্রন্থ: দ্য অ্যালকেমিস্ট (২০১৮), কাজুও ইশিগুরোর গল্প (২০১৮), এলিয়েন এলো স্কুলে (২০১৯), ম্যানস সার্চ ফর মিনিং (২০২০), দ্য পাওয়ার অব ইয়োর সাবকনশাস মাইন্ড (২০২১), ভারতীয় লোক-কাহিনী (২০২১), লিডারশিপ ১০১ (২০২২), দ্য কার্স অব দ্য মমি অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক ক্যাট (২০২২), সেলস সাকসেস (২০২২), গেট টু দ্য টপ (২০২২), হু মুভড মাই চিজ? (২০২৩)। যৌথ সম্পাদিত গ্রন্থ: মজার বই (২০১৫), পৌরাণিক শব্দকোষ (২০১৮)।
সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?
রাকিবুল রকি: ২০২৩ সালের বইমেলা শেষ হওয়ার পর ইতোমধ্যে আমার একটি অনূদিত বই প্রকাশিত হয়েছে। ড. স্পেন্সার জনসনের ‘হু মুভড মাই চিজ’। এটি ঈদুল আজহার আগে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া আরেকটি অনুবাদ এবং দুটো কিশোর উপন্যাস বের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরও কিছু পাণ্ডুলিপি আমার কাছে এবং প্রকাশকের কাছে আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় গিয়ে ঠেকবে।
আরও পড়ুন: লিখতে চান অনেকেই কিন্তু পড়তে চান কম: শফিক হাসান
জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?
রাকিবুল রকি: একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। স্বপ্নের মেলা। লেখক-পাঠক-প্রকাশকের বৃহত্তর মিলনমেলা। আগামী মেলা চাই আরও সুন্দর, গোছানো, সুশৃঙ্খল। মেলায় সহজে যেন প্রবেশ করা যায় এবং বের হওয়া যায়। মেলায় যেসব খাবারের দোকান বসে, একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন, ওইসব খাবারের দোকানের চেয়ে বাইরের ছোট ছোট টং জাতীয় চায়ের দোকানের দিকে অনেকের আগ্রহ থাকে। তাই বড়, অভিজাত খাবারের দোকানের পাশাপাশি এসব ছোট ছোট দোকানের ঠাঁইও যেন হয় মেলার মাঠে।
মেলায় ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে যেন তরুণ মেধাবী, পাঠকপ্রিয় লেখকদেরও কথা বলার সুযোগ থাকে। দেখবেন, প্রতি বছরই ঘুরে ঘুরে কিছু নির্দিষ্ট মুখই হাজির হচ্ছেন। এই বৃত্ত ভাঙতে হবে। যদিও কাজটি কঠিন, তারপরও এই পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনেকে মেলায় টিকিটের ব্যবস্থা রাখতে বলেন, কাজটি ভুলেও যেন করা না হয়। আমরা বলি, দেশে পাঠক নেই, বই বিক্রি হয় না, এখন যদি বইমেলায় টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে কফিনের শেষ পেরেক মারা হবে। হোক না একটা লোক অকারণেই মেলায় এলো শুধু ঘোরার উদ্দেশ্যে। ক্ষতি কী? কেউ যদি বইমেলায় আসে, তাকে অবশ্যই স্বাগতম জানাতে হবে। এত জায়গা রেখে এক তরুণ যদি তরুণীর হাত ধরে মেলায় আসে, তাহলে আমাদের খুশি হবারই কথা। হয়তো কেউ একজন এমনিই মেলায় এলো। সে ঘুরতে ঘুরতে একটি বই পছন্দ করলো, কিনে বাড়ি ফিরলো। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। আপনার প্রয়োজনীয় বই আপনি বাসায় বসেই কিনতে পারেন, অনেক অনলাইন বুকশপ আছে। এজন্য মেলায় আসার প্রয়োজন নেই। মেলা হবে অকারণে ঘোরার জায়গা। লেখক দেখার জন্য এখানে অনেকে আসবেন। আসবেন নতুন বইয়ের মলাট দেখার জন্য। বই কেনার জন্য। এখানে যেন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা না হয়।
জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?
রাকিবুল রকি: এত বড় একটা আয়োজন সবার মনের মতো হবে না—এটাই স্বাভাবিক। তাই অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলতে চাই না। তবে মেলায় যারা নবীন, তরুণ লেখক আছেন, বয়সের দিক দিয়ে শুধু নয়, প্রকাশের দিক দিয়েও, তাদের দিকে যেন আলাদাভাবে ফোকাস করা হয়।
আরও পড়ুন: বইয়ের প্রচারণাকে আমি ইতিবাচক মনে করি: মোহাম্মদ নূরুল হক
জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?
রাকিবুল রকি: এটা প্রকাশকগণ ভালো বলতে পারবেন। তারপরেও বলতে পারি, আমাদের দেশে জনগণের তুলনায় বই বিক্রির সংখ্যা কি আশাব্যঞ্জক? একদমই না। বর্তমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক যাদের বলি, তাদের বই এক মেলায় কি মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশও বিক্রি হয়? আমার তো মনে হয়, হয় না। তাই বই বিক্রি বাড়ানোর জন্য আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রচার-প্রচারণা করতে হবে। ভালো বইয়ের রিভিউ করিয়ে পাঠকের কাছাকাছি সেই বইকে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে বিক্রির পরিমাণ বাড়বে বলে মনে হয়।
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
রাকিবুল রকি: বই প্রকাশের পাশাপাশি বইয়ের প্রচারণাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। সঠিক প্রচারণার অভাবে একটি ভালো বইও একজন পাঠকের কাছে পৌঁছাতে দেরি হতে পারে। এর ফলে অপমৃত্যু ঘটতে পারে একজন সম্ভাবনাময় লেখকের। তাই একটি বইয়ের যত ধরনের প্রচরণা সম্ভব, সেটা করাতে হবে। মনে রাখতে হবে, সত্যজিৎ রায়ের মতো লেখককে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আনন্দ পাবলিশার্স মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছিল।
জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
রাকিবুল রকি: একজন পাঠক মানেই একজন চিন্তাশীল নাগরিক। একটি জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য চিন্তাশীল নাগরিকের বিকল্প নেই। টলস্টয়ের একটি কথা আমাদের অনেকেরই মনে আছে—তিনি মানুষের জন্য তিনটি প্রয়োজনীয় জিনিসের কথা বলেছেন। সেই তিনটি প্রয়োজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো—বই, বই এবং বই। আর যিনি বই পড়েন তিনিই পাঠক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা আমাদের বইপড়ার সময় কিছুটা হলেও কেড়ে নিচ্ছে। সেই সময়টুকু উদ্ধার করে আমাদের বইয়ের পেছনেই ব্যয় করতে হবে। শুধু নিজে পড়লেই হবে না, পাশাপাশি নতুন নতুন রুচিশীল পাঠকও তৈরি করতে হবে, তাহলে আমরা আমাদের স্বপ্নের পৃথিবী খুঁজে পাবো।
এসইউ/এএসএম