ভিডিও EN
  1. Home/
  2. একুশে বইমেলা

কেমন হবে ২০২৩ সালের বইমেলা?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ | প্রকাশিত: ০৭:০৯ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২২

অমর একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের উৎসব। লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের আত্মার মহামিলন ঘটে বইমেলা ঘিরে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিগত দুই বছর ধরে বইমেলার ওপর ভর করে আছে অশুভ শক্তি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন বইমেলার ঔজ্জ্বল্য ম্লান করে দিচ্ছে। হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন লেখক ও প্রকাশকরা। এবারও চিন্তা হচ্ছে— কেমন হবে বইমেলা?

আমরা জানি, অমর একুশে বইমেলার বাকি আর দুই মাস। কম করে হলেও প্রস্তুতি নিচ্ছেন লেখক ও প্রকাশকরা। এরই মধ্যে প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট উপকরণের দাম বাড়ায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন লেখক ও প্রকাশকরা। কেননা এ বছর বইয়ের দাম বেড়ে যাবে দ্বিগুণ। এতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে? তা নিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা। অনেকেই বই প্রকাশ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন বলে শোনা গেছে।

প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকেই বইয়ের প্রচারের তোরজোর শুরু হয়। কিন্তু এবারের চিত্র যেন ব্যতিক্রম। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বইয়ের প্রচার করতে দেখা যায়নি তেমন। অন্যদিকে বই প্রকাশ নিয়ে লেখক ও প্রকাশকদের অনীহা অমর একুশে বইমেলায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রকাশনা জগতের এমন অশনিসংকেত পাঠকের জন্যও হতাশা বয়ে আনছে।

আমরা দেখেছি, গত বছর নির্ধারিত সময়ের পরে শুরু হয়েছিল বইমেলা। ওই বছর প্রায় সাড়ে ৫২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা একাডেমির বই বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার। মোট বই প্রকাশ হয়েছে ৩ হাজার ৪১৬টি। মেলার শেষদিনেও ২১৫টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে মানসম্পন্ন বই নির্বাচিত হয়েছে ৯০৯টি, যা পুরো বইয়ের ২৬ শতাংশ।

এমনকি করোনা মহামারির কারণে ২০২১ এবং ২০২২ সালে আশানুরূপ বই বিক্রি হয়নি মেলায়। ২০২১ সালে বইমেলার আয়োজকরাও বিপাকে পড়েন। পাঠকবিহীন বইমেলা ছিল অনেকটা নিষ্প্রাণ। ২০২১ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি বইমেলা শুরু হলেও করোনা আবহ এবং অর্থনৈতিক সংকটে অন্যান্য বছরের চেয়ে বই কম বিক্রি হয়েছে।

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২১ সালের অমর একুশে বইমেলা ঘোষিত সময়ের দুদিন আগেই শেষ হয়। একদিকে করোনা অন্যদিকে লকডাউনে মানুষ ছিল ঘরবন্দি। যে কারণে বইপ্রেমীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেলায় আসেননি বলে বিক্রেতারা ছিলেন হতাশ। এমন প্রাণহীন বইমেলা আগে কখনো দেখেননি বলেও মন্তব্য করেছিলেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

২০২২ সালেও করোনা মহামারির কারণে দুই সপ্তাহ দেরি করে শুরু হয়েছিল বইমেলা। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বইমেলার উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বইমেলার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তারপরও আগের তুলনায় কম বিক্রি হয়েছে বই। তাই টানা দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আগেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লেখক, প্রকাশ ও পাঠকদের আবার দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

প্রকাশকরা সরকারি প্রণোদনা দাবি করে আসছেন। আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি যাতে স্টল ভাড়া কমিয়ে দেয়, সে দাবিও তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই। এমনকি কাগজের দাম কমানোসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রকাশকদের সংগঠন সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য। গত ২১ নভেম্বর বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষে এসব দাবি জানান অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন নাথ।

লিখিত বক্তব্যে মিলন নাথ বলেন, ‘কাগজের অস্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের পুরো প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট সেক্টর বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। একইসঙ্গে যোগ হয়েছে ছাপার কাজে ব্যবহার হওয়া আমদানিনির্ভর প্লেটের দুষ্প্রাপ্যতা। জরুরি প্রকাশনায় উচ্চমূল্য দিয়েও মিলছে না এসব উপকরণ। এই অস্বাভাবিকতা এখন চরম পর্যায়ে। বর্তমান বাজারমূল্যে ছাপাকেন্দ্রিক কোনো কাজকর্মই করা সম্ভব হচ্ছে না।’

এ অবস্থায় অমর একুশে বইমেলায় স্টল ভাড়া সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছেন প্রকাশকরা। গত ২৬ নভেম্বর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বাংলাদেশ লেখক পাঠক প্রকাশক পরিষদ। রাজধানীর কাঁটাবনে পাঠক সমাবেশে ‘কাগজের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটে প্রকাশনাশিল্প: একুশে বইমেলা ২০২৩ নিয়ে আমাদের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।

তাই আমরা ধরেই নিতে পারি, লেখক ও প্রকাশকরা হয়তো তাদের বিগত বছরের ভয়ানক আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাইবেন এবারের বইমেলায়। পাঠকরাও হয়তো প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে একটি প্রাণবন্ত ঝলমলে বইমেলার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতির এমন মুহূর্তে বইমেলা হলেও সার্বিক বেচাকেনা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে—সেটি এখন ভেবে দেখা জরুরি। এ অবস্থায় বেশি কিছু আশা করার সুযোগও নেই।

এ ব্যাপারে লেখকদেরও আসলে তেমন কিছু করার নেই। নিজের টাকা লগ্নি করে লেখক ও প্রকাশকরা কি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন? তাই কেবল সরকার উদ্যোগ নিলেই হতাশার মাঝেও কিছুটা আশার আলো দেখা যেতে পারে। আরও দুই মাস হয়তো সে আশায়ই পথ চেয়ে থাকতে হবে।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন