স্কুল বেঁধে দেওয়া টেইলার্সে দ্বিগুণ দাম ইউনিফর্মের
মাস শেষ হলেই নতুন বছর। নতুন ক্লাসে যাওয়া শুরু করবে কোমলমতি শিশুরা। কেউ কেউ স্কুল (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) পরিবর্তন করে যাবে অন্য স্কুলে। নতুন ক্লাস বা নতুন স্কুল যাই হোক তার জন্য লাগবে নতুন স্কুলড্রেস। কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুলড্রেস বানানোর ক্ষেত্রে ঠিক করে দিয়েছে নির্দিষ্ট টেইলার্স। অভিভাবকরা বলছেন, এতে তাদের ইউনিফর্ম বাবদ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। বাইরে থেকে একজোড়া ড্রেস দেড় হাজার টাকার মধ্যে বানানো সম্ভব হলেও স্কুল নির্ধারিত টেইলার্সে সেটা লাগে সামান্য কমবেশি তিন হাজার টাকা।
রাজধানীর এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহীদ বাবুল একাডেমি। খিলগাঁওয়ের পল্লীমা সংসদের আওতাধীন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে প্লে গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভার্সন রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্কুলের ইউনিফর্ম নিতে হয় পার্শ্ববর্তী সুরভী টেইলার্স থেকে। অন্য কোনো টেইলার্স বা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্কুলড্রেস কেনার সুযোগ নেই। এমনকি ড্রেসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে মনোগ্রাম ব্যবহার করা হয়, সেটিও এই টেইলার্সের বাইরে পাওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে শিক্ষার্থীদের কোনো মনোগ্রাম দেওয়া হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা এই টেইলার্স থেকেই স্কুলড্রেস নিতে বাধ্য হন।
সুরভী টেইলার্স থেকে নার্সারি ও কেজির শিক্ষার্থীদের স্কুলড্রেস নিতে অভিভাবকদের গুনতে হয় ২ হাজার ৮শ থেকে ৩ হাজার ২২০ টাকা। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীদের ২ হাজার ৮শ এবং মেয়ে শিকার্থীদের ড্রেস ৩ হাজার ২২০ টাকা।
স্কুলড্রেসের এত দাম নেওয়ার কারণ হিসেবে সুরভী টেইলার্সের এক কর্মী বলেন, আমরা দুই সেট স্কুলড্রেস, সোয়েটার, টাই ও মোজা দেই। আমাদের কাপড়ের মান অনেক ভালো। বাইরে যে কাপড় বিক্রি হয়, সেই কাপড় আর আমাদের কাপড়ের মধ্যে পার্থক্য আছে।
আপনারা কি স্কুলের মনোগ্রাম আলাদা বিক্রি করেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মনোগ্রাম আলাদা বিক্রি করার সুযোগ নেই। আমাদের কাছ থেকে স্কুলড্রেস নিলে আমরাই মনোগ্রাম দিয়ে দেই। বাইরে থেকে শুধু কেডস কিনতে হয়।
শহীদ বাবুল একাডেমির একজন প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের স্কুলড্রেস কোথা থেকে বানাতে হবে তার নাম স্যুভেনিরে দেওয়া আছে। স্কুল থেকে কোনো মনোগ্রাম দেই না। ওই টেইলার্স থেকেই সব কিছু দিয়ে দেবে। আমাদের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই টেইলার্সকে কাজ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শহীদ বাবুল একাডেমির ম্যানেজিং কমিটির সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব জাগো নিউজকে বলেন, একজনের সামর্থ্য আছে তিনি তার সন্তানকে তিন হাজার টাকা দিয়ে ড্রেস বানিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু যার সামর্থ্য নেই তিনি হয়তো ৫শ টাকা দামের ড্রেস বানিয়ে দিলেন। যখন দুটি বাচ্চা একসঙ্গে যাবে, তখন বাচ্চা দুটির মনে কেমন লাগবে বলেন। তখন বাচ্চাদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হবে। সেটার জন্য আমরা এক প্রতিষ্ঠানে একই মাসের ড্রেস বানানোর ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি সুলভ মূল্যে ভালো মানের কাপড় পাওয়ার। আমরা কাজ দেওয়ার আগে টেন্ডার আহ্বান করেছিলাম। সেখানে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে যে সবচেয়ে কম দাম দিয়েছে, আমরা তাকে কাজ দিয়েছি।
তবে স্কুলড্রেসের নিয়ন্ত্রণ এক প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকার কারণে বাড়তি দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। আলেয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, বাইরের মার্কেট থেকে স্কুলড্রেস ৫শ থেকে ৭শ টাকার মধ্যে কেনা যায়। কিন্তু এখান থেকে আমার ছেলের স্কুলড্রেস নিতে হচ্ছে ২ হাজার ৮শ টাকা দিয়ে। স্কুলের মনোগ্রাম কোথাও না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে এই ড্রেস নিতে হচ্ছে।
আবার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যারা নিজেরাই শিক্ষার্থীদের ড্রেস সরবরাহ করে। এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাউথ পয়েন্ট। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়ার সময়েই অভিভাবকদের কাছ থেকে স্কুলড্রেসের অর্থ আদায় করে।
এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অ্যাডমিন বিভাগের দায়িত্ব পালন করা খাদিজা ইসলাম বলেন, আমাদের এখান থেকেই শিক্ষার্থীদের স্কুলড্রেস সরবরাহ করা হয়। শিক্ষার্থীদের দুই সেট স্কুলড্রেস দেওয়া হয়। এর জন্য বাড়তি কোনো টাকা নেওয়া হয় না। ভর্তি খরচের মধ্যেই স্কুলড্রেসের খরচ সংযুক্ত থাকে।
নির্দিষ্ট টেইলার্স থেকে ইউনিফর্ম কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জাগো নিউজকে বলেন, স্কুলড্রেস তৈরিতে অভিভাবক যেখানে ভালো মনে করেন সেখান থেকেই তৈরি করতে পারবেন। এটি যদি কোনো প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে দেয় সেটি ঠিক হবে না। তবে স্কুলের পক্ষ থেকে শিক্ষকরা পরামর্শ দিতে পারেন। কোন নির্ধারিত স্থানে বানাতে হবে সেটি বাধ্য করা যাবে না।
শহীদ বাবুল একাডেমি বা সাউথ পয়েন্টে এমন নিয়ম থাকলেও রাজধানীর অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ নিয়ম নেই। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মনোগ্রাম সরবরাহ করা হয়। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনোগ্রাম ফ্রি দেয়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান মনোগ্রামের জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্কুলড্রেস রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট থেকে কেনা যায়।
রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেটে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা শুধু স্কুলড্রেস বিক্রি করে। মার্কেটটিতে স্কুলড্রেসের ব্যবসা করা মো. সজিব বলেন, আমরা প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুলড্রেস ৬শ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি করি। বড় শিক্ষার্থীদের স্কুলড্রেস বিক্রি হয় এক হাজার থেকে ১২শ টাকায়। আর কেডস বিক্রি হয় ৫শ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে।
তিনি বলেন, আমাদের দোকানে রাজধানীর প্রায় সব স্কুলের ড্রেস পাওয়া যায়। সারাবছরই আমাদের টুকটাক বিক্রি হয়। তবে মূল বিক্রি হয় ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখের পর পুরো জানুয়ারিজুড়ে। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকেও ভালো বিক্রি হয়।
মার্কেটটির আরেক ব্যবসায়ী নীলিমা আক্তার বলেন, আমরা মতিঝিল, রামপুরা, খিলগাঁও এসব অঞ্চল ও আশপাশের বিভিন্ন স্কুলের ড্রেস বিক্রি করি। ছোট শিশুদের স্কুলড্রেস ৫৫০ থেকে ৮শ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। আর বড় শিশুদের স্কুলড্রেস এক হাজার থেকে ১৩শ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। আর সাদা কেডস বিক্রি করি ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে।
জানা যায়, সারাদেশে ৪০ হাজারের বেশি ব্যাঙের ছাতার মতো কিন্ডারগার্টেন স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এসব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না বলে নিজেদের ইচ্ছামতো চলছে যত্রতত্র গড়ে ওঠা স্কুল।
এমএএস/এএসএ/এমএস
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধে হাসিনার বিদায় ত্বরান্বিত হয়: প্রেস সচিব
- ২ সরকারিতে আসনের চারগুণ আবেদন, সাড়া নেই বেসরকারিতে
- ৩ সাত কলেজের ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- ৪ গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মরণসভা করার নির্দেশ
- ৫ পিএইচডি-এমফিলধারী ২০৬ শিক্ষককে সংবর্ধনা দিলো জমিয়াতুল মোদার্রেছীন