ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

‘আমরা যেন নিজেদের ডালভাতের ব্যবস্থা করতে পারি, সেই সুযোগ দিন’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:২০ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২২

ইডেন কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছেন পারুল বেগম। তিনি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দৃষ্টিশক্তি না থাকায় তার কোথাও চাকরি হচ্ছে না। সম্প্রতি প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা দিয়েও বাদ পড়েছেন। সামনে আর কোনো চাকরি পরীক্ষাই দিতে পারবেন না। অথচ তার মা-বাবা অসুস্থ। এ অবস্থায় তিনি কি করবেন ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না।

পারুল বেগম বলেন, আমি মাস্টার্স শেষ করেছি অনেক আগে। বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। আমার উপজেলা থেকে মাত্র দুজন পরীক্ষা দিয়েছেন। ৬০ এর বেশি নম্বরও পেয়েছি। আমি নারী এবং প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও আমাকে নেওয়া হয়নি। আর কত পরীক্ষা দেবো আমি? জীবনে অনেক সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছি। কিন্তু আমার সার্টিফিকেটের কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। এখন আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

শুধু পারুল বেগম নয়, তার মতো এমন ১৯ জন গ্র্যাজুয়েট রয়েছেন যারা প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা দিয়েও চূড়ান্ত নিয়োগে বাদ পড়েছেন।

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এই কথা জানান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। শিক্ষক নিয়োগে প্রতিবন্ধী কোটা চালু ও সদ্য ঘোষিত ফলাফলে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে তাদের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা বলেন, কোটা বাতিলের পর বিশেষ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ও নৃগোষ্ঠীদের অধিকার সংরক্ষণের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এরপর আর সেটা কার্যকর হয়নি। ১৯ জন প্রার্থী প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা দিয়েও চূড়ান্ত নিয়োগে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন নারীও রয়েছেন।

তারা বলেন, নিয়োগে পোষ্য কোটা, নারী কোটা সব আছে। কিন্তু আমাদের প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো কোটা রাখা হয়নি। এই রাষ্ট্র সার্টিফিকেটধারী ভিক্ষুক নামাতে চাইছে।

ইডেন থেকে মাস্টার্স পাস করা পারুল বেগম বলেন, আমি আর পরীক্ষাই দিতে পারবো না, পাস করা তো দূরে থাক। আজকে আমার মা-বাবা অসুস্থ। তাদেরও আমার কাছে তো কিছু প্রাপ্য। কিন্তু আমি তো তাদের কিছুই দিতে পারছি না। আমার দেওয়ার সে অধিকার রাষ্ট্র কেড়ে নিচ্ছে। আমি কি করবো সেটা সরকার বলে দিক। আর না হলে আমাদের সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করুক।

Disabled-2.jpg

সাজ্জাদ হোসাইন সাজু বলেন, আমরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রাইভেট সেক্টরের চাকরিতে আমাদের নিতে চায় না। তারা মনে করে, আমরা কোনো কিছু পারি না। এই যে আমরা এখানে দাড়িয়ে আছি, কথা বলতেছি এটা কি আমাদের যোগ্যতা না? আমরা ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তখন তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে দিয়ে একটি কমিটি করেছিলেন। বলা হয়েছিল বিশেষ ব্যবস্থায় আমাদের অধিকার সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।

তিনি বলেন, গত ২৩ নভেম্বর থেকে আমরা আবারো আন্দোলন শুরু করি। গণভবনের সামনে পুলিশ অমানবিকভাবে আমাদের মারধর করে। সেখানে কোনো সাংবাদিক ছিল না বিধায় কেউ জানেনি। সরকারের কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ, আমরা যেন নিজেদের ডালভাতের ব্যবস্থা করতে পারি সেই সুযোগ দিন। আমাদের বাঁচার অধিকার দিন। অথবা বিষ খেয়ে মরতে দিন। আমাদের অনুমতি দেন, সার্টিফিকেট নিয়ে আমরা ভিক্ষায় নেমে পড়বো। আমরা আন্দোলন করে জ্বালাও পোড়াও করতে পারবো না, কিন্তু বিষ খেয়ে মরতে তো পারবো।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে মাস্টার্স করা রাহাদ খান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আইনে বলা আছে সবার অধিকার সমান। আইনে এটাও বলা আছে যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তাদের বিশেষ সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু আমাদের কেন সে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা কামাল হোসেন বলেন, আমরা গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম। আমরা দেখতে পারি না। ওখানে একজনকে দিয়ে এসেছি। কিন্তু জানি না আদৌ সেটা পৌঁছাবে কি না! যদি আগামী ২৬ তারিখের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আমাদের নিয়োগ না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা ২৭ তারিখ দুপুর ১২টায় প্রেস ক্লাবের সামনে আমাদের বইপত্রসহ সব সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলবো।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা আক্তার, শিবনাথ কুমার সরকার, মাহবুব শেখ, রাকিব হোসেন, পার্থ প্রতীম মিস্ত্রি, আজাদ হোসেন, রাহাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী উপস্থিত ছিলেন।

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে এবার পুরোনো নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে নারী আবেদনকারীদের ৬০ শতাংশ কোটাসহ পোষ্য কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও অন্যান্য কোটা রেখে গত ১৪ ডিসেম্বর ফল প্রকাশ হয়।

আল-সাদী ভূঁইয়া/জেডএইচ/এমএস