‘গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই এখন নৈতিকতা বিবর্জিত’
শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই এখন নৈতিকতা বিবর্জিত বলে মন্তব্য করেছেন লেখক, গবেষক, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার যে অবক্ষয় ঘটে গেছে এজন্য প্রধানতম দায়ী মূলত রাষ্ট্র। রাষ্ট্র তার নৈতিক অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলেই শিক্ষা, সমাজে এমন অবক্ষয় ঘটছে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মতামত গ্রহণ করা হয় এই শিক্ষাবিদের।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষার সঙ্গে বাণিজ্য একীভূত হলে সেটা আর শিক্ষা থাকে না। এমন শিক্ষায় ব্যক্তি বা সমাজের আদৌ কোনো নৈতিক অর্জন থাকে না। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানির মতো যেসব ঘটনা ঘটছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মূলত, শিক্ষকরা নৈতিক অবস্থানে থেকে আর শিক্ষা দিচ্ছেন না।
শিক্ষা ও শিক্ষকের দায় নিয়ে আমাদের মধ্যে আর সঠিক উপলব্ধিও নেই। একটি সমাজ বা রাষ্ট্র যে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে থাকার কথা, আমরা সে শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। জাতি হিসেবে এটিই আমাদের বড় ব্যর্থতা বলে মনে করি।
বিভাজনের শিক্ষাব্যবস্থাই সমাজকে বিভাজিত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোটা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুধু উচ্চশিক্ষাকে আলাদা করে ভাবলে ঠিক হবে না। মূলত শিক্ষাব্যবস্থার গোড়া নষ্ট করে ফেলেছে রাষ্ট্র। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা তিন ভাগে বিভক্ত। এমন বিভাজন ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও ছিল না।
আরও পড়ুন
- যৌন নিপীড়নের অভিযোগ/জবি শিক্ষক ইমনকে বহিষ্কার, চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি
- ‘পরীক্ষা’ ফিরলেও থাকছে না নম্বর, প্রশ্নপত্র হবে নতুন ধাঁচে
বাংলা, ইংরেজি, মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষা সমাজকে স্পষ্টত বিভক্ত করে ফেলছে। শিক্ষা দিয়ে এমন বিভাজন বিশ্বের আর কোথাও নেই। অথচ, আমাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করার কথা এবং সর্বত্র মাতৃভাষা চালু থাকার কথা। দিন যাচ্ছে, এই বিভক্তি বাড়ছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রচলন হবে। তা হলো না। তিন ধারায় ভাগ হয়ে সমাজে বৈষম্য বাড়িয়ে দিলো।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরির প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাও অঙ্গীকার ছিল। আর এটির পত্তন দেওয়ার কথা শিক্ষার মধ্য দিয়েই। আমরা তা পারিনি। শুরুতেই আমাদের পথ হারাতে হয়েছে। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যে অনৈতিক, অন্যায্য ঘটনা ঘটছে, তা বিচ্ছিন্ন বলা যাবে না। সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ফল এটি।
‘শিক্ষাকে আমরা ক্রমাগতভাবে পণ্য বানিয়ে ফেলছি। এটি এখন বাজারে বিক্রি হওয়ার মতো। যার টাকা আছে সে কিনতে পারছে। যার টাকা নেই সে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। অথচ, শিক্ষা হওয়ার কথা সর্বজনীন। রাষ্ট্র নিজেই শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করছে। ব্যক্তিকে বাণিজ্য করতে রাষ্ট্র সহায়তা করছে। এমন শিক্ষাব্যবস্থা জারি রেখে কী আর শিখবে মানুষ!
শিক্ষাকে আমরা ক্রমাগতভাবে পণ্য বানিয়ে ফেলছি। এটি এখন বাজারে বিক্রি হওয়ার মতো। যার টাকা আছে সে কিনতে পারছে। যার টাকা নেই সে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। অথচ শিক্ষা হওয়ার কথা সর্বজনীন। রাষ্ট্র নিজেই শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করছে। ব্যক্তিকে বাণিজ্য করতে রাষ্ট্র সহায়তা করছে। এমন শিক্ষাব্যবস্থা জারি রেখে কী আর শিখবে মানুষ
অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। নারী শিক্ষারও ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটছে। স্বাধীনতার পর এমন হার ছিল না। এটি অবশ্যই সফলতা। এমন শিক্ষা অর্জনের সঙ্গে মানুষের চিন্তার গুণগত পরিবর্তন কতটুকু হলো, তা অবশ্যই ভাবনার আছে।
আমরা মানবিক ও বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। পুঁজি শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যতদিন পুঁজির দৌরাত্ম্য থাকবে ততদিন আমরা নৈতিক শিক্ষা থেকে দূরে থাকবো। এজন্য সামগ্রিক চিন্তার পরিবর্তন দরকার। রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতির পরিবর্তন ছাড়া আপনি শিক্ষার মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন না।’ বলছিলেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
এএসএস/এএসএ/জেআইএম
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে ভিসিদের বৈঠক শনিবার, আসতে পারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
- ২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময় ৫ ঘণ্টা করার দাবি শিক্ষকদের
- ৩ লটারির ফলাফলে এক স্কুলের মেধাতালিকায় তিনবার এক ছাত্রীর নাম!
- ৪ বিসিএসে বয়সসীমায় ‘বৈষম্য’, ৩৪ বছরের দাবি চিকিৎসকদের
- ৫ রামপুরায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-মশাল মিছিল