ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নজরদারি বাড়ছে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ওপর

মুরাদ হুসাইন | প্রকাশিত: ০৮:২০ এএম, ০৫ নভেম্বর ২০২২

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে আসন্ন এইচএসসি, আলিম ও এইচএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাছাই ও বিতরণ প্রক্রিয়ায়। এর অংশ হিসেবে নজরদারি বাড়ানো হবে কেন্দ্র সচিবদের ওপর। এছাড়া পরীক্ষায় দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দায়িত্ব পালনকালে সশরীরে উপস্থিত থেকে প্রশ্নপত্র বাছাই, সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। কেউ তার মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিনিধি দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। আবার কেন্দ্র সচিব তার প্রতিনিধি পাঠালে তাকে প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে না।

পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তারা যাতে প্রশ্নফাঁস করতে না পারেন, সে কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ড থেকে জানা গেছে।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরে শেষ হওয়া এসএসসি-সমমান পরীক্ষায় দিনাজপুর বোর্ডের অধীন কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার একটি কেন্দ্রে দায়িত্বরত কেন্দ্র সচিবের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শিক্ষা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি-সমমান পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। জেলা থেকে প্রশ্নপত্র বিতরণের সময় সেখানে জেলা ট্রেজারি কর্মকর্তার প্রতিনিধি নিয়োগ করা যাবে না। বিতরণের সময় জেলা ট্রেজারি কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করবেন। উপজেলা পর্যায়ে প্রশ্ন বাছাই ও বিতরণের সময় ইউএনওকে বাধ্যতামূলক উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগে সেখানে ইউএনও’র প্রতিনিধি পাঠানো যেতো।

আরও পড়ুন: প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ভূরুঙ্গামারীর ইউএনওকে শোকজ

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অসুস্থতা বা গুরুত্বপূর্ণ কাজে কর্মস্থলে সে সময় তিনি উপস্থিত থাকতে না পারলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা উপজেলার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নজরদারি বাড়ছে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ওপর

এসএসসির প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় কয়েকজনকে

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, পাবলিক পরীক্ষা আয়োজন বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ। এর মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ভুলক্রটি হতে পারে। এ ভুল যাতে আর কেউ না করে সেজন্য অপরাধীর বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

আরও পড়ুন: এসএসসির প্রশ্নফাঁসে জড়িত ৬ শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও স্থগিত

তিনি বলেন, কুড়িগ্রামে কেন্দ্র সচিবের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা আমাদের কাছে নতুন একটি অভিজ্ঞতা। এখন থেকে আমরা আরও বেশি সর্তকতা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছে। সেসব অনুসরণ করে পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে কারণে মাঠ পর্যায়ে যার যেখানে দায়িত্ব রয়েছে, তাকে সেখানে উপস্থিত থেকে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে মোট ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬১ জন। বাকিরা অনিয়মিত শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ২২ হাজার ৭৯৬ জন ছাত্র এবং ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ জন ছাত্রী।

১১টি শিক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯ হাজার ১৮১টি প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

সামগ্রিক বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনে দেশের সব জেলায় প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র, ওএমআরসিটসহ গোপনীয় কাগজপত্র পৌঁছে গেছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র বিতরণ করা হয়েছে। যাদের প্রবেশপত্রে ভুলক্রটি ধরা পড়ছে, সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস করা সম্ভব হবে না। প্রশ্ন যাচাই-বাছাই ও বিতরণ কাজে আরও বেশি নজরদারি করা হচ্ছে। মাঠ কর্মকর্তাদের সর্তক করা হয়েছে। দেশের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা কেন্দ্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের সঙ্গে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানরা জরুরি সভা করে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সবাইকে আরও বেশি সর্তক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রশ্নফাঁসের গুজবে পরীক্ষার্থীরা যেন প্রভাবিত না হয় উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। রাস্তার যানজট মাথায় রেখে অভিভাবক-পরীক্ষার্থীদের বের হতে হবে। পরীক্ষার আগে একটি চক্র আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চালায়। এতে কোনো পরীক্ষার্থী যেন প্রভাবিত না হয়।

ভালো ফল পেতে পড়ালোখায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন বোর্ড চেয়ারম্যান।

এমএইচএম/এমএইচআর/জেআইএম