বেসরকারি স্কুলে উপেক্ষিত ভর্তি নীতিমালা
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা উপেক্ষা করেই চলছে রাজধানীর বেসরকারি ‘ভালো’ স্কুলগুলোতে ভর্তি কার্যক্রম। স্কুলের সেবা (ক্যাচমেন্ট) এলাকার শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা মানছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। বরং চালু করেছে ‘বোন’ ও ‘কলোনি’ কোটা। ফলে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে এলাকার স্কুলে ভর্তির কোটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষার্থী ভর্তিতেও নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ ও অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীর সকল বেসরকারি স্কুলের সেবা এলাকার শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা নির্ধারণ করা আছে। প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করতে হবে। ভর্তি ফি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যমে পাঁচ হাজার, আংশিক এমপিওভুক্ত ও নন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮ হাজার এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা মহানগরীর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এসব নিয়ম নীতি মানছে না।
অভিভাবকদের অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১ম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদনকারীদের বাছাইয়ের মাধ্যমে লটারির জন্য তালিকা তৈরি করেছে। এ বিদ্যালয়ের আজিমপুর শাখার জন্য শুধুমাত্র আজিমপুর কলোনিতে ফ্লাট বরাদ্দ প্রাপ্তদের সেবা এলাকাভুক্ত করা হয়েছে। ফলে ৪০ শতাংশ সেবা এলাকা কোটায় ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হবেন স্কুল এলাকার বাসিন্দারা। এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে অধ্যায়নরত ছাত্রীর বোনদের ভর্তির ক্ষেত্রেও ‘বোন কোঠা’ সংরক্ষণ করেছে। এসব কারণে অনেকেই ভর্তি হতে পারবেন না পছন্দের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে ১ ডিসেম্বর। মুগদা ও বনশ্রী শাখায় ভর্তির জন্য সেবা এলাকা নির্ধারণ করা হলেও মূল শাখায় শুধুমাত্র মতিঝিল এজিবি কলোনিকে সেবা এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে স্কুলের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. শাহানআরা বেগম বলেন, আমরা কলোনি কোটা অনুসরণ করি। তাই এলাকা কোটা অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়েও বলেছি।
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য সেবা এলাকা নির্ধারণ করলেও অপর শ্রেণিতে ভর্তির জন্য সেবা এলাকা নির্ধারণ করেনি। ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের বনশ্রী শাখায় সেবা এলাকা নির্ধারণ না করেই ভর্তি কার্যক্রম শেষ করেছে। এখানে প্রথম শ্রেণিতে লটারির আগে কোমলমতি শিশুদের মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে দুই দফায় ১৮ হাজার ৯৬০ টাকা আদায় করছে।
প্রতিষ্ঠানের বনশ্রী শাখার পরিচালক শেখ মো. ফরিদ বিষয়টি স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বাসা ভাড়া নিয়ে স্কুল পরিচালনা করি। আমাদের খরচ বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফি এর চেয়ে বেশি নিতে বাধ্য হচ্ছি।
ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে সেবা এলাকা নির্ধারণ না করেই উইলস লিটেল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মাইল স্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে সেবা এলাকা উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য লটারির পরিবর্তে পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীর বেসরকারি স্কুলে সরকারি নীতিমালা মেনে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গত ১৭ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কর্মকর্তরা রাজধানীর ৪০টি স্কুলের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। কিন্তু বৈঠকে ডাকা হয়নি ক্যাবব্রিয়ান কলেজ কর্তৃপক্ষকে। এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নিয়ম নীতিমালা তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছেমতো ভর্তি ফি আদায় করছে। মানছে না ৪০ শতাংশ সেবা এলাকা কোটা। শুধু উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়। রাজধানীর অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভর্তি নীতিমালা না মেনে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ রয়েছে।
মাউশি পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন বলেন, শুধু এলাকা কোটাই নয়, ফি আদায়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নীতিমালা লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক স্কুল এলাকা কোটা সংরক্ষণ করতে বাধ্য। নীতিমালায় যেসব কোটা উল্লেখ নেই তা সংরক্ষণ করা যাবে না। কোনো প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো কোটা চাইলে সংশ্লিষ্ট স্কুলকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তা অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।
এনএম/একে/আরআইপি