‘আমলাদের আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি হাস্যকর’
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিকে ‘উদ্ভট’ ও ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তাদের এমন প্রস্তাবের খবরে আতঙ্কিত বলেও জানান তিনি।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ভাষ্য, ‘এ দাবিটা এতই হাস্যকর যে, এটাকে গুরুত্ব দিয়ে যে আলোচনা আমরা করছি, মানুষ করছে; তা দেখে-শুনেই একজন শিক্ষক হিসেবে আমি চরম বিব্রতবোধ করছি।’
আমলার সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরা প্রস্তাব প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে এমন প্রতিক্রিয়া জানান ড. জাফর ইকবাল।
বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে এবং হচ্ছে, সে কারণেই কি আমলাদের অভিনব এ দাবি—এমন প্রশ্নের জবাবে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘কেন, কী কারণে তা আমি জানি না। আমি যেটুকু বুঝি—আমাদের এ দেশটাকে বিভাজন করা যাবে না। আরও বৈষম্যের মুখে ঠেলে দেওয়া যাবে না। সবার সমান অধিকার রাখতে হবে। সমাজের একেবারে হতদরিদ্র মানুষ থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ পদধারী মানুষের সমান অধিকারই থাকবে।’
আমলার সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় দাবির খবরে আতঙ্কিত জানিয়ে এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘কাজেই আমলারা যে এ ধরনের একটা আবেদন করেছেন, এটা জেনেই তো আমি আমলাদের সম্পর্কে চরম সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করেছি। তাদের আদৌ কোনো সৎ উদ্দেশ্য আছে কি না। এদের ওপর নির্ভর করে আমাদের দেশ চলছে, এটা নিয়ে আমি আতঙ্ক অনুভব করছি।’
আমলারা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে এ দাবি করেন, তাহলে খুবই আতঙ্কের বিষয়। একবার ভাবুন, এমন বৈষম্য আর উদ্ভট চিন্তা-চেতনা নিয়ে যারা চলছেন, সেই মানুষগুলো আমাদের দেশ চালাচ্ছেন।
‘দেখুন, আমি চিন্তাই করতে পারছি না। আমার কথা হচ্ছে আমলারা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে এ দাবি করেন, তাহলে খুবই আতঙ্কের বিষয়। একবার ভাবুন, এমন বৈষম্য আর উদ্ভট চিন্তা-চেতনা নিয়ে যারা চলছেন, সেই মানুষগুলো আমাদের দেশ চালাচ্ছেন। এটা কি ভাবা যায়’ প্রশ্ন রাখেন ড. জাফর ইকবাল।
আরও পড়ুন
- ‘আমলার সন্তানদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসেপ্টটা নিতে পারছি না’
- ‘বিসিএস বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের প্রস্তাব মজা করে বললেও বাস্তবতা আছে
- ‘সব সুবিধা আমলারা পান, শিক্ষার উন্নয়ন ঘটবে কীভাবে?’
সরকার আমলাদের এমন দাবিকে প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব দেয়নি। সচেতন মহলও সমালোচনা করছেন। তবে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনেক সময় সমালোচিত অনেক দাবিও সরকার আমলাদের চাপে পূরণ করে। কোনোভাবে কী ভবিষ্যতে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়ে যেতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে অবসরপ্রাপ্ত এ অধ্যাপকের সাফ জবাব, ‘আপনি নিশ্চিত থাকেন, আমার মনে হয় যে এটা বাংলাদেশে কোনোভাবেই হবে না। কারণ আমলা হোক আর ভিক্ষুক হোক, দাবি-দাওয়া উদ্ভট হওয়ারও তো একটা লিমিটেশন (সীমাবদ্ধতা) থাকে। এটা তো সব লিমিটের বাইরে।’
জানা যায়, গত মার্চে ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ডিসিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমলাদের সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব তুলে ধরেন। দুই মাস পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন খোদ জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও। যদিও আমলাদের সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কোনো চিন্তা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
আমার মনে হয় যে এটা বাংলাদেশে কোনোভাবেই হবে না। কারণ আমলা হোক আর ভিক্ষুক হোক, দাবি-দাওয়া উদ্ভট হওয়ারও তো একটা লিমিটেশন (সীমাবদ্ধতা) থাকে। এটা তো সব লিমিটের বাইরে।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে, সেখানে (ডিসি সম্মেলনে) অনেকগুলো বিষয় এসেছিল। প্রধানমন্ত্রীর সামনে যখন ডিসিরা আসেন, তখন তারা দেশের নির্বাহী প্রধানদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগটা পান। এটা তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ। অনেক বিষয় সেখানে আসে। অনেক চাওয়া, অনেক পাওয়া, অনেক প্রত্যাশার বিষয় উঠে আসে। সেখানে বিভিন্নজন বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করেছেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্পেশাল কারও জন্য একটা ইউনিভার্সিটি...। হ্যাঁ, আর্মিরা ইউনিভার্সিটি পরিচালনা করছে বা অন্যরা করছে। সেক্ষেত্রে তারা বলেছেন। আপাতত আমাদের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, সে কাজগুলো আমরা করছি। শুধু সরকারি কর্মচারীদের জন্য আলাদাভাবে এ কনসেপ্টটা আমরা নিতে পারছি না।’
এএএইচ/এএসএ/এমএস
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সদস্য হলেন আবুল কাসেম ফজলুল হক
- ২ উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে প্রকল্পে ধীরগতি, ত্রিপক্ষীয় সভা করবে ইউজিসি
- ৩ চাকরির বয়স দুই বছর না হলে মাদরাসা শিক্ষকের বদলির সুযোগ নেই
- ৪ পাঠ্যবই ছাপাতে পাল্টা পদক্ষেপ এনসিটিবির, বেঁধে দিলো সময়সীমা
- ৫ ২৫ মার্চের আগে বই ছাপা সম্ভব নয় জানিয়ে চিঠি, পরক্ষণে চাইলেন ক্ষমা