‘পরীক্ষাবিহীন’ পড়াশোনায় আস্থা নেই অভিভাবকদের
শিক্ষার্থীরা পড়বে, মুখস্ত করবে এবং পরীক্ষা দেবে। উত্তরপত্রে যা লিখবে, তা দিয়েই মূল্যায়ন। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘদিনের চিত্র এটি। তবে নতুন শিক্ষাক্রমে তা পুরোপুরি পাল্টে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন প্রথমে কাজ করবে, বুঝবে, তারপর শিখবে। তাদের এসব কার্যক্রম দেখে মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা। থাকবে না কোনো পরীক্ষা। তবে এই পরীক্ষা না থাকা নিয়েই চরম ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। ‘পরীক্ষাবিহীন’ পড়াশোনায় কোনো অভিভাবকই যেন আস্থা রাখতে পারছেন না। এমনকি শিক্ষকরাও এ নিয়ে ‘গ্যাঁড়াকলে’। স্বস্তি নেই তাদেরও।
চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা চলছে নতুন শিক্ষাক্রমে। এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, তাদের সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে, আসছে। কিছুই পড়ছে-লিখছে না। হোমওয়ার্ক, প্রাইভেট-টিউশনিও চাইছে না। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যা শিখছে, বাড়িতে এসে যা করছে তা কোনো ‘পড়াশোনা নয়’ বলে মনে করছেন তারা। এজন্য নতুন এ শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিও জানাচ্ছেন অভিভাবকরা। প্রয়োজনে আন্দোলনে নামার বা আইনি লড়াইয়ের জন্য ফেসবুকে গ্রুপ খুলে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ/ ছবি- জাগো নিউজ
স্বস্তি নেই শিক্ষকদেরও। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান করছেন এমন শিক্ষকদের অভিযোগ, এ শিক্ষাক্রমের কারিকুলাম ও পাঠ্যবই সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে সাজানো। পাঠ্যক্রম অনুযায়ী- শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দেওয়ার কোনো সুযোগই থাকছে না। শিক্ষার্থীদের যেসব কাজ দেওয়া হচ্ছে, তা স্কুলেই শেষ হচ্ছে। বাসায় গিয়ে পড়ার বা হোমওয়ার্ক করার প্রয়োজন নেই। অথচ অভিভাবকরা প্রতিদিন এসে শিক্ষকদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করছেন। বাচ্চারা কেন বাসায় পড়ছে না, হোমওয়ার্ক কেন দেওয়া হচ্ছে না- তা নিয়ে অনেক সময় শিক্ষকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন অভিভাবকরা।
আরও পড়ুন>>> কেরানি নয়, দক্ষ ও স্মার্ট নাগরিক তৈরি করবে নতুন শিক্ষাক্রম
তবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা অভিভাবক ও শিক্ষকদের অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাঁধ থেকে পরীক্ষার বোঝা নামিয়ে হাতে-কলমে শেখানোর প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতেই নতুন এ শিক্ষাক্রম। শিক্ষার্থীরা এ পদ্ধতিতে পড়াশোনা উপভোগ করছে। এখন অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। প্রশিক্ষণের ঘাটতি দূর হলে শিক্ষকদেরও ‘সংশয়’ দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উদ্বিগ্ন অভিভাবক, শিক্ষার মান নিয়ে ‘সংশয়’
রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুহিন পারভেজ। চলতি বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা করছে রুহিন। ছুটিতে তাকে মুরগি পালনের কাজ দেন শিক্ষক। ফলে ছেলের জন্য খাঁচায় মুরগি কিনে এনে দেন রুহিনের মা লিমা আক্তার। মুরগি পালনের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালে তা মূল্যায়ন করে নম্বর দেবেন শিক্ষক। মুরগি পালনের কাজ নিয়ে পরিবারে উচ্ছ্বাস এবং হাসি-ঠাট্টা থাকলেও ছেলের পড়াশোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন লিমা আক্তার।
শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ/ ছবি- জাগো নিউজ
জাগো নিউজকে লিমা আক্তার বলেন, ‘সব নম্বর দেবেন শিক্ষকরা। বাচ্চারা পড়বেও না, লিখবেও না। আমার ছেলে বাসায় এসে পড়ার টেবিলে বসছে না। একাজ-সেকাজ নিয়ে ব্যস্ত। পড়ার কথা বললেই বলে- যা করছি, তা দেখে স্যাররা নম্বর দেবেন। এটা কেমন কথা? বাচ্চারা পড়বে না, লিখবে না- এ কেমন পদ্ধতি? একেবারেই পরীক্ষা বাতিল করাটা মোটেও উচিত হয়নি। এটা বিবেচনা করতে শিক্ষামন্ত্রীসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন>>> ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা নতুন শিক্ষাক্রমে: শিক্ষামন্ত্রী
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে ভালো করছে, কোন বিষয়ে খারাপ করছে তা জানার সুযোগ নেই। এটাকে শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে অভিভাবকদের অন্ধকারে রাখা বলে মনে করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা মো. শাহ আলম খান।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘অভিভাবক হিসেবে আমার সন্তানের মেধা কেমন, তা জানার আগ্রহ অবশ্যই থাকবে। আমার মেয়ে কোন বিষয়ে ভালো করছে, কোন বিষয়ে সে দুর্বল সেটা তো আমাকে জানতে হবে। কোথায় তাকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে- এগুলো জানার কোনো সুযোগ নতুন শিক্ষাক্রমে আছে বলে দেখছি না। এমন হলে তো সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক। পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে শিক্ষা চলতে পারে- তা বুঝে উঠতে পারছি না।’
শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ/ ছবি- জাগো নিউজ
লিমা আক্তার ও শাহ আলম খানের মতো অধিকাংশ অভিভাবক ‘পরীক্ষাবিহীন’ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ শিক্ষাক্রম বাতিল অথবা সংশোধন করে কিছু পরীক্ষা যুক্ত করার দাবি তাদের।
তবে অভিভাবকরা ‘সচেতন নন’ বলেই এমন উদ্বেগ জানাচ্ছেন বলে মনে করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘এখানে (নতুন শিক্ষাক্রমে) পুরো শিক্ষা প্রক্রিয়াটাই হাতে-কলমে শেখানো। আগে শিক্ষাক্রম ছিল লোকাল ট্রেনের মতো। নতুন শিক্ষাক্রম হবে বিরতিহীন ট্রেন। বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় ভালো ছাত্র-ছাত্রী যা শিখবে বা যেভাবে শিক্ষাটা পাবে, পেছনের সারির ছাত্র-ছাত্রীরাও সেভাবে শিক্ষা পাবে। এতে মেধাভিত্তিক বৈষম্য নিরসন হবে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই পদ্ধতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে।’
আরও পড়ুন>>> নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণ পাবেন ৪ লাখ শিক্ষক
অভিভাবকদের সচেতনতায় কিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। অভিভাবকদের বলবো, আপনারা সচেতন হোন। কিছু জানার থাকলে প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষকদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন। তিনি আপনাদের (অভিভাবক) বোঝাতে সক্ষম হবেন। আর এটা প্রথম বাংলাদেশে চালু হচ্ছে এমনটিও নয়। বিশ্বের উন্নত বিভিন্ন দেশে এ ধরনের শিক্ষাক্রম রয়েছে। তাই উদ্বেগের কিছু নেই।’
অভিভাবকের প্রশ্নে জর্জরিত শিক্ষকরাও বিপাকে
নতুন শিক্ষাক্রমে এখনো প্রশিক্ষণ পাননি অধিকাংশ শিক্ষক। যারা এক দফায় প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তাদের অনেকেই শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পড়ানোর ক্ষেত্রে অতটা দক্ষ হয়ে উঠতে পারেননি। ফলে সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষকরাও। প্রতিনিয়ত অভিভাবকদের প্রশ্নে জর্জরিত হলেও দিতে পারছেন না সদুত্তর। শুধু মফস্বল নয়, রাজধানীর নাম করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও একই দশা।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মুগদা শাখার এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে পানিচক্র নিয়ে ক্লাস নিয়েছি। সেখানে পানির উৎস, ব্যবহার বিষয়ে বিস্তারিত শেখানো হয়। পরে তাদের দলগত কাজ দেওয়া হয়। দুদিন পর একাধিক অভিভাবক এসে জানালেন- তাদের সন্তানরা বাসায় এ বিষয়ে কোনো পড়াশোনা করেনি। তাহলে এই অধ্যায়ের ওপর বাচ্চাদের পরীক্ষা হবে কীভাবে? আমি যখন জানালাম- পরীক্ষা হবে না, এটা শিক্ষক মূল্যায়ন করে নম্বর দেবেন, তখন তাদের মধ্যে অন্যরকম এক বিস্ময়! এটা তারা যেন মানতেই পারছেন না। অভিভাবকরা চাইছেন- পরীক্ষা হোক এবং কোন পরীক্ষায় কে, কত নম্বর পেলো, তাও জানতে চান তারা।’
মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক শিক্ষকও যে এখনো পুরোপুরি ‘ওয়াকিবহাল’ নন তা তার কথায়ই ফুটে ওঠে। জাগো নিউজকে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রধান সমস্যা হলো মূল্যায়ন বিষয়ে এখনো অনেকের ধারণা স্পষ্ট নয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও তারা এটা বোঝাতে পারছেন না। এতে অভিভাবকদের উদ্বেগ আরও বাড়ছে। তারা ভাবছেন- নতুন শিক্ষাক্রমে তাদের সন্তান বোধহয় শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে বড় হয়ে উঠবে।’
আরও পড়ুন>>> নতুন শিক্ষাক্রম পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ২০২৫ সালে
তবে ভিন্ন মতামতও আছে অনেকের। যেমন, পরীক্ষা একেবারেই যে নেই- এমনটি নয় বলে জানান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে। তারা এ বিষয়ে এখনো বুঝে উঠতে পারেননি। শিক্ষিত অভিভাবকরাও বুঝতে পারছেন না। সবাই এটাকে জটিল এবং ভুয়া মনে করছেন। আবার অধিকাংশ শিক্ষক এখনো প্রশিক্ষণ না পাওয়ায় তারাও অভিভাবকদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে পারছেন না।’
শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ/ ছবি- জাগো নিউজ
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষা ছাড়া- এমনটি নয়। এখানেও অনেক পরীক্ষা আছে, তবে সেটা তিন মাস অন্তর অন্তর নয়। প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক, বার্ষিক পরীক্ষা- এগুলো নেই। বরং প্রতিটি ক্লাসে, প্রতিটি অধ্যায় পড়ানোর সময় শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়ন হবে। ধারাবাহিকভাবে তা লিখে রেখে বছর শেষে নম্বর যোগ করে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। তাই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
মূল্যায়নে শিক্ষকদের নিরপেক্ষতা নিয়ে ‘প্রশ্ন’
নতুন শিক্ষাক্রমে ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা। বাকি ৬০ শতাংশ মূল্যায়নের দায়িত্ব থাকবে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তাদের ওপর। শিক্ষক ও বোর্ড কর্মকর্তারা এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় ‘অসীম ক্ষমতার’ অধিকারী হবেন। তারা মূল্যায়ন করলে তা ‘নিরপেক্ষ’ হবে, সেই নিশ্চয়তা কতটুকু- এমন উদ্বেগও অভিভাবকদের।
ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মোহাইমিনুল হোসেন। তার মা আসমা আক্তার ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস ও কাজের মূল্যায়নে শিক্ষকরা নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ের কথা জানান।
আরও পড়ুন>>> নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে মাউশির ৭ স্তরের নির্দেশনা
জাগো নিউজকে আসমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে পড়ছে ডিসি-ইউএনও বা অন্য বড় পদে থাকা ব্যক্তিদের সন্তানরা। কাজ মূল্যায়ন করে নম্বর দেওয়াটা অনেকটা ব্যবহারিকের মতো। এক্ষেত্রে শিক্ষকরা প্রভাবিত হয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তানদের বেশি নম্বর দেবেন না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?’
রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী নিরুপমা রায়ের বাবা নিশীত রায় বলেন, ‘যদি পরীক্ষা হতো তাহলে খাতা চ্যালেঞ্জ করা যেত। এখানে তো পরীক্ষা নেই। শিক্ষক কাউকে কম নম্বর দিলে, সেটা নিয়ে তো কথা বলার আর উপায় থাকছে না। এটা (নতুন শিক্ষাক্রম) বিদঘুটে একটা পদ্ধতি হয়ে গেলো।’
এ প্রসঙ্গে মাউশির সাবেক মহাপরিচালক গোলাম ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এতদিন খুব অল্প নম্বর ছিল শিক্ষকদের হাতে। পাবলিক পরীক্ষায় হয়তো ২০-২৫ নম্বর ছিল ব্যবহারিক বিষয়ে। সেটাতেও মাঝেমধ্যে কাউকে কম, কাউকে বেশি দেওয়ার অভিযোগ শোনা যায়। নতুন শিক্ষাক্রমে যদি নিরপেক্ষতা ধরে রাখা না যায়, তাহলে বড় বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। তাছাড়া ভালো প্রশিক্ষণ না পেলে সঠিকভাবে মূল্যায়নও করতে পারবেন না শিক্ষকরা। এটাও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’
শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ/ ছবি- জাগো নিউজ
তবে শিক্ষার্থীদের কাজ মূল্যায়নে শিক্ষকদের ভূমিকার বিষয়টি কঠোর নজরদারিতে থাকবে বলে জানান এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কিছু মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষকরা এটা লঙ্ঘন করলে বোঝা যাবে। অতিমূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন করলে শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।’
আগামী বছর সাত শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম
চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান করানো হবে। অর্থাৎ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সব শ্রেণিতে পুরোদমে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতিও ভিন্ন। শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে।
এদিকে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন এ শিক্ষাক্রম চালু হবে ২০২৫ সালে। ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ নম্বরের সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে।
আরও পড়ুন>>> হাতেকলমে শিক্ষায় আগ্রহ গ্রামের শিক্ষার্থীদের, শহরে মুখস্থবিদ্যা
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও মূল্যায়ন করা হবে একইভাবে। তবে জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে।
নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়ার পর দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০টি বিষয় নির্ধারণ থাকবে। সেগুলো পড়বে সবাই। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে ঐচ্ছিক বিষয়গুলো পড়বে শিক্ষার্থীরা। অর্থাৎ বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যে বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিক থেকে। উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে এ প্রক্রিয়া মেনে পাঠদান হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে এসব তথ্য জানান। তার ভাষ্যমতে, নতুন কারিকুলাম চূড়ান্ত করার পর পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী হচ্ছে বাস্তবায়ন। আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রায় সব স্তরে পুরোদমে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এর মাধ্যমে পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় বড়োসড়ো পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে।
শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ/ ছবি- জাগো নিউজ
শতভাগ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ এ বছরই
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ঘাটতিকে বড় বাধা মনে করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। এ বাধা দূর করতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই নতুন শিক্ষাক্রমে শতভাগ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে চায় মাউশি। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে অধিদপ্তর।
মাউশির মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে শতভাগ শিক্ষককে নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ দেওয়ার। এ লক্ষ্যে তালিকা চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শতভাগ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
প্রবীণ শিক্ষকদের নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রবীণ শিক্ষকদের নিয়ে আমরা একটু বিপাকে আছি। তারা প্রশিক্ষণ পেলেও তা বাস্তবায়নে সমস্যায় পড়ছেন। নতুন নিয়োগ পাওয়া বা মধ্যবয়সী শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ নিয়ে দ্রুত বুঝে উঠতে পারছেন। এখন প্রবীণদেরও এ ধারায় আনাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’
এএএইচ/কেএসআর/এএসএম
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সদস্য হলেন আবুল কাসেম ফজলুল হক
- ২ উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে প্রকল্পে ধীরগতি, ত্রিপক্ষীয় সভা করবে ইউজিসি
- ৩ চাকরির বয়স দুই বছর না হলে মাদরাসা শিক্ষকের বদলির সুযোগ নেই
- ৪ পাঠ্যবই ছাপাতে পাল্টা পদক্ষেপ এনসিটিবির, বেঁধে দিলো সময়সীমা
- ৫ ২৫ মার্চের আগে বই ছাপা সম্ভব নয় জানিয়ে চিঠি, পরক্ষণে চাইলেন ক্ষমা