ভিডিও EN
  1. Home/
  2. একুশে বইমেলা

মানসম্পন্ন কবিতার পাঠকের অভাব নেই : নওশাদ জামিল

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ | প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

তরুণ প্রজন্মের সংবেদী ও গুরুত্বপূর্ণ কবি-লেখক হিসেবে নওশাদ জামিলের খ্যাতি ও পরিচিতি সর্বজনবিদিত। কবিতা, গল্প, ভ্রমণ, প্রবন্ধ, সম্পাদনাসহ সাহিত্যের নানা শাখায় তার অবাধ বিচরণ। সাহিত্য ধ্যানজ্ঞান হলেও তার পেশা সাংবাদিকতা। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তীর্থতল’ প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। বইটির প্রকাশক ঐতিহ্য। একই প্রকাশনী থেকে ২০১৪ সালে বের হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কফিনে কাঠগোলাপ’। ২০১৬ সালে তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ঢেউয়ের ভেতর দাবানল’ প্রকাশ করে অন্যপ্রকাশ। ২০১৭ সালে ভ্রমণগ্রন্থ ‘লঙ্কাপুরীর দিনরাত্রি’ প্রকাশ করে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স। এ ছাড়াও সম্পাদনা করেছেন ‘কহন কথা: সেলিম আল দীনের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার’ (যৌথ) ও ‘রুদ্র তোমার দারুণ দীপ্তি’ (যৌথ) শিরোনামের দুটি বই ও পত্রিকা।

কবিতা ও সাংবাদিকতার জন্য ইতোমধ্যে নওশাদ জামিল অর্জন করেছেন বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা। কবিতার জন্য পেয়েছেন ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’, ‘বিশাল বাংলা সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে পান ‘আদম সম্মাননা পুরস্কার’। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য পান ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড’, ‘মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী স্মৃতি পুরস্কার’। নওশাদ জামিলের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক ও লেখক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

এবারের বইমেলায় কয়টি বই আসছে আপনার?
নওশাদ জামিল: আমার একটিমাত্র বই বের হয়েছে মেলায়। বইটি কবিতার। নাম ‘প্রার্থনার মতো একা’। চার বছর পর প্রকাশিত হলো আমার বহুল প্রতীক্ষিত কবিতার বই। বইটিতে রয়েছে গত ৪ বছরে লেখা সেরা ও পছন্দের কবিতাগুলো। বইটির প্রকাশক অন্যপ্রকাশ। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী রাজীব দত্ত।

২০১৬ সালের বইমেলায় অন্যপ্রকাশ বের করেছিল তৃতীয় কবিতার বই ‘ঢেউয়ের ভেতর দাবানল’। বইটি তখন অর্জন করেছিল ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’। এবারও বইটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন অন্যপ্রকাশের অন্যতম প্রধান এবং পাক্ষিক অন্যদিন সম্পাদক ও লেখক মাজহারুল ইসলাম ভাই। বিশেষভাবে তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। ‘প্রার্থনার মতো একা’ আমার চতুর্থ কবিতার বই।

zamil

শুনেছি কবিতার বই বিক্রি কম হয়। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
নওশাদ জামিল: আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলবো, কবিতা শুধু নয়, সাহিত্যের যেকোনো শাখার বইপত্র যদি মানসম্পন্ন না হয়, পাঠক তা কিনবেন না, পড়বেনও না। মানসম্পন্ন কবিতার পাঠকের অভাব নেই। এটা ঠিক, সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চেয়ে কবিতার পাঠক খানিকটা কম হতে পারে। উপন্যাস আর কবিতা এক নয়। যেমন ব্যান্ডসংগীত আর উচ্চাঙ্গ সংগীত এক নয়। দুই শ্রেণির পাঠক ও শ্রোতা দুই রকমের।

কবিতার বিক্রি কম হয়, এ কথা আংশিক সত্য। পুরোপুরি সত্য নয়। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা, বইয়ের বিক্রি দিয়ে কখনো সাহিত্য বিচার করা ঠিক নয়। জনপ্রিয়তা সবাই চান বটে। সস্তা জনপ্রিয়তা অন্তত আমার কাম্য নয়। ফেসবুকের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে অনেকে বই প্রকাশ করেন। তাদের বই বেশ বিক্রিও হয়। দিনশেষে তাদের বই কিনে অনেক পাঠককে আফসোস করতে শুনেছি, প্রতারিত হতে দেখেছি।

কবিতার পাঠক দিন দিন বাড়ছে না কমছে?
নওশাদ জামিল: কবিতা শুধু নয়, সাহিত্যের পাঠকই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মনে করি। রাজধানীসহ সারাদেশেই বইয়ের পাঠক বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা বলে বইয়ের পাঠক কমছে, তাদের উদ্দেশে বলব, প্রতিবছরই বইমেলায় দেখা যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বইয়ের পাঠক ও বিক্রি। শুধু বইমেলা নয়, বইয়ের নান্দনিক অনেক বিপণিবিতানও গড়ে উঠেছে। সেখানেও বৃদ্ধি পাচ্ছে বইয়ের বিক্রি ও পাঠক।

সার্বিকভাবে পাঠক বৃদ্ধি পাচ্ছে, কবিতার পাঠকও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কথা সত্য যে, কবিতার পাঠক অন্যরকম। আর দশজন পাঠকের মতো নয়। কবি ভারতের খ্যাতিমান কবি রণজিৎ দাশের সাথে গলা মিলিয়ে বলি, ‘কবিতার পাঠক এক শুদ্ধ, নির্জন, অলৌকিক মানুষ।’ আশার কথা, এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়! তাদের উৎসাহ ও ভালোবাসাই আমার একমাত্র অনুপ্রেরণা।

মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত কবিতার চরণ এখন আর নেই কেন?
নওশাদ জামিল: কবিতার সঙ্গে সুর ও ছন্দের সম্পর্ক বিদ্যমান। কবির ভেতর ছন্দ তৈরি করে শব্দবোধ, ধ্বনিবোধ ও সুরমাধুর্য। যিনি সুর জানেন না, লয় মানেন না তার ভেতর ওই বোধ কী করে তৈরি হবে? শব্দের পরিমিতি, ওজন, শব্দগঠন, নতুন শব্দ আবিষ্কার এবং বাক্যের কাঠামোকে দৃঢ় করে ছন্দ। কবির নিজস্ব ভাষা, দৃশ্যকল্পনা, ভাব ও বস্তুর মধ্যে একটা সাঁকোবন্ধ তৈরি করতে গেলেও দরকার হবে ছন্দের। কিন্তু অনেকেই মনে করেন ছন্দ কবিতার স্বতঃস্ফূর্ততাকে ব্যাহত করে। হয়তো অনেকেরই বেলায় ঘটে থাকবে এটা। নিজের কথা বলি, ছন্দ আমাকে শক্তি দিয়েছে। প্রাণপ্রাচুর্য দিয়েছে। ছন্দ আমাকে দিয়েছে অবারিত স্বতঃস্ফূর্ততা।

কয়েক দশকের কাব্যধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ছন্দ জানা ও ছন্দে লেখা কবি ও কবিতার সংখ্যা কমছে প্রতিদিনই। আমার দৃষ্টিতে এটার কারণ একটিই। সেটি হলো কবিতার জন্য প্রকৃত সাধনা ও ভালোবাসার অভাব। দীর্ঘ দীর্ঘ দিবস সাধনা করে ভালোবেসে একটি পঙ্ক্তির জন্য, একটি শব্দের জন্য ব্যয় করতে হয় ত্যাগ-তিতীক্ষা। জীবন-যৌবনের মাধুর্য ঢেলে দিয়ে সাজাতে হয় কাব্যসুষমা, গড়ে তুলতে হয় কাব্যপ্রতিমা। কবিদের ওই সাধনা ওই ভালোবাসার এখন বড় অভাব।

zamil

সত্তর, আশি, নব্বই দশেকের অনেকেই ছন্দে লিখেছেন, এখনো লিখে চলেছেন দারুণ শক্তিমত্ততায়। পঞ্চাশ, ষাটের কবিতা; চল্লিশ, তিরিশের কবিতার প্রবণতাগুলো লক্ষ করলে বোঝা যায়, ছন্দ কিভাবে একজন কবিকে অফুরান ঐশ্বর্য দিতে পারে। বিশ্বকবিতার কথা বলতে পারবো না, তবে এটা বলতে পারবো, বাংলা কবিতার প্রাণপুরুষেরা সবাই ছন্দে লিখেছেন। দুই বাংলার শক্তিমান প্রত্যেক কবিই ছন্দে লিখেছেন তাঁদের স্মরণীয় সব কবিতাগুলো। তাঁদের কালজয়ী সব কবিতা এখনো মানুষের হৃদয়ে, মুখে মুখে ফেরে।

বইমেলার পাঠকের উদ্দেশে কিছু বলুন—
নওশাদ জামিল: ফেব্রুয়ারি মাস এলেই কেমন একটা চাঞ্চল্যবোধ করি। ফাগুনের নব পত্রপল্লবের মতো নেচে ওঠে লেখকমন। কারণটা আর কিছু নয়—বইমেলা। সৃজনশীল কবি ও লেখক হিসেবে বইমেলার সঙ্গে আমার ২০ বছরের নিবিড় সখ্য। কবি-লেখক হিসেবে, পাঠক-ক্রেতা হিসেবে বইমেলায় আগে যেতাম নিয়মিত, এবারও যাব। এখন পেশাগত কারণেই বইমেলায় যেতে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। বইমেলাটা যখন ছিল একাডেমির চার দেয়ালের ভিতর, তখন যত মানুষ আসত মেলায়—ঢুকতে না পেরে, ভিড়ের কারণে ফিরে যেত তার চেয়ে বেশি মানুষ। অতিরিক্ত ভিড়বাট্টার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে বই কিনতে পারতেন না প্রকৃত ক্রেতা-পাঠকরাও। তখন আমরা পত্রিকার পাতায় লিখতে শুরু করি—জায়গা সংকট দূর করতে বইমেলার সম্প্রসারণ জরুরি।

আনন্দের বিষয় এই যে, কয়েক বছর ধরেই অমর একুশে গ্রন্থমেলার ঠিকানা এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। তাতে আগের চেয়ে মেলার পরিসর বেড়েছে, বেড়েছে ক্রেতা-দর্শনার্থীও। স্টলগুলো আর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে নেই। প্রতিটি স্টলের সামনে থাকে ফাঁকা জায়গা। বইমেলার পরিসর বাড়ানোর ফলে ক্রেতা-পাঠকরা ঘুরতে পারছেন স্বাচ্ছন্দ্যে, বই দেখতে পারছেন আনন্দের সঙ্গে। বইমেলার জন্য এই পরিবেশ আনন্দদায়ক।

ক্রেতা-পাঠকের বলব, চটকদার বিজ্ঞাপন ও প্রচার-প্রচারণা দেখে বই কিনবেন না। বইটি কেনার আগে অন্তত নেড়েচেড়ে দেখুন। খানিকটা চোখ বুলিয়ে তারপর বই কিনুন।

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন