কাগজের দাম বাড়ার প্রভাব বইমেলায়, কেনাকাটায় হিসাবি পাঠক
বাজারে কাগজের দাম বেড়েছে। বইয়ের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বাঙালির প্রাণের মেলায় প্রতিদিন আসছে নতুন বই। পাঠকদের আগ্রহের কেন্দ্রে প্রবীণ ও সুবিদিত লেখকের বই। তবে গত বছর যে বইয়ের দাম ৩০০ টাকা ছিল, তা এবার বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা। আগের বছর ছাপা বই কম বিক্রি হচ্ছে দামে। অথচ একই বই, যা এবার ছাপা হয়েছে সেটার দাম বেশি। ফলে ক্রেতারাও বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ছেন।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার চতুর্থ দিনে বাংলা একাডেমী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মেলাজুড়ে ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের স্টল ও প্যাভিলিয়নে ভিড় বেশি। বিপরীত দৃশ্য অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকাশনীর স্টলে।
বাঙালি প্রকাশনীর আরিফ নজরুল গল্পে গল্পে তুলে ধরেন মেলার পরিস্থিতি। তিনি বলেন, কাগজপত্র, বাঁধাই, কালি, শ্রমিকসহ বই তৈরির সব সরঞ্জামের দাম বেড়েছে। আগে ‘আয়রে রাসেল ঘরে আয়’ বইটির দাম ছিল ৩০০ টাকা। এবার খুলে দেখেন কত? এটা এবার ৬০০ টাকা।
আরও পড়ুন: ছুটির দিনে লেখক-প্রকাশক-পাঠকের সম্মিলন, বাড়ছে ব্যস্ততা
তিনি বলেন, এবার পাঠকরা তাদের পছন্দের বইগুলো বেছে বেছে কিনছেন। পছন্দের বইয়ের বাইরে অন্য বই কম কিনছেন। নবীন লেখকের বইয়ে তাদের আগ্রহ খুব বেশি নেই। লেখকের নিজস্ব সার্কেলের লোকজনই বইগুলো কেনেন। তবে এবার শুরুতেই বিক্রি ভালো হচ্ছে।
এবার হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালসহ প্রখ্যাত বেশ কয়েকজন লেখকের বই প্রকাশ করেছে কাকলী প্রকাশনী। তাদের স্টলে নানা বয়সী মানুষের ভিড়ও বেশি। কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী এনামুল হক শামীম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বইয়ের দাম বৃদ্ধি পেলেও মানুষ হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবালের বই কিনছেন। মেলায় হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবালের যত বই বিক্রি হয়, অন্যদের সবার মিলেও এত বিক্রি হয় না।’
আরও পড়ুন: বইমেলায় প্রথম দিন বিক্রি কম হলেও মানুষের ভিড় ছিল বেশি
তিনি বলেন, ‘এবার হুমায়ুন আহমেদের নতুন বই আসেনি। তবে আগের বইগুলো এবার ছাপায় সেগুলোর দাম বেড়েছে। প্রচ্ছদ, ফর্মায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাতে নতুন দামও বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে যে বইয়ের দাম ছিল ২২৫ টাকা, এখন সেটি ৪০০ টাকা। আগেও মানুষ বলতো দাম কম রাখেন। এবারও বলছেন একটু কম রাখেন। সবসময়ই এটা বলবে।’
চিত্রা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী লিজা আক্তার বলেন, ‘পুরোনো বইয়ের দাম বাড়েনি। এবার যেসব বই ছাপা হবে, সেগুলোর দাম বাড়বে। বই একই হলেও দাম বাড়বে এবার। তবে দাম বাড়লেও বিক্রি খুব কমছে না। প্রতিদিন ভালোই বিক্রি হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
পাঠক মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এবার পছন্দের বাইরে নতুন কোনো লেখকের বই কিনছি না। দাম বেশি, খরচ করতে হচ্ছে হিসাব করে। কয়টা বই, কার কার বই কিনবো তা ঠিক করে নিয়েই মেলায় ঘুরছি। এত দামে বই কিনে পড়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য পছন্দের লেখকের সেরা বইটিই কিনছি।
মেলায় এলো আরও ১১৩ নতুন বই
বইমেলায় শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ১১৩টি নতুন বই এসেছে। এরমধ্যে উপন্যাস ২৪টি, প্রবন্ধ ছয়টি, কবিতা ১৮টি, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বই তিনটি, ভ্রমণ চারটি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তিনটি, গবেষণাধর্মী তিনটি। মেলার প্রথম তিন দিনে নতুন বই এসেছিল ১১৭টি। ফলে এবার মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৩০টি।
আল-সাদী ভূঁইয়া/এএএইচ/জেআইএম