অনুবাদ-সেল নামে আলাদা কর্নার হোক: আবু আফজাল সালেহ
আবু আফজাল সালেহ মূলত কবি ও প্রাবন্ধিক। তিনি ১৯৮১ সালের ১৫ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জেলার মদনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বাংলা দৈনিক, পোর্টাল ও ম্যাগে নিয়মিত কবিতা, প্রবন্ধ, সাহিত্য-আলোচনা, ফিচার ও কলাম লিখে থাকেন। তার প্রকাশিত বই: বারবার ফিরে আসি (কবিতা, ২০১৮); ছড়ায় ছড়ায় উৎসব (ছড়া, ২০১৮); বলেই ফেলি ভালোবাসি (কবিতা, ২০২২)। সাহিত্যে অবদান রাখায় ‘দোনাগাজি পদক-২০২১’ এবং ‘প্রিয়বাংলা লেখক সম্মাননা-২০২৩’ পেয়েছেন।
সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?
আবু আফজাল সালেহ: ২০২৪ সালের বইমেলায় আমার দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হবে—পর্যটন বিষয়ক কাব্যগ্রন্থ ‘জল পাথরে বন পাহাড়ে’ এবং প্রবন্ধের বই ‘কাব্যশৈলীর কতিপয় দিগন্ত’। এছাড়া কবি আমিনুল ইসলামের ওপর একটি প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হতে পারে।
আরও পড়ুন: বইয়ের প্রচারণাকে আমি ইতিবাচক মনে করি: মোহাম্মদ নূরুল হক
জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?
আবু আফজাল সালেহ: বইমেলায় বই বিক্রি বাড়ুক। অনুবাদ-সেল নামে আলাদা কর্নার হোক। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর আরও গোছালো ও সমৃদ্ধ হবে। সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকবে সেটাও আশা করি। প্রত্যেক দর্শক কমপক্ষে একটি বই কিনবে, সে প্রত্যাশা রইল। এজন্য ৫০ টাকা মূল্যের একটি প্রবেশ-ফি রাখা যায়। এ প্রবেশ-ফি জমা দিয়ে দিয়ে দর্শনার্থী ৫০ টাকা মূল্যের বই কিনতে পারবেন। এতে মেলার শৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে এবং বই-বিক্রি অনেক বাড়বে। মঞ্চে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া, গম্ভীরা, ভাটিয়ালি ইত্যাদি গান বাজুক। ইলেকট্রনিক প্রচারমাধ্যম ও প্রচারমঞ্চ পরিচিত ও রাজধানী কেন্দ্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ও মঞ্চে মফস্বলের লেখকদের তুলে আনতে হবে। তাদের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য বেশি সময় বরাদ্দ এবং অগ্রাধিকার দিতে হবে। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লেখক ও পাঠক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পাবে। তখন বড় একটি পাঠকগোষ্ঠী সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। এতে দেশ ও দেশের কৃষ্টি-কালচার ধারণ ও উদার মানসিকতার সুনাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?
আবু আফজাল সালেহ: ছোট-বড় অসঙ্গতি অনেক দেখেছি। কয়েকটা উদাহরণ হিসাবে বলাই যায়—খাবারের দোকান ও সেখানে তুলনামূলক ভিড় বেশি। আবার খাবারের দামও অনেক বেশি। লিটলম্যাগ চত্বরকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাঠকও অনেক কম। অথচ লিটলম্যাগ সাহিত্য-হৃদয়ের নাম। লিটলম্যাগ চত্বর একাডেমি ক্যাম্পাসে বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নেওয়া যেত। স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুব ভালো ছিল না। এছাড়া বেশিরভাগ দর্শনার্থী ঘুরতে বা সেলফি তুলতে যান।
জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?
আবু আফজাল সালেহ: এটা বলা মুশকিল। অনেক সময় পরিসংখ্যান কাজে দেয় না। তবে প্রতিবারই ভালো ও মানসম্মত বইয়ের অভাব থাকে। লেখকের বড় অংশ পর্যাপ্ত বই পড়েন না। অথচ সুনাগরিক ও ভালো লেখক হওয়ার জন্য বইপড়ার কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অনুবাদের পারিশ্রমিক অনেক কম: শেহজাদ আমান
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
আবু আফজাল সালেহ: প্রচারেই প্রসার। আগে প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও এখন বেশিরভাগ মানুষই প্রচারের পক্ষে। আমিও মনে করি বইয়ের প্রচার ভালো। আবার নিজের বইয়ের প্রচারে কার্পণ্য বা লজ্জা না-থাকাই ভালো।
জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
আবু আফজাল সালেহ: বইকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে জাতিকেও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। মেলাকেন্দ্রিক শ্রমিক, প্রকাশনাসহ অনেক কিছুকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। বই পড়লে জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অলস ও খারাপ (ট্রলিং, গুজব ইত্যাদি) দিকগুলো থেকে অনেকটাই দূরে রাখা যাবে। তাই বলবো, ভালো বই কিনুন, বেশি বেশি পড়ুন।
এসইউ/জেআইএম