ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

জাফর ইকবাল

ভার্চুয়াল ক্লাসের নামে শিশুদের হাতে মোবাইল দিয়ে সর্বনাশ করেছি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:০০ পিএম, ১১ জুন ২০২৪

মহামারি করোনাভাইরাসের সময়ে শিশুদের হাতে ভার্চুয়াল ক্লাসের নামে মোবাইল ফোন তুলে দিয়ে সর্বনাশ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

তিনি বলেন, ‘করোনাকালে কী সর্বনাশ যে হয়েছে, সেটা খুব ভালো করে জানি। এখন সবাই বলছেন সর্বনাশ! বাচ্চাদের হাতে স্মার্টফোন দেওয়া যাবে না। অথচ করোনাকালে সবার হাতে একটা স্মার্টফোন তুলে দিয়েছি আমরা। সে স্মার্টফোন আর হাত থেকে নামেনি। এখনো আছে তাদের হাতে। সেটা দিয়ে কাজের কাজ কী হচ্ছে, সেটা আমি জানি না। এটা দিয়ে আমরা সর্বনাশ করেছি।’

মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলনে’ তিনি এসব কথা বলেন। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করা দুই শতাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান।

ফেল করা শিক্ষার্থীদের কোনো দোষ-ত্রুটি নয় উল্লেখ করে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘যারা আজ এখানে এসেছে, তাদের কোনো দোষ নেই। অথচ তাদের পেছনে একটা সিল দিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এরা পাস করতে পারেনি। এটা কিছু হলো? আমি শিক্ষক, লেখাপড়ার বিষয়ে সব জানি। তোমাদের পাঠ্যবইয়েও আমার নাম আছে দেখবে। অনেক বই লেখার সঙ্গে আমি জড়িত। এখনো কোনো বই লেখা নিয়ে কাজ করি। আমাদের দেশের লেখাপড়ার সমস্যাটা কী, তা খুবই ভালো করে জানি।’

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা মন খারাপ করো না। আমাদের দেশের পড়াশোনার সিস্টেমটা ভালো না। এটা খুবই ভালো করে আমি জানি। কেউ যখন সাকসেসফুল বা সাফল্যের কথা বলে, সেটা আসলে সে পরীক্ষাটা ভালো দিয়েছে। আর কিচ্ছু না। কেউ পরীক্ষাটা ভালো দেয়, কেউ খারাপ দেয়। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সেটার অনেক কারণ তো আমরা খুঁজেও দেখি না।’

অবসরপ্রাপ্ত এ অধ্যাপক বলেন, ‘এবার আমাদের দেশে তিন লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। অথচ পৃথিবীতে এমন দেশও আছে, যেখানে তিন লাখ মানুষও নেই। তিন লাখ শিশুকে বলা হয়েছে যে, তোমরা পরীক্ষায় পাস করোনি। আমরা চাই, এ তিন লাখ শিশু যেন আবার পরীক্ষা দেয় এবং উত্তীর্ণ হয়।’

ভার্চুয়াল ক্লাসের নামে শিশুদের হাতে মোবাইল দিয়ে সর্বনাশ করেছি

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি লিখে দিতে পারি, তোমরা যদি আবার পরীক্ষা দাও, নিশ্চয় উত্তীর্ণ হবে। কারণ পাস না করার কোনো কারণ নেই। আমাদের দেশে ফেল করতে হলে কষ্ট করতে হয়। পরীক্ষায় ফেল করাটা এত সহজ নয়। তোমরা যারা ফেল করেছো, নিশ্চয় কোনো না কোনো কারণ ঘটে গেছে। কারণ না ঘটলে তোমরা ফেল করবে না।’

ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের ব্যবহার ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ফেসবুকের খুব বিরোধী। কারণ একটাই মাত্র জীবন। এটাকে তো নষ্ট করা যাবে না। আমি যদি বসে বসে একটা স্ক্রিনে তাকিয়ে দুনিয়া দেখি, সেটা কিছু হলো কি না? দুনিয়া কত সুন্দর, সেটা নিজের চোখ দিয়ে দেখবো নাকি শুধু স্ক্রিনে যতটুকু দেখাবে সেটা দেখবো?’

শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, ‘পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হয়, আমি সবখানেই যাই। আমার কাজই হলো যারা পুরস্কার পান না, তাদের সান্ত্বনা দেওয়া। তাদের বোঝাই যে, দেখো আমিও জীবনে পুরস্কার পাইনি। পুরস্কার না পেলেও কিচ্ছু আসে যায় না। পুরস্কার পাওয়ার চেয়ে পুরস্কার দেওয়ার মধ্যে আনন্দ বেশি। আমি অনেক বেশি পুরস্কার দিয়েছি।’

শ্রেণিকক্ষের চেয়ে বাইরে শিক্ষার উপাদান বেশি জানিয়ে জনপ্রিয় এ লেখক বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম। শিক্ষার্থীদের বলতাম- ক্লাসে আমরা যেটুকু তোমাদের শেখাই, সেটা হলো পাঁচ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশ তোমাদের আশপাশ দেখে জীবনের জন্য শিখতে হবে। তাহলে তুমি সত্যিকারের শিক্ষার্থী হবে। তোমরা ফেল করেছো মানে ওই ৫ শতাংশে আটকা পড়েছো। বাকি ৯৫ শতাংশে তোমরা আটকা পড়োনি।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। সকালের অধিবেশনে অতিথি ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র পরিচালক নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, অভিনেতা ও সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ, সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দ, এভারেস্ট বিজয়ী এম এ মুহিত প্রমুখ।

এএএইচ/কেএসআর/এমএস