ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

বয়সের মারপ্যাঁচে স্কুলে যেতে অপেক্ষা বাড়ছে খুদে শিক্ষার্থীদের

আল-আমিন হাসান আদিব | প্রকাশিত: ০৯:০৮ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২৩

নাফিউর রহমানের বয়স ছয় বছর ছুঁই ছুঁই। একটি প্রিপারেটরি স্কুলে এক বছর পড়েছে সে। এবার ভালো স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু বয়সের কড়াকড়িতে ছেলের ভর্তি নিয়ে বিপত্তিতে পড়েছেন নাফিউরের মা জাকিয়া সুলতানা রেবেকা। কোনোভাবেই সন্তানকে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করাতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে জানতে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পরামর্শ চেয়ে পোস্ট করছেন। ঘুরেছেন বেশ কয়েকটি স্কুলেও। এখনো আবেদন করতে পারেননি তিনি।

জাকিয়া সুলতানা জাগো নিউজকে জানান, তার ছেলের জন্ম ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি। ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি ছয় বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে নাফিউরের ছয় বছর পূর্ণ হতে ছয়দিন বাকি থাকায় অনলাইনে ভর্তির আবেদন সাবমিট করা যাচ্ছে না।

jagonews24

আরও পড়ুন: এবার যথাসময়েই শিক্ষার্থীদের নতুন বই দিতে চায় এনসিটিবি

তিনি বলেন, ‘মাত্র ছয়দিন বয়সের ঘাটতিতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে ছেলেটাকে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। ওর চেয়ে বয়সে যারা মাত্র এক সপ্তাহ বা ১০ দিন বড়, তারা এক বছর এগিয়ে গেল। অথচ আমার ছেলেটা পিছিয়ে গেল। এটা কোনো নিয়ম হতে পারে না। সরকারের এক-দুই সপ্তাহ বয়সের ছাড় দেওয়া উচিত ছিল।’

ছেলের জন্ম ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি। ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি ছয় বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে নাফিউরের ছয় বছর পূর্ণ হতে ছয়দিন বাকি থাকায় অনলাইনে ভর্তির আবেদন সাবমিট করা যাচ্ছে না

শুধু নাফিউর নয়, অল্প কয়েকদিন বয়স কম হওয়ায় প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে এমন জটিলতায় পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। অভিভাবকরা বয়সের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের এমন কড়াকড়িতে ক্ষোভ জানিয়েছেন।

জোসনা আরা সিঁথি নামে আরেক অভিভাবক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার মেয়ের জন্ম ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি। জন্মসনদে ওই তারিখই আছে। মাত্র দুদিনের জন্য এখন স্কুলে ভর্তি হতে সমস্যা হচ্ছে। এক-দুদিনের জন্য এভাবে ভর্তি না নেওয়াটা কোন ধরনের যুক্তি?’

jagonews24

আসমা সূচনা নামে এক অভিভাবক ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার মেয়েকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে চাই। জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী জন্মতারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। আমি কি অ্যাপ্লাই করতে পারবো?’ তার পোস্টের নিচে ভর্তি নীতিমালার বিষয়টি উল্লেখ করে অনেকে কমেন্টে জানিয়েছেন যে তিনি পারবেন না। এতে হতাশ আসমা।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকে ১৫-৩০ নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা-মূল্যায়ন

৫-৭ দিন বা ১০ দিন বয়সের ঘাটতিতে ভর্তি আবেদন করতে না পারা আরও অন্তত ১০-১২ জন অভিভাবক জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা প্রত্যেকে এক-দুই সপ্তাহ বয়সের ঘাটতি থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তারা বলছেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ মেনে চলতি বছরও সরকারি-বেসরকারি স্কুল এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি নীতিমালা করা হয়েছে। নীতিমালায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ছয় বছর পূর্ণ হতে হবে।

jagonews24

দ্বিতীয় শ্রেণিতে সাত বছর এবং তৃতীয় শ্রেণিতে আট বছর বয়সের বেশি হতে হবে। এ তিন শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর বয়স একদিন কম হলেও আবেদন করতে পারবে না। এক্ষেত্রে বয়সে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আর বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় নির্ধারণ করবে।

এক অভিভাবক ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার মেয়েকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে চাই। জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী জন্মতারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। আমি কি অ্যাপ্লাই করতে পারবো?

ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব ও মাউশির মাধ্যমিক বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণ করে ভর্তি নীতিমালা করা হচ্ছে। ওই বছর যারা প্রথম শ্রেণিতে ছয় বছর বয়স মেনে ভর্তি হয়েছিল, তারা এবার চতুর্থ শ্রেণিতে উঠবে। অর্থাৎ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে বয়সসীমা নিয়ে নীতিমালার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির ক্ষেত্রে নির্ধারিত বয়সের একদিন কম হলেও সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকে বৃত্তি পেল ৮২ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী

চতুর্থ শ্রেণির পর বয়সের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যারা চতুর্থ শ্রেণি পর্যায়ে রয়েছে, তাদের সময় প্রথম শ্রেণিতে ছয় বছর পূর্ণ করে ভর্তির নিয়ম ছিল না। অনেকে বয়স কিছুটা কম নিয়েও ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। সেজন্য তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি শিথিল করে দেখা হচ্ছে। আর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে নীতিমালা মেনে ভর্তি করানো হচ্ছে। যেহেতু অনলাইনে সব প্রক্রিয়া, তাই কারও বয়স কম হলেও আবেদন করার সুযোগ থাকছে না।

এদিকে, মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তি আবেদন করা যাবে। গত ২৪ অক্টোবর এ আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণের জন্য ভর্তির আবেদন ফরমের সঙ্গে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হচ্ছে। ভর্তির আবেদন ফি ১১০ টাকা। টেলিটকের মাধ্যমে এ ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে।

jagonews24

শিক্ষার্থী প্রতি ক্লাস্টারের একই আবেদনে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয়ে ভর্তির পছন্দক্রম দিতে পারছে। তবে ডাবল শিফট স্কুলে উভয় শিফট পছন্দ করলে দুটি পছন্দক্রম সম্পাদন হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

এদিকে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ওই শ্রেণির মোট আসনের ১০ শতাংশ কোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। ঢাকা মহানগরের সরকারি বিদ্যালয় সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।

আরও পড়ুন: পৃথিবী দ্রুত পাল্টে গেছে, আমাদের শিক্ষাটা পাল্টায়নি

ডিজিটাল লটারি ও ফলাফল যেভাবে
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কারিগরি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান আবেদন ও ডিজিটাল লটারির যাবতীয় তথ্য ঢাকা মহানগরের ভর্তি কমিটির কাছে জমা দেবে। এরপর মাউশির তত্ত্বাবধানে ঢাকা মহানগরের ভর্তি কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে লটারির কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ মেনে চলতি বছরও সরকারি-বেসরকারি স্কুল এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি নীতিমালা করা হয়েছে। নীতিমালায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ছয় বছর পূর্ণ হতে হবে

সারাদেশের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনলাইনে প্রাপ্ত আবেদন ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত প্রথম লটারির সমসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকা নির্বাচন করতে হবে। পরে প্রয়োজন হলে লটারির মাধ্যমে দ্বিতীয় অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।

jagonews24

আগামী ২৬ নভেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বেলা ১১টায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আনুষ্ঠানিকভাবে লটারির ফলাফল প্রকাশ করবেন।

২ শতাংশ পোষ্য কোটা
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং অধীনস্থ দপ্তর বা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে মহানগর, বিভাগীয় ও জেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। যদি আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হয় সেক্ষেত্রে তাদের নিজেদের মধ্যে লটারি অনুষ্ঠিত হবে।

জমজ ভর্তির নিয়ম
কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সহোদর বা সহোদরা বা যমজ ভাই-বোন যদি আগে থেকে অধ্যয়নরত থাকে, সংশ্লিষ্ট ভর্তি কমিটি তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে এ সুবিধা কোনো দম্পতির সর্বোচ্চ দুই সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

এএএইচ/এমকেআর/এমএস