শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া
রোববার সকাল ৯টা, রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ‘জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া’ মাদরাসা প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের কোলাহল। দীর্ঘদিন পর পরনে সাদা পাঞ্জাবি বা জুব্বা, মাথায় টুপি পরা শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে দেশের অন্যতম বৃহৎ দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কওমি মাদরাসাগুলো খুলেছে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর)।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়ার আবাসিক শিক্ষার্থীদের সকালের খাবার দেওয়া হয় সকাল ৯টার দিকে। খাবার নিতে শিক্ষার্থীদের ছুটতে দেখা গেছে। অনেকেরই হাতে ছিল খাবারের ছোট ছোট বালতি। অজুখানায়ও ছিল ছাত্রদের আনাগোনা। গোসল সেরে, খেয়ে সবাই ১০টায় ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
ছাত্রদের থাকার ভবনগুলোর রেলিংয়ে জামা-কাপড় রোদ দেওয়া দেখেই বুঝা যাচ্ছে, তারা ফিরেছেন। সকালে যখন অন্যরা খাবার নিচ্ছিলেন, তখন কেউ কেউ ফিরছিলেন দূর-দূরান্তের গন্তব্য থেকে।
মাদরাসা খুলে দিতে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ২২টি নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই এ মাদরাসায়।
মাদরাসার শিক্ষকরা জানালেন, মক্তব থেকে তাখাসছুছ পর্যন্ত মাদরাসার প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই চলে এসেছে। পড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশেষ উদ্যোগও নিচ্ছেন তারা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরেছেন তাইছিরের (ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যায়ের) ছাত্র সাদমান নাছি। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন তো বাসায় ছিলাম। আর ভাল লাগছিল না, মাদরাসায় এসে খুব ভালো লাগছে।’
দাওরায়ে হাদিসের ছাত্র নাজমুল হোসেন এসেছেন কুমিল্লার মেঘনা থেকে। মাদরাসা চত্বরে রিকশা থেকে মালপত্র নামাতে নামাতে বলেন, ‘বাড়ি একটু দূরে হওয়ায় আসতে দেরি হয়েছে। বাড়ি থাকতে থাকতে আর পারছিলাম না। মাদরাসা খুলেছে, খুবই খুশি হয়েছি। এসে ভালো লাগছে।’
সকাল ১০টা বাজতেই ঘণ্টা পড়ে, শুরু হয় ক্লাস। পড়ার সুর ভেসে আসতে থাকে মাদরাসার কক্ষ থেকে। স্পিকারে শিক্ষকদের কণ্ঠ। তখন অনেকটাই নিরব মাদরাসার সামনের চত্বর। মাদরাসা ঘুরে দেখতে দিলেও ছাত্রদের ছবি তোলার সম্মতি মেলেনি।
অনেকটা অপেক্ষা করে পাওয়া গেল জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ার নায়েবে মুহতামিম (উপাধ্যক্ষ) আহমদ ঈসাকে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মক্তব্য বা হেফজখানা থেকে একেবারে গবেষণা পর্যায় অর্থাৎ তাখাসছুছ পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া হয় এখানে। মোট শিক্ষার্থী প্রায় সাত হাজার, সবাই প্রায় আবাসিক। বেশির ভাগই চলে আসছে। বিকেলের দিকে পুরো হিসাবটা পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি তফসির বিভাগে ক্লাস নিয়ে এলাম, সেখানে ৩০ জন ছাত্র, সবাই ইতোমধ্যে চলে এসেছে।’
‘ছাত্ররা অনেক সময় আসতে চায় না, কিন্তু কিছুদিন ধরে ছাত্ররা খুব বিরক্ত করছিল, ফোন করে বলে, কবে আসবো হুজুর, চলে আসি, শুধু থাকতে দিয়েন। মাদরাসা খোলায় ছাত্ররা খুবই খুশি। তারা খুব আনন্দ নিয়ে ক্লাস করছে। আর এখানে তো দ্বীনি পরিবেশ, এটা তো অন্য কোথাও পাওয়া যায় না’ বলেন উপাধ্যক্ষ আহমদ ঈসা।
স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নায়েবে মুহতামিম বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলছি, গুরুত্ব দিচ্ছি। কেউ কেউ মানছে না। আর গরমও তো অনেক, মাস্ক পরলে কষ্ট হয়। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আমরা একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে কমিটিও করে দিয়েছি। তারা এগুলো দেখবেন।’
মাদরাসায় ১২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন জানিয়ে আহমদ ঈসা বলেন, ‘সবাই ব্যক্তিগতভাবে টিকা নিচ্ছেন। ছাত্রদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো আলোচনা বা যোগাযোগ হয়নি। ছাত্ররাও নিজেদের মতো করে টিকা দিচ্ছে।’
বন্ধ কমিয়ে, পড়ার গতি বাড়িয়ে করোনার কারণে পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ার নায়েবে মুহতামিম।
আরএমএম/এএএইচ/জিকেএস
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ বাংলাদেশে ক্যাম্পাস চালু করতে চায় চীনের আইএনটিআই বিশ্ববিদ্যালয়
- ২ প্রকৌশল গুচ্ছ টিকিয়ে রাখতে উপাচার্যদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি
- ৩ সোহরাওয়ার্দীতে বসছে ‘ইবনে হায়সাম বিজ্ঞান উৎসব’, চলছে রেজিস্ট্রেশন
- ৪ ভর্তি পরীক্ষায় যোগ্যপ্রার্থীর তালিকা প্রকাশ, আসনপ্রতি লড়বেন ৯০ জন
- ৫ জানুয়ারিতে সব শ্রেণির নতুন বই দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে