ভিডিও EN
  1. Home/
  2. একুশে বইমেলা

বইমেলা নিয়ে যা ভাবছেন কবি-লেখকরা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ | প্রকাশিত: ০১:৫০ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২২

অমর একুশে বইমেলার বাকি আর দুই মাস। কম করে হলেও প্রস্তুতি নিচ্ছেন লেখক ও প্রকাশকরা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিগত দুই বছর ধরে বইমেলার ওপর ভর করে আছে অশুভ শক্তি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন বইমেলার ঔজ্জ্বল্য ম্লান করে দিচ্ছে। হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন লেখক ও প্রকাশকরা। এবারও চিন্তা হচ্ছে—কেমন হবে বইমেলা? তাই আসন্ন বইমেলা নিয়ে কবি-লেখকদের ভাবনা তুলে ধরা হলো—

কবি ও প্রাবন্ধিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলা একাডেমির আয়োজনে একুশে বইমেলা ২০২৩ সমৃদ্ধ ব্যঞ্জনায় এবং দৃশ্যমান সফলতায় অনুষ্ঠিত হবে—একজন লেখক হিসেবে এটাই আমার প্রত্যাশা ও প্রার্থনা। আমাদের বইমেলা কেবলই বই কেনাবেচার হাট নয়, এটি একইসঙ্গে আমাদের একটি সাংস্কৃতিক উৎসবও। এটি প্রাণের মেলাও বটে। করোনা অতিমারিজনিত কারণে বইমেলার আয়োজন বিঘ্নিত হয়েছে কয়েক বছর। গতবছর অবশ্য খুব সফলভাবে আয়োজিত হয়েছিল একুশে বইমেলা।’

তিনি বলেন, ‘এবার একটি নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে—কাগজের দাম ভয়ংকর মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়া। প্রকাশকগণ এই নিয়ে তাদের শঙ্কার কথা এবং দাবি-দাওয়া জানিয়ে আসছেন। নতুন লেখকদের জন্য এটা বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত যারা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল নয়। দাম বেশি হলে পাঠক-ক্রেতাদের মাঝেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তারপরও আমি আশাবাদী। একুশে বইমেলার সাথে আমাদের প্রেম জড়িয়ে আছে। আর যেখানে প্রেম সেখানে সব বাধাই অতিক্রান্ত হয়। সেভাবে একুশে বইমেলা ২০২৩ সফলভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আমার নিবিড় বিশ্বাস।’

কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক সাইফ বরকতুল্লাহ বলেন, ‘আশা করি আগামী (২০২৩) বইমেলা ফেব্রুয়ারিতেই হবে। কারণ কোভিড মহামারি কেটে গেছে। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের বইমেলা খুবই সফল ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে করোনার কারণে মেলা সেই অর্থে হয়নি। কিন্তু ২০২২ সালে একমাস পরে মেলা হলেও জমজমাট ছিল। আশা করি আগামী মেলাও জমজমাট হবে। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থনীতিতে মন্দা প্রভাব ফেলেছে। যে কারণে কাগজের দাম বেড়েছে, বেড়েছে অন্যান্য খরচ। প্রকাশকরা বই কস্টিং নিয়ে নানা আলোচনা করছেন।’

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, ডলারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, চলমান অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে পাঠক, লেখক, প্রকাশক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। এটা ঠিক, বই আউটপুটে খরচ বেড়েছে। তবে এরসঙ্গে লেখকের রয়্যালিটির বিষয়টি প্রকাশকদের নিশ্চিত করা জরুরি। পরিশেষে বলব, একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে পাঠক-প্রকাশক-লেখক তথা সংস্কৃতজনের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। আশা করি ২০২৩ সালের বইমেলাও সফল ও সুন্দরভাবে হবে।’

কবি ও লেখক ফখরুল হাসান বলেন, ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের এক মহামিলন মেলা। এ শুধু গ্রন্থমেলা নয়, আমাদের প্রাণের মেলা। আত্মার সঙ্গে আত্মার যেমন সম্পর্ক; তেমনি বইয়ের সঙ্গে লেখক ও পাঠকের সম্পর্ক। কিন্তু এ বছর মহামিলন মেলায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়বে। কারণ প্রকাশনা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ, কালি, প্লেটসহ সবকিছুর অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়েছে। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ। এটা প্রকাশনা শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। ২০২৩ বইমেলায় আমার দুটি কবিতার বই প্রকাশ হওয়ার কথা। রীতিমতো আতঙ্কে আছি প্রকাশনীর বিনিয়োগ নিয়ে। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, এবার আমরা প্রাণহীন একটি বইমেলার অপেক্ষায় আছি।’

লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী মমিন উদ্দিন বলেন, ‘বইমেলার জন্য লেখক-প্রকাশক-পাঠক থাকেন অধীর অপেক্ষায়। বছর ঘুরে চলে আসে অমর একুশে বইমেলা। গত দুই বছর করোনার কারণে সময়মতো বইমেলা আয়োজিত হয়নি। ঠিক ভালো যাচ্ছে না বইমেলা। এবার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বইয়ের উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। যা বইয়ের মূল্যবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলবে। আমি আত্মবিশ্বাসী, শত সংকটের মধ্যেও বইপ্রেমীরা ছুটে আসবেন প্রাণের বইমেলায়। বইমেলার প্রাণ হচ্ছেন পাঠক। তাই পাঠকদের কথা চিন্তা করে বইয়ের মান ঠিক রেখে বই প্রকাশ করলে পাঠক বই কিনবেন। দাম তখন সমস্যা হবে না। পাঠকদের বইমেলামুখী করার জন্য সর্বত্র প্রচার করা যেতে পারে। বিক্রিতে পার্সেন্টিজ যতটুকু দেওয়া যায় বা বইয়ের সঙ্গে উপহার দেওয়া যেতে পারে। আশা করি সব সংকট কাটিয়ে সফল বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে।’

কবি, ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী সাজেদুর আবেদীন শান্ত বলেন, ‘বিশ্বে এখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। কাগজের দাম, প্রেসের খরচ বেড়ে গেছে। এজন্য এ বছর অনেক প্রকাশক বই প্রকাশে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমি মনে করি, অনাগ্রহ না দেখিয়ে বই বের করুন। মানুষ এখন দিন দিন বইমুখী হচ্ছেন। পাঠকরা আপনাদের হতাশ করবেন না। আগামী বইমেলার (২০২৩ সাল) আমেজ এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে। আশা করি ২০২৩ সালের বইমেলা লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের মিলনমেলায় পরিণত হবে। শুভ কামনা রইল প্রকাশক, লেখক, পাঠকদের জন্য।’

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন