ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয় নির্ধারণ করবেন কীভাবে

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ক্লাস নাইনে উঠতেই জীবনে আসে প্রথম ধাক্কা! নিতে হয় অনেক বড় সিদ্ধান্ত, কী নেব, সায়েন্স, বিজনেস স্টাডিজ নাকি আর্টস? বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীর ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় তাদের বার্ষিক পরীক্ষার নম্বর। তবে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় আসে, তখন বিষয় বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত একজন তরুণের জীবন বদলে দিতে পারে।

কোন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবেন? কীভাবেই বা নির্বাচন করবেন বিষয়? এখানেও অবশ্য সামনে এসে দাঁড়ায় উচ্চমাধ্যমিকের ফল! যুক্ত হয় নানান রকম শর্ত। তারপর ভর্তি পরীক্ষায় মূল্যায়নের মাধ্যমে পাওয়া যায় কাঙ্ক্ষিত বিষয়। অনেককেই নিজের অপ্রিয় একটি বিষয় নিয়েও পড়াশোনা করে যেতে হয়। তবু নিজের ভবিষ্যৎ বলে কথা, একটু পরিকল্পনা করে অনার্সের বিষয় নির্বাচন করলে সেটা হয়ে দাঁড়ায় ক্যারিয়ারের, এমনকি জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। উচ্চশিক্ষার বিষয় নির্বাচনে মাথায় রাখতে হবে যে বাস্তবতাগুলো –

আগ্রহ ও পারদর্শিতা: প্রথমেই ভাবতে হবে, আপনি আসলে কী ধরনের পেশা বা কাজে আগ্রহ বোধ করেন? কেননা কথায় আছে, আপনার যে কাজ করতে ভালো লাগে, আপনি সেটিই ভালো পারবেন। ধরা যাক, আপনি বিপণনে আগ্রহী। তাহলে বিপণন বা মার্কেটিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত পেশায় আপনার সবচেয়ে ভালো করার সম্ভাবনা থাকে। তবে ‘ভালো’ করার ক্ষেত্রে পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি দক্ষতা ও পারদর্শিতাও অর্জন করতে হয়। অর্থাৎ, কোনো একটি বিষয় ভালো লাগা আর সে বিষয়ে ভালো করতে পারা এক কথা নয়। ধরা যাক, যে খুব ভালো ছবি আঁকে, তার হয়তো গানও খুব পছন্দ। ওই শিক্ষার্থী কোন বিষয় নিয়ে অনার্স পড়বেন, চারুকলা নাকি সঙ্গীত? এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তার আগ্রহ ও পারদর্শিতার গভীরতার ওপর ভিত্তি করে।

ক্যারিয়ারভিত্তিক লক্ষ্য: ভাবতে হবে প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তবতা নিয়েও। অর্থাৎ, পেশাগত জীবনে আপনি কী করতে চান? যে বিষয়ে স্নাতক বা অনার্স পড়বেন সেই বিষয়ের সঙ্গে পেশাটি কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই সঙ্গে এটাও দেখতে হবে যে, চাকরির বাজারে আজ থেকে এক দশক পর কোন কোন বিষয়ের শিক্ষার্থীদের চাহিদা কেমন থাকবে। অথবা ভাবতে হবে, পেশাগত জীবনে আপনি কী অর্জন করতে চান? সেসব অর্জনে আপনার কোন বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়া উচিত? এসব বিবেচনায় নিলে বিষয় নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে একধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন। ধরা যাক, এখনকার দিনের মহামূল্যবান বস্তু হলো তথ্য বা ডেটা। এই ডেটাকে কতভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে চলছে রাজ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ফলে এই সময়ে এসে ভবিষ্যতের কথা ভেবে ডেটা সায়েন্স নিয়ে পড়ার কথা ভাবনে পারেন অনেকে।

ভর্তির শর্তসমূহ: আপনার ইচ্ছা, পছন্দ ও দক্ষতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির শর্ত মেলানো খুব জরুরি। সব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কিছু শর্ত থাকে। আগাম সেসব জেনে নিতে হবে। যেমন বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী অর্থনীতি নিয়ে পড়তে পারবে, কিন্তু হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ফার্মেসিতে পড়তে পারবে না।

সময় দিতে পারবেন তো: শিক্ষাজীবনে আপনি কতটা সময় পড়াশোনার পেছনে ব্যয় করবেন? কতটা সময় টিউশনি করবেন আর কতটা সময় বন্ধুদের দেবেন, সেটা মাথায় রাখতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই সব বিষয়ে পড়াশোনার চাপ, ক্লাস-পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় এক রকম নয়। আপনি যদি কেবল পড়াশোনায় মনোযোগী হতে চান, তাহলে এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। আর যদি পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সংগঠন, ক্লাব, ছাত্রসংসদ, রাজনীতি, টিউশন, পার্ট টাইম জব, খেলাধুলা করতে চান, তাহলে আপনার বেশি সময় দিতে হয় এ রকম বিষয় নির্বাচন করা চলবে না। তাতে পড়াশোনা ও অন্য কাজ কোনোটাই ঠিকঠাক এগোবে না। যেমন আপনি যদি রসায়নে স্নাতক করতে চান, তাহলে ক্লাসের বাইরেও অনেকটা সময় কাটাতে হবে ল্যাবরেটরিতে। তাই আপনার মানসিক প্রস্তুতি থাকবে হবে যে, অন্য আরেকটি বিভাগের বন্ধুর সমান আড্ডার সময় কিন্তু আপনি পাবেন না।

চাকরির সুযোগ: পাস করার পর পছন্দের চাকরি বা কাজের সুযোগ কতটা? দেশে কি সেই সুযোগ পাবেন? শুরুতেই এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তাতে পরে আফসোস করতে হবে না। যেমন, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়লে দেশে চাকরির সুযোগ সীমিত। তবে বিদেশে এ নিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারলে বিদেশেই চাকরির সুযোগ রয়েছে।

উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষা: পড়া শেষে আপনি কি গবেষক হতে চান, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক? কিংবা ধরা যাক স্নাতক শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রি নেবেন। সেই সিদ্ধান্তটাও এখনই নেওয়া ভালো। তাহলে ওই পরিকল্পনামাফিক স্নাতকের বিষয় নির্বাচন করতে পারবেন। সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, পরের ডিগ্রিটি আপনি দেশ থেকে নেবেন, নাকি বিদেশ থেকে। বিদেশে হলে কোন দেশে। কিছু কিছু দেশে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যাওয়া সহজ; যেমন আমাদের দেশ থেকে অনেক বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে যান প্রতি বছর। জার্মানির মতো দেশ, যেখানে টিউশন ফি নেই, সেসব দেশের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ স্বভাবতই বেশি থাকে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মানসিক সক্ষমতা যেমন আলাদা, তেমনি প্রত্যেকের বাস্তবতাও ভিন্ন। কারও কারও পড়া শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে চাকরিতে ঢোকার চাপ থাকে, আবার কেউ কেউ খুব গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চতর শিক্ষার কথাও ভাবেন। কেউ দেখা যায়, পড়া শেষ করার আগে বা সঙ্গে সঙ্গে নিজ প্রতিভায় একেবারে শূন্য থেকে গড়ে তুলতে চান প্রতিষ্ঠান, হয়ে ওঠেন উদ্যোক্তা। এজন্য ভর্তি পরীক্ষায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সাবজেক্ট চয়েসও হতে হবে তার ব্যক্তিগত বাস্তবতা ও পছন্দ অনুযায়ী।

এএমপি/আরএমডি/জিকেএস