বন্যাদুর্গতদের নিয়ে লিখেছি ‘বাইশের বন্যা’: তাসরিফ খান
ভয়াবহ বন্যায় যখন সিলেটের জনজীবন বিপর্যস্ত। দিশেহারা যখন বন্যাদুর্গত মানুষ। ঠিক সেই মুহূর্তে তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও বন্যা পরিস্থিতির খবর জানাতে ফেসবুক লাইভে এসে জনপ্রিয় হয়েছিলেন তরুণ গায়ক তাসরিফ খান। সেই সময়ের স্মৃতি নিয়ে এবার লিখেছেন ‘বাইশের বন্যা’ নামে একটি বই। বইটি প্রকাশ করেছে কিংবদন্তী পাবলিকেশন। সম্প্রতি বই ও নানাবিধ বিষয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লেখক ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: এবারের বইমেলায় আপনার একটি গল্পের বই প্রকাশ হচ্ছে, বইটি সম্পর্কে যদি বলতেন—
তাসরিফ খান: আপনারা অনেকেই জানেন, কিছুদিন আগে সিলেটে যে ভয়াবহ বন্যা হলো; সেখানে আমার সুযোগ হয়েছিল বন্যার্ত মানুষের জন্য কাজ করার। টানা ৬৫ দিন একাধারে কাজ করতে গিয়ে আমার যেসব অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেগুলো একসাথে গুছিয়ে অনেক শ্রম এবং ঘাম দিয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো একটি বই লিখেছি। বইয়ের নাম ‘বাইশের বন্যা’। বইটি কিংবদন্তী পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। প্রচ্ছদ করেছেন সাহাদাত হোসেন। আজ থেকে রকমারি ডটকম ও বইফেরী ডটকমে বইটির প্রি-অর্ডার শুরু হয়েছে। পাঠক চাইলে প্রি-অর্ডার করতে পারেন।
জাগো নিউজ: আপনার আন্তরিক সহযোগিতা বন্যার্তদের উপকৃত করেছে। সাহায্য করতে গিয়ে অনুভূতি কেমন ছিল?
তাসরিফ খান: মানুষের জন্য কাজ করতে শিখেছি ছোটবেলা থেকেই। ছোটবেলায় আব্বুকে দেখতাম অনেক সময় নিজের পকেটের পুরো টাকাটাই গরিব-দুঃখী মানুষকে দিতেন। আম্মুকেও দেখেছি মাঝেমধ্যে আমাদের বাসায় ভিক্ষুক এলে ঘরের রান্না করা খাবার খেতে দিতেন। মূলত এসব দেখেই শেখা। যখন থেকে নিজে উপার্জন করা শুরু করেছি; তখন থেকে কখনো ইচ্ছাপূরণ কিংবা দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছি। বন্যার্ত মানুষের জন্য কাজ করার অনুভূতি আমার পক্ষে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। আমার কাছে মনে হয়, এটি সম্পূর্ণই অনুভব করার বিষয়।
জাগো নিউজ: প্রথমত আপনি একজন শিল্পী। আপনার ব্যান্ডদল ‘কুঁড়েঘর’ সম্পর্কে পাঠককে কিছু বলুন—
তাসরিফ খান: ছোটবেলা থেকে আমি গান গাইতে খুব ভালোবাসি। তবে গান নিয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। ২০১৬ সালের আগস্টে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে সেখানে গান গেয়ে আপলোড করা শুরু করি। স্বপ্ন ছিল কোনোদিন আমার একটি ব্যান্ড হবে। নিজের কিছু গান হবে। আমি লিখবো, সুর করব এবং মঞ্চে গাইব। হাজারো মানুষ আমার সাথে গলা মেলাবে। সেই স্বপ্ন সত্যি করতে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করি কুঁড়েঘর ব্যান্ড। আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং সবার ভালোবাসায় একের পর এক মৌলিক গান করে যাচ্ছি আমরা। শ্রোতাদেরও আমাদের কাজগুলো ভালো লাগছে বলে আমার বিশ্বাস।
জাগো নিউজ: গল্প লেখার আইডিয়া কোথা থেকে পেলেন? লেখালেখিতে কি এই প্রথম? নাকি নিয়মিত লেখার অভ্যাস আছে?
তাসরিফ খান: দেখুন, আমি বই লেখায় এবারই প্রথম। তবে প্রায় সময়ই গান লিখেছি, ছোটগল্প কিংবা একটি বিস্তৃত ঘটনা ছোট আকারে ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে শেয়ার করেছি। কিন্তু গল্প একত্রিত করে গুছিয়ে পাণ্ডুলিপি করার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। আপনারা অনেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন, বন্যায় কাজ করার সময় আমি বেশ কয়েকটি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে তখনকার কিছু কিছু পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে এমনও অনেক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা গিয়েছি, যা তখন বলা কিংবা লেখা হয়নি নানাবিধ কারণ বিবেচনা করে। প্রথমত আমার মা-বাবা আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যেতেন। তাছাড়া আমার শ্রোতা যারা রয়েছেন, তারাও একটি আতঙ্কে থাকতেন; যা আমি একেবারেই চাইনি। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই, যদি সবকিছু ঠিকভাবে শেষ করে ঘরে ফিরতে পারি। তবে না বলা অনেক ঘটনা একসাথে জড়ো করে এই ‘বাইশের বন্যা’ নিয়ে একটি গল্পের বই লিখব, যেখানে সত্য ঘটনাগুলোকেই আমি তুলে ধরবো।
জাগো নিউজ: বই প্রকাশের উদ্দেশ্য কী? আপনার বিশাল ভক্তকূলের জন্য কী বলবেন?
তাসরিফ খান: যেহেতু বাইশের এই বন্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বন্যা হিসেবে ইতোমধ্যে আখ্যায়িত হয়েছে। আমি এ বন্যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলাম। তাই আমি চাই, এ বন্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমি যা যা দেখেছি; সেই অভিজ্ঞতাগুলো মানুষের কাছে একটা বইয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেব। যেন বইটি পড়ে আমাদের এ প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত ‘বাইশের বন্যা’ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পায়। ইচ্ছা আছে, বইটির প্রাপ্ত সম্মানি থেকে একটি অংশ দিয়ে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করবো।
জাগো নিউজ: ভবিষ্যতে আর কী কী করার ইচ্ছা আছে? পরবর্তী বই কী হতে পারে—
তাসরিফ খান: বর্তমানে যেসব কাজ করে আমি মনের শান্তি পাই, যেমন গান গাওয়া, ইচ্ছেপূরণ করা, মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকা—এ কাজগুলো ভবিষ্যতেও করে যাবো। তবে আগামীতে আরও বই লিখবো কি না, তা এখনই বলতে পারছি না।
জাগো নিউজ: সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার ইচ্ছা কীভাবে হলো? ভবিষ্যতেও এমন উদ্যোগের সম্ভাবনা আছে কি?
তাসরিফ খান: সমাজ নিয়েই তো আমাদের বসবাস। আমার চারপাশে কারও দুঃখ, কষ্ট কিংবা বিপদ দেখলে আমি চেষ্টা করি এগিয়ে যেতে। এ কাজগুলো আমার মনে দারুণ শান্তি জোগায়। বলতে পারেন, এ আনন্দ বা শান্তি পাওয়ার একটি প্রবল ইচ্ছা থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকি এবং ভবিষ্যতেও থাকতে চাই।
এসইউ/এএসএম