ভিডিও EN
  1. Home/
  2. একুশে বইমেলা

বইমেলায় স্বকৃত নোমানের ইবিকাসের বংশধর

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমানের তৃতীয় গল্পের বই ‘ইবিকাসের বংশধর।’ প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স। ইবিকাসের বংশধর গল্পটি বইয়ের নাম গল্প। গত দুই বছরে লেখা মোট ষোলটি গল্পের সংকলন এটি। বইটি সম্পর্কে কলকাতার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অমর মিত্র লিখেছেন, ‘স্বকৃত নোমানের গল্প বাংলাদেশের গল্প।

এক একটি গল্প বাংলাদেশের হৃদয়কে ছুঁয়েছে। গ্রাম, নদী, বাওড়, দিঘি, গাছগাছালি, বন-বাদাড়, বান-বন্যা, অনাবৃষ্টি নিয়ে বাস করা দরিদ্র মানুষের জীবনের রূপকার স্বকৃত। নিন্মবর্গের মানুষ স্বকৃত নোমানের গল্পের মানুষ। তাদের কথা লিখতে লিখতে স্বকৃত যেন বাংলাদেশের আত্মাকে দেখিয়ে দেন। তার গল্পের মানুষ ক্ষুধার্ত বাংলার মানুষ।

সমস্ত জীবন কাটায় যেন ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য। স্বকৃতর গল্পের মানুষ ভাত আর মাংসের কথা ভাবে। স্বপ্ন দেখে। তবুও তাদের এক জীবন-দর্শন আছে। তা তাদের জীবন এবং জন্ম থেকে উপলব্ধ। জীবন আর ধর্মের নিগড় দুই যে মেলে না তা স্বকৃতর গল্প আমাদের দেখিয়ে দেয়। এই গ্রন্থে আছে যে ক্ষিদরের গল্প (বাঙাল), তা আমাদের সাহিত্যের সম্পদ। কী অনায়াসে ক্ষিদর অগ্রাহ্য করে বড়হুজুর, মোল্লার ফতোয়া, সতর্কতা।

নদীর ওপারে মৌলবি যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে, তা নদীর ওপারেই রেখে আসে ক্ষিদর। তাকে খেটে খেতে হয়। তার নিজস্ব জীবনে অনধিকার প্রবেশ করা সহজ নয়। স্বকৃত নোমানের লেখায় যে দার্শনিকতা আছে, তাইই তাকে বিশিষ্ট করেছে। ঔপন্যাসিক স্বকৃতর গল্পের অনুরাগী না হয়ে থাকা যায় না। প্রতিটি গল্প চিনিয়ে দেয় অবারিত এক বাংলাদেশ এবং তার মানুষজনকে।’

কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক হামীম কামরুল হক লিখেছেন, ‘স্বকৃত নোমানের স্নায়ুতে ইতিহাস-চেতনা আর মর্মে রাজনৈতিক ভাঙাগড়ার দোলাচল। সেখানে সমকালকে চিরকালে নিয়ে যাওয়াই তাঁর লক্ষ্য। আবার সমকালকে সমকালেই ছেনে দেখার লীলাও তাঁকে নাড়িয়ে দেয়। তিনি সাড়া দেন ছোটগল্প লিখে। এজন্য হয়ত চলার পথে তিনি একটি একটি করে ছোটগল্পের খুঁটি গাড়েন। সমকাল ও চিরকালের ঠোকাঠুকিতে তাঁর গল্পগুলিতে বার বার দেখা দেয় জীবনের ফুল ও ফুলকি। তাঁর গল্পগুলি আমাদের স্বস্তি দেয় না, বরং প্রশ্নকাতর করে, আঘাত করে আমাদের প্রচলিত জীবনযাত্রা, রীতিনীতি ও জীবনভাবনায়।’

এই গল্পগ্রন্থের একটি গল্প হচ্ছে ‘কুয়ার বাইরে’। গল্পটির বিষয় সমমায়িক ঘটনাবলী। মাওলানা আবুল কাশেম ফেনবী গল্পের প্রধান চরিত্র। তিনি একটি কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম (পরিচালক) এবং একটি ইসলামি মৌলবাদী সংগঠনের আঞ্চলিক নেতা। তার ছেলে থাকে ইন্দোনেশিয়ায়। ঢাকার হাইকোর্টের সামনে থেকে তখন গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য সরানোর জন্য হেফাজতে ইসলামসহ সমমনা কয়েকটি ইসলামি রাজনৈতিক দল আন্দোলন করছে। ঠিক সেই সময়ে মাওলানা আবুল কাশেম ফেনবী ইন্দোনেশিয়ায় তার ছেলের কাছে বেড়াতে যায়।

ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ, অথচ সেদেশের এয়ারলাইনসের নাম মহাভারতের পাখি গারুড়ার নামে। সেদেশে ভারতীয় পুরাণ ‘রামায়ণ’ মঞ্চস্থ হয়। সেদেশের রাজ্য বালিদ্বীপের সর্বত্র নানা ভাস্কর্য স্থাপিত। সেদেশের টাকার গায়ে হিন্দুদেবতা গণেশের মূর্তি আঁকা। মাওলানা আবুল কাশেম ফেনবীর অবাক লাগে। মুসলিম দেশ, অথচ সংস্কৃতি কিনা সম্পূর্ণ আলাদা! এইসব ঘটনা তাকে দারুণ প্রভাবিত করে। দেশে ফিরে তিনি সম্পূর্ণ বদলে যান। ইসলামি মৌলবাদী সেই সংগঠন থেকে পতদ্যাগ করেন। তিনি বুঝতে পারেন, ধর্ম ও সংস্কৃতি যে সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয়।

বইটি সম্পর্কে লেখক স্বকৃত নোমান বলেন, ‘নিজের গল্প সম্পর্কে মন্তব্য করা আমার পক্ষে কঠিন। হয়ত সব গল্পকারের পক্ষেই কঠিন। সংক্ষেপে শুধু এটকু বলি, অতীতে যে দুটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে, সে দুটির ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে আমি অতিক্রম করার চেষ্টা করেছি। লেখকজীবনে আমি মোট চুয়াল্লিশটি গল্প লিখেছি। চুয়াল্লিশটি গল্প থেকে যদি আমাকে শ্রেষ্ঠ দশটি গল্প নির্বাচন করতে বলা হয়, তাহলে বেশিরভাগ গল্পই নিতে হবে ইবিকাসের বংশধর থেকে।’

বইমেলার পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের ৩ নং প্যাভিলিয়নে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। দাম ২২০ টাকা।

এইচআর/পিআর