স্কুল-কলেজের গেটেই ‘সংক্রমণ ফাঁদ’
টানা ১৭ মাস স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পর আবারো ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। ক্লাস শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে হাজির হচ্ছেন। তবে আগে এলেও তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে গেটের বাইরে। একটু আগেভাগে চলে আসায় ক্যাম্পাসের গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জটলা দেখা গেছে। অনেকেই একসঙ্গে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুখবরের মধ্যেও করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
স্কুল-কলেজ খোলার দ্বিতীয় দিন সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় গতকাল রোববার প্রথমদিন শিক্ষার্থীদের নানাভাবে বরণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। পড়ার চাপ না দিয়ে প্রথম দিন কাটে অনেকটা আনন্দ-উৎসব, গল্প-নাচ-গানের মধ্য দিয়ে। পাশাপাশি সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে করণীয় বিষয়ে ক্লাসে ক্লাসে কথা বলেছেন শিক্ষকরা। প্রথম দিন কিছুটা ঢিলেঢালা থাকলেও আজ থেকে অনেকটা কড়াকড়িভাবেই শুরু হয়েছে শ্রেণিপাঠ কার্যক্রম।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হলেও ঢাকার শীর্ষ পর্যায়ের অনেক স্কুল-কলেজের প্রবেশপথের মূল ফটকের সামনে সকাল থেকেই শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জটলা লক্ষ্য করা গেছে।
সকালে মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬০ ফিট বালক শাখার সামনে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের গাদাগাদি অবস্থান দেখা গেছে। স্কুলের পক্ষ থেকে অপেক্ষা করার স্থান তৈরি না করায় বাইরে থাকা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রবেশপথের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। নির্ধারিত সময়ের আগে ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় এ পরিস্থিতি বলে জানান অভিভাবকরা।
মিজানুর রহমান নামে এক অভিভাবক জাগো নিউজকে বলেন, ভেতরে এত বড় জায়গা থাকতেও করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গেটের বাইরে বাচ্চাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বারবার বলার পরও তারা এটি গুরুত্ব দিচ্ছে না। একসঙ্গে সবাইকে প্রবেশ করতে দেওয়ায় গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আগে এলে ভেতরে প্রবেশ করে একটি স্থানে অপেক্ষা করতে পারে। এতে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও তৈরি হয় না। দ্রুত এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ক্লাস শুরুর ১৫ মিনিট আগে স্কুলের ভেতরে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। অভিভাবকরা এর আগে এসে ইচ্ছেকৃত গেটের বাইরে জটলা করছে। আমরা ক্লাস রুটিন গেটের বাইরে দিয়েছি, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সচেতনতায় বাইরে ব্যানার টানানো হয়েছে। তারপরও ইচ্ছে করে গেটের বাইরে জটলা পাঁকানো হচ্ছে। আমাদের ক্যাম্পাস রাস্তার উপরে হওয়ায় এমনিতেই ভিড় একটু বেশি হয়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী-অভিভাবক সচেতন হলে রাস্তার ওপর ভিড় বন্ধ হবে। এতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমবে। সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনেও সকালে একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। ক্লাসভিত্তিক শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়ায় আগেভাগে যারা চলে এসেছেন, তাদের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবক মিলে গেটের বাইরে বড় ধরনের জটলা তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কামরুননাহার জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বারবার নির্ধারিত সময়ে আসতে বলা হলেও তারা আগেভাগে চলে আসছে। কিন্তু আগে এলেও নির্ধারিত সময়ের আগে তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া সম্ভব নয়। এতে গেটের বাইরে জটলা তৈরি হচ্ছে। এটি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
রাজধানীর ফার্মগেটে হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনেও একই অবস্থা। সামাজিক দূরত্ব ভুলে গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা প্রবেশপথের বাইরে অপেক্ষা করছেন। এখানে তাদের সঙ্গে আছেন অভিভাবকরা।
ক্যাম্পাসের বাইরে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক সোমবার সকালে জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের গেটের বাইরে জটলা না করতে নানা ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। তাদের সচেতন করা হচ্ছে। এরপরও যদি তারা সে কাজটি করে, তবে কিছু করার থাকে না।
তিনি বলেন, বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের পরিস্থিতি বেশি তৈরি হচ্ছে। সবাই নির্ধারিত সময়ে বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে উপস্থিত হলে গেটের বাইরে এমন জটলা হতো না। সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে গতকাল রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে কি না, তা পরিদর্শন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রী রাজধানীর একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।
করোনা মহামারির কারণে টানা প্রায় দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। বছরের শুরুতে এসএসসি-এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজনের কথা থাকলেও এখনো তা সম্ভব হয়নি। এছাড়া অন্যান্য স্থানের পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনও পড়েছে অনিশ্চয়তার মুখে। এতে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়ছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশকিছু সতর্কতা ও সচেতনতামূলক পৃথক নির্দেশনা জারি করা হয়।
এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য মৌলিক ক্লাস রুটিন প্রকাশ করা হলেও মাউশির গাইডলাইন মোতাবেক স্কুল-কলেজে ক্লাস রুটিন তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়।
এমএইচএম/এমকেআর/জেআইএম