বিসিএসে বয়সসীমায় ‘বৈষম্য’, ৩৪ বছরের দাবি চিকিৎসকদের
বিসিএসে আবেদনের ক্ষেত্রে সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা যখন ৩০ বছর ছিল, তখন চিকিৎসকরা (স্বাস্থ্য ক্যাডারে) ৩২ বছর পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ পেতেন। চাকরিপ্রার্থীদের দাবির মুখে সম্প্রতি সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অথচ চিকিৎসকদের বয়সসীমা রাখা হয়েছে সেই ৩২ বছরই।
চিকিৎসকরা এটিকে চরম বৈষম্য বলে মনে করছেন। তারা চিকিৎসকদের আবেদনের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৪ বছর করার দাবি তুলেছেন। ৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরুর আগেই এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।
আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানান, গত ১৮ নভেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তবে বিসিএসে যেহেতু আগে চিকিৎসকরা ২ বছর বেশি সময় পেতেন, সেজন্য তারা আশা করেছিলেন বিসিএসে তাদের বয়সসীমা ৩৪ বছর করা হবে।
কিন্তু গত ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত ৪৭তম বিসিএসে সাধারণ প্রার্থীদের মতো চিকিৎসকদের বয়সসীমাও সর্বোচ্চ ৩২ বছর রাখা হয়। বিষয়টি চিকিৎসকদের বৈষম্যমূলক।
বিষয়টি নিয়ে সাধারণ এমবিবিএস ও বিডিএস চিকিৎসক সমাজের পক্ষে চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মঈন উদ্দিন চিশতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছেন।
এর মধ্যে গত ৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বরাবর আবেদন করেন তারা। তাছাড়া ৮ ডিসেম্বর পিএসসির চেয়ারম্যান, ১২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর কাছেও লিখিতভাবে দাবি তুলে ধরেন।
বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে চিকিৎসকদের যেসব যুক্তি
চিকিৎসকরা জানান, বিসিএসে আবেদন করতে সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্নাতক পাস হওয়ার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে স্নাতক শেষ করতে চার বছর সময় লাগে। অথচ চিকিৎসকদের এমবিবিএস ও বিডিএসে স্নাতক ও ইন্টার্নশিপ শেষ করতে ন্যূনতম ৭৮ মাস বা সাড়ে ৬ বছর সময় প্রয়োজন হয়।
এজন্য আগের সব বিসিএসে সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা ৩০ বছর রাখা হলে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ বছর ছিল। বৈষম্য দূর করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এখন চিকিৎসকদের বয়সসীমা আরও দুই বছর বাড়িয়ে ৩৪ করা জরুরি বলে মনে করেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।
ঢামেকের আমতলায় চিকিৎসকদের অবস্থান
ঢাকা মেডিকেল কলেজের আমতলা চত্বর ঐতিহাসিক একটি স্থান। এখান থেকে ভাষা আন্দোলনের মিছিলের যাত্রা শুরু হয়েছিল। দাবি আদায়ে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) আমতলা চত্বরে চিকিৎসকরা অবস্থান নেন এবং দাবি-দাওয়া তুলে ধরে ব্রিফিং করেন।
- আরও পড়ুন:
৪২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ১৯১৯ চিকিৎসককে নিয়োগের দাবি - বিদেশে চিকিৎসার ওপর নির্ভরতা কমাতে কাজ করছে সরকার
ব্রিফিংয়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা বলেন, বিসিএসে (স্বাস্থ্য ক্যাডার) আবেদনের ক্ষেত্রে তাদের বয়সসীমা ৩৪ বছর না করার পর্যন্ত চিকিৎসকরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় আবেদনপত্র দিয়ে দাবি তুলে ধরেছি। পিএসসিও ইতিবাচক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও আমাদের দাবি যৌক্তিক মনে করছে। আশা করি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি করে চিকিৎসকদের দাবি পূরণ করবে। ৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরুর আগে কর্মদিবসের মধ্যেই আমরা এ প্রজ্ঞাপন আশা করছি।’
চিকিৎসকদের দাবি বিবেচনার অনুরোধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
এদিকে, চিকিৎসকদের দাবি সংবলিত লিখিত আবেদন পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে বিসিএসের স্বাস্থ্য ক্যাডারে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৩৪ বছর করার বিষয়টি বিবেচনা করতে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
যা বলছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পিএসসি
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রজ্ঞাপন ও আদেশ জারি করা হয়, তা মেনে পিএসসি কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত এলে বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধন আনা সম্ভব।
পিএসসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা (৩৪ বছর) আগে ছিল। তখন মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধীসহ কোটার ক্ষেত্রেও বয়স কিছুটা সাধারণ প্রার্থীদের বেশি ছিল। এখন সবার বয়সসীমা একই। তবে চিকিৎসকদের বিষয়টি কিছুটা যৌক্তিক। সেক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা বা প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।’
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের চিঠি আমরা পেয়েছি। বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। চিকিৎসকদের বয়সসীমা বাড়তে পারে।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত হলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।’
এএএইচ/এমআরএম