‘বই সংশোধন কমিটিতে প্রয়োজনে আরও বিশেষজ্ঞ আসবেন’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তা বাতিল করে আগের শিক্ষাক্রমে ফিরছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫ সালে শিক্ষার্থীদের যে বই দেওয়া হবে, তাতেও সংশোধনী আনা হচ্ছে। একেবারে শেষ সময়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পাঠ্যবই সংশোধন-পরিমার্জনে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় সরকার। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার কথা। ঠিক এমন সময়ে দাবি উঠেছে—কমিটিতে কোনো ইসলামিক স্কলার নেই। কমপক্ষে দুজন ইসলামের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে যুক্ত করার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন-সমাবেশও করেছে কয়েকটি সংগঠন। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে কমিটিতে রাখা নিয়েও নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বিতর্ক ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। তারা জানিয়েছেন, কমিটির প্রধান যিনি আছেন, তিনি ধর্মপ্রাণ একজন মানুষ। পাশাপাশি মাদরাসা বোর্ডে দীর্ঘদিন কাজ করা একজন সদস্যও এ কমিটিতে রয়েছেন। প্রয়োজনে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজে পড়াশোনা করা বা কওমি মাদরাসার বিশেষজ্ঞ কাউকে কমিটিতে আনা হতে পারে। সেই সুযোগও রয়েছে।
পরিমার্জন কমিটিতে যারা আছেন
পাঠ্যবই সংশোধন পরিমার্জনে সরকারের গঠিত ১০ সদস্যের কমিটির প্রধান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম (বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক), সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আখতার খান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান, সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী এবং সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক এ এফ এম সারোয়ার জাহান। এছাড়া সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়ানুর রহমান।
কমিটি কী কাজ করছে, কতদূর এগিয়েছে
২০২২ সালের বইগুলো পরিমার্জনে কাজ করছে কমিটি। অতিরঞ্জিত ইতিহাস এবং কিছু অসংগতিপূর্ণ টেক্সট পরিমার্জন করছেন তারা। একেবারে আমূল পরিবর্তনের মতো কোনো কাজই এ কমিটি করছে না বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কমিটির অন্যতম সদস্য ও দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা সংস্কারে কাজ করা গবেষক রাখাল রাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের যে কমিটি, তাকে বিশাল ফিগার হিসেবে দেখানো হচ্ছে। সবার ধারণা যে আমরা হয়তো অনেক কাজের সুযোগ পাচ্ছি। আসলে তা নয়। এ কমিটি বিরাট কিছু করছে না। শুধু টেবিলভিত্তিক কিছু পরিমার্জনের কাজ করছি। ২০২২ সালের বইগুলোই শিক্ষার্থীদের হাতে যাবে। সেখানে একেবারে কিঞ্চিৎ কিছু পরিবর্তন থাকতে পারে।’
সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ কতদূর সম্পন্ন হয়েছে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘৩০ তারিখের (সেপ্টেম্বর) মধ্যে আমাদের বিষয়ভিত্তিক টেবিলের কাজ শেষ করার একটা টার্গেট ছিল। সেটা আমরা শেষ করার কাছাকাছি। আশা করি দ্রুত হয়ে যাবে।’
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘পরিমার্জন কমিটি কিছু কাজ শেষ করে জমা দিয়েছে। আরও কিছু কাজ চলমান। শিগগির আমরা হয়তো সেটা পাবো।’
সদস্যদের নিয়ে ‘আপত্তি’, ইসলামিক স্কলার রাখার দাবি
খুব স্বল্প পরিসরে কাজের সুযোগ পেলেও কমিটিতে কয়েকজনকে রাখা নিয়ে ইসলামিক বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রাকে রাখার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলছেন ধর্মীয় নেতারা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের দাবি এবং আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রধান শায়খ আহমাদুল্লাহ বক্তব্য দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন। তারা জোরালো দাবিও তুলছেন।
বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে চাননি সামিনা লুৎফা নিত্রা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবাই সবার মতামত জানাবে। এ নিয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া বা অভিমত নেই।’
- আরও পড়ুন
জাতীয় পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি প্রত্যাখ্যান হেফাজতে ইসলামের
পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে দুজন আলেম অন্তর্ভুক্ত চায় জামায়াত
পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটিতে ইসলামি বিশেষজ্ঞ না থাকায় উদ্বেগ
ধর্মীয় নেতাদের বিভিন্ন দাবি ও সমালোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা গবেষক ও কমিটির সদস্য রাখাল রাহা বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা এক ধরনের ক্রাইসিস। দীর্ঘদিনের বঞ্চনার ফলও বলা যেতে পারে। আরেকটা হতে পারে তারা না বুঝে দাবি করছেন। আরেকটা হতে পারে বিশেষ কোনো ইন্ধন পেয়ে এটা করছেন।’
কমিটিতে ইসলামিক স্কলার যুক্ত করার প্রয়োজন বা সুযোগ আছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একেবারে সাধারণ চোখে দেখলে আমরা যেটুকু বুঝি যে, এখানে হয়তো দেখা যাবে ধর্মীয় কাউকে রাখা হয়নি। কিন্তু এ কমিটির যিনি প্রধান, তিনি কিন্তু একজন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম, অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। ইসলামের নানা বিষয়ে ভালো ধারণা পোষণ করেন বা রাখেন বলে আমি জেনেছি। তাছাড়া মাদরাসা পরিচালনা বোর্ডের সাবেক একজন আছেন।’
‘তারপরও আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন বা জানেন অথবা কওমি মাদরাসার অভিজ্ঞ কাউকে তো যুক্ত করার সুযোগ আছে। কমিটি প্রয়োজন মনে করলে তাদের কো-অপ্ট (যুক্ত) করতে পারে। তাতে তো কোনো সমস্যা দেখছি না’ বলে উল্লেখ করেন রাখাল রাহা।
বিষয়টি জানতে কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কমিটি গঠনের সময়ই বলা হয়েছে, কমিটিতে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের কো-অপ্ট করা যাবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করে দেখবো। প্রয়োজনে কমিটিতে ইসলামিক স্কলার রাখা হবে। এবারের যে কাজ, তা একেবারে প্রাথমিক। তারপরও আমরা বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখছি।’
এএএইচ/এমএএইচ/জেআইএম
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ পদ বাড়িয়ে পুনরায় ফল প্রকাশের দাবিতে রাতভর প্রার্থীদের অবস্থান
- ২ ক্লাস শুরুর তিনমাস পর বাজারে আসছে একাদশের ৫ বই
- ৩ ভর্তিতে লটারির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, নেপথ্যে কী?
- ৪ এডব্লিউই প্রোগ্রাম থেকে স্নাতক হলেন ৯০ উদীয়মান নারী উদ্যোক্তা
- ৫ সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবসম্মত নয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা