ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

শিক্ষা কমিশন গঠন এখন সবচেয়ে জরুরি: মোহাম্মদ আজম

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:৫৩ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেছেন, আমাদের সরকার প্রচুর কমিশন করেছে, কিন্তু শিক্ষা সংস্কারের গবেষণা নিয়ে কোনো কথা বলছে না। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রথম কমিশন হওয়া উচিত শিক্ষা সংস্কার কমিশন। শিক্ষা কমিশন গঠন এখন সবচেয়ে জরুরি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বিভিন্ন সময় কমিশন হয়েছে। সেসব কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে সেসব খুবই দীর্ঘমেয়াদি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আসলে ক্যাপাবিলিটি নেই। যেখানে জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া উচিত সেখানে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে ৪ শতাংশ আছে। দেশে এতদিন ছিল ২.১ শতাংশ, এখন তা মাত্র ১.৬০ শতাংশ। শুধুমাত্র নৈতিকতার কারণে একজন ভালো শিক্ষক হবেন এমনটা সম্ভব নয়। প্রাইমারি স্কুলে মাত্র ১৭ হাজার টাকায় ভালো শিক্ষক পাওয়া সম্ভব নয়।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একাডেমিক অধিকার লঙ্ঘন: প্রতিকারে নীতি সুপারিশ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করেন কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়া নামে একটি সংগঠন।

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আন্ডারগ্র্যাড ও পিএইচডি কোলাবরেশন সম্ভব। বাংলাদেশে ব্যাসিকালি কোনো পিএইচডি নেই। পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ফুলটাইম, ফুল ফান্ডেড পিএইচডি চালু করতে হবে। প্রাথমিকভাবে অন্তত ২/৩টা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সুযোগ চালু করতে হবে। পরবর্তীতে এটা বিস্তৃত হবে।

ইংরেজি ভাষা শিক্ষার পরিধি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের লোকেরা ইংরেজি জানে না এটা নিশ্চিত। ইংরেজি ভাষাভাষী লোকের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮২তম। অথচ ভদ্রলোকের ছেলে মেয়ে ইংরেজি মিডিয়াম ছাড়া পড়ে না। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আরবান টপার মিডল ক্লাসের ছেলেমেয়েরা পড়ে না। এতগুলো লোক যদি ইংরেজিতে পড়ে তাহলে ইংরেজি ভাষাভাষী কম কেন?

মাদরাসা শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আলিয়া শিক্ষাব্যবস্থাকে মেইনস্ট্রিম বলতে হবে। এতদিন যুক্তিভিত্তিক, একমুখী শিক্ষা বলে যা প্রচার করা হচ্ছে তা একটা অপরায়নের ফলাফল। বিদেশে যারা কাজ করতে যায় তাদের কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে একীভূত করতে পারলে এর ফলাফল অসাধারণ হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাবিলিটি অল্প খরচে বানাতে হবে।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মুশতাক খান বলেন, কেউ কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের ওপর থেকে যেমন চাপ আসতে হবে তেমনি নিচের থেকেও চাপ আসতে হবে। বর্তমান সরকার বেশিদিন থাকবে না। উন্নয়ন বলতে অল্প খরচে অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে রপ্তানি করে রেমিটেন্স আনলেই হবে না। আমাদের পোশাক শিল্পে বাইরের দেশের অনেক লোক কাজ করে ইংরেজি জানার কারণে। বাংলাদেশের ছেলে মেয়েরা অনেক মেধাবী। সস্তা শ্রমের অদক্ষ শ্রমিকের যুগ শেষ। এখন গবেষণার যুগ। আমাদের শিক্ষাঙ্গনে জবাবদিহিতা ও ভালো মানের গবেষণা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষক সবকিছুর সঙ্গে গুড গভর্ন্যান্সের অধীনে নিয়ে আসতে পারলে এর সুফল পাওয়া যাবে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, ভার্সিটিতে মাল্টি লেভেল গভর্ন্যান্স অ্যাপ্রোচ খুব দরকার। পলিটিক্যাল লক্ষ্য না থাকলে এত পরিকল্পনার কোনোটাই কাজ করবে না।

সাংবাদিক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদিন শিশির বলেন, আমরা আঞ্চলিক পরাশক্তি দ্বারা নিপীড়িত হচ্ছি শুধুমাত্র ইংরেজি মিডিয়া না থাকার কারণে। সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশ নিজেদের ন্যাটিভ ভাষা চেঞ্জ করে ইংরেজিকে গুরুত্ব দিয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করতে হলে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজন।

সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের সঞ্চালনায় উক্ত সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মীর মোহাম্মদ জসিম প্রমুখ। সভায় শিক্ষা সংস্কারে ধারণাপত্র পাঠ করেন কাউন্সিল ফর দ্য রাইটস অব একাডেমিয়ার আহ্বায়ক বেলাল হোসেন। ১২ দফা সংস্কার প্রস্তাব পেশ করেন সংগঠনের মুখপাত্র প্লাবন তারিক।

আরএএস/এমআইএইচএস