ভিকারুননিসা স্কুল
দুর্নীতিবাজ শিক্ষককে অ্যাডহক কমিটিতে রাখতে ‘মরিয়া’ অধ্যক্ষ!
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাচিত গভর্নিং বডির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১৭ ডিসেম্বর। নির্বাচন না হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী—এখন ছয়মাসের জন্য চার সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করবে প্রতিষ্ঠানটি। সেই প্রক্রিয়া চলছে।
প্রবিধানমালা অনুযায়ী—অ্যাডহক কমিটিতে সভাপতি পদে দায়িত্বে থাকবেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল জাবিউল্লাহ। এছাড়া পদাধিকারবলে অধ্যক্ষ সদস্যসচিব, একজন অভিভাবক প্রতিনিধি ও একজন শিক্ষক প্রতিনিধি রাখা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমের পছন্দ আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ। তিনি সদ্য মেয়াদ শেষ হওয়া গভর্নিং বডিতে শিক্ষক প্রতিনিধি (পুরুষ) হিসেবে ছিলেন।
গভর্নিং বডিতে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, ভর্তিবাণিজ্য করার অভিযোগ ওঠে। আলোচিত ১৬৯ ছাত্রীকে অবৈধভাবে ভর্তি করানো ভর্তি কমিটিতেও তিনি ছিলেন অন্যতম। ওই ঘটনায় হাইকোর্টে রিট করা হয়। তাতে আব্দুর রাজ্জাক আকন্দকেও দায়ী করা হয়। তদন্তের পর দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ১৬৯ ছাত্রীকে অবৈধভাবে ভর্তির ঘটনায় কমিটি কোনো সদস্য দায় এড়াতে পারেন না। সেদিক থেকে আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ দায়ী ও দোষী সাব্যস্ত।
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটিতে অসংখ্য এমপিওভুক্ত ইনডেক্সধারী শিক্ষক থাকার পরও নন-এমপিও একজন শিক্ষককে অ্যাডহক কমিটিতে সদস্য করার বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তাছাড়া বিগত গভর্নিং কমিটিতে থেকে দুই বছর তিনি নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। মুজিববর্ষ উদযাপনের নামে অপ্রয়োজনীয় খরচ করা কমিটিতেও ছিলেন এই আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আব্দুর রাজ্জাক আকন্দকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাকে এসএমএস করা হলেও কোনো প্রতিউত্তর মেলেনি।
শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদন, ঝুলে আছে বোর্ডে
বিস্তর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও সম্প্রতি আব্দুর রাজ্জাক আকন্দকে অ্যাডহক কমিটিতে আবারও শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসে চিঠি পাঠিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম। ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাতে অনুমোদন দিয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে পাঠিয়েছে। বোর্ড এটি চূড়ান্ত করলে কমিটি গঠিত হবে।
তদবির করে শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদকে দিয়ে অনুমোদন করানো হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদের দাবি, তিনি শুধু নিয়মমাফিক অনুমোদন দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
- ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির নির্বাচন ঘিরে ধোঁয়াশা
আন্দোলনের মুখে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষসহ ২ শিক্ষকের পদত্যাগ
স্কুলে যাওয়া বন্ধ সেই ১৬৯ ছাত্রীর, আদালতে ঝুলছে ভাগ্য
জানতে চাইলে আব্দুল মজিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফাইলটা এসেছিল। আমি সই করে বোর্ডে পাঠিয়েছি। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি তো আমি জানতাম না। সেটা জানতে হয়তো ভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল।’
বিষয়টি নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমের মন্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। কয়েকবার তাকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে পরিচয় ও অভিযোগের বিষয় জানিয়ে তাকে এসএমএস করা হলেও সাড়া মেলেনি।
জানতে চাইলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুর্নীতি-অনিয়মে অভিযুক্ত কোনো শিক্ষককে অ্যাডহক কমিটিতে রাখা উচিত নয়। দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত শিক্ষকদের নাম বোর্ডে পাঠানো হলেও তাতে অনুমোদন দেওয়া না দেওয়া বোর্ডের এখতিয়ার। শিক্ষা বোর্ড যদি মনে করে, সেই শিক্ষক নৈতিক জায়গায় ঠিক নেই, তাহলে তাকে বাদ দিতে পারে।’
ঢাকা বোর্ডে ৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
গভর্নিং বডির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে থেকে অ্যাডহক কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অনেকে তদবির শুরু করেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ভর্তিবাণিজ্যে জড়িত। বিষয়টি নিয়ে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শককে লিখিত অভিযোগ দেন।
তাতে বলা হয়, নন-এমপিও শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক ভর্তিতে অনিয়মে জড়িত। তার দ্বারা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠান আরও বড় কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হয় কি না, তা নিয়ে অভিভাবকমহলে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে।
কলেজ শাখার শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস ও বদরুল আলমের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, সংস্কার ও বিউটিফিকেশন কার্যক্রমের নামে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার আত্মসাৎ করার অভিযোগ থাকলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তাঁবেদারি করতে গিয়ে এমন কোনো কাজ নেই তারা করেননি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাছাড়া মাহবুবুল হক মিঠু ২০১৭-১৮ মেয়াদের কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে ২০১৯ সালের গভর্নিং বডির নির্বাচনে শুধু দুর্নীতির কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে ঢাকা জেলা প্রশাসক অফিস। পরে হাইকোর্টে গিয়েও নির্বাচন করার অনুমতি পাননি তিনি।
জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক রিজাউল হক বলেন, ‘অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এএএইচ/এমআরএম