মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল
ভর্তি-শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য, অধ্যক্ষের দুর্নীতি তদন্তের দাবি
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীর দুর্নীতি-অনিয়ম তদন্তের দাবি জানিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক ফোরাম। একইসঙ্গে তারা বিতর্কিত বর্তমান গভর্নিং বডির সবাইকে পদত্যাগ করার আহ্বানও জানান।
সোমবার (৯ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। এতে সই করেছেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিভাবক ফোরামের চেয়ারম্যান ফাহিম উদ্দিন আহমদে ও সাধারণ সম্পাদক রোস্তম আলী।
বিবৃতিতে অভিভাবক ফোরামের নেতারা উল্লেখ করেন, অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশিদীর আমলের সব কর্মকাণ্ড ‘অবৈধ’। তার ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড, অবৈধ ভর্তি ও নিয়োগ–বাণিজ্য’ তদন্ত করে শাস্তির আওতায় না আনা পর্যন্ত যাবতীয় পাওনা পরিশোধ না করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এতে আরও বলা হয়, অধ্যক্ষের সহযোগিতায় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ লোভ-লালসা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে নির্যাতন করেন। ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের অভিযোগে মামলাও করেছেন ছাত্রীর বাবা। মামলায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাকে ২ নম্বর আসামি করায় এবং শিক্ষা প্রশাসন ও অভিভাবকদের চাপের মুখে গত ২১ সেপ্টেম্বর শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য হন।
বিবৃতিতে ‘বিতর্কিত’ বর্তমান গভর্নিং বডির সবার পদত্যাগ দাবি করে তারা বলেন, অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশিদী ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে লটারি ছাড়াই বিভিন্ন শ্রেণিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তি করিয়ে কোটি কোটি টাকার ভর্তি-বাণিজ্য করেছেন। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অনুমোদন ছাড়াই ২০২৩ সালে ৫৯ জন শিক্ষককে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতি করেছেন।
অভিভাবকদের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ফাওজিয়া রাশেদী বলেন, ‘করুক তদন্ত। আমার তো কোনো আপত্তি নেই। দায়িত্বে থাকাকালে আমি নিয়মের বাইরে কিছুই করিনি। গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত এবং অধ্যক্ষ হিসেবে আমার যতটুকু দায়িত্ব, সেটুকুই পালন করেছি।’
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, ‘আমি এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিভাবকরা যদি লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে দেন, তখন বিষয়টি ভেবে দেখবো।’
এদিকে, দাতা সদস্যের সঙ্গে ছাত্রীর বিয়ের ঘটনায় সমালোচনা ও মামলা কাঁধে নিয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদ ছেড়েছেন ফাওজিয়া রাশেদী। যদিও তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। গভর্নিং বডির সভায় তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। বিষয়টি জানাজানির পর অভিভাবক ফোরাম থেকে ফাওজিয়া রাশেদীর দুর্নীতি-অনিয়ম তদন্ত করার দাবি তোলা হয়।
জানা গেছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ে করেন প্রতিষ্ঠানটির দাতা সদস্য মুশতাক আহমেদ। ঘটনা জানাজানি হয় জুনের শুরুতে। এ ঘটনায় ১ আগস্ট মুশতাকের বিরুদ্ধে প্রলোভন ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ছাত্রীর বাবা। মামলায় সহযোগিতার অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকেও আসামি করা হয়।
৮ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়। গভর্নিং বডির সদস্য পদ থেকে সরে যান মুশতাক। এরপর ২০ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে দুই মাসের ছুটিতে যান অধ্যক্ষ ফাওজিয়া। ওই সময়ই তিনি পদত্যাগপত্র দেন বলে জানিয়েছেন গভর্নিং বডির দুজন সদস্য।
এএএইচ/এমআরএম/জিকেএস