শিগগিরই পূরণ হচ্ছে না নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি
‘মাও নাই রে, বাপও নাই রে... কার কাছে বলিব মনের জ্বালা’ এমপিও ভুক্তির দাবিতে এভাবে গান গেয়ে, কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে আন্দোলন করছেন নন এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
টানা আন্দোলনের ২০তম দিন সোমবার পার হলেও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণে কোনো সাড়া মেলেনি। অন্যদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
কিন্তু চলতি অর্থ বছরে এমপিও ভুক্তির জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ না থাকায় আগামী জুনের আগে তাদের দাবি পূরণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনকি আগামী অর্থ বছরেও এমপিও ভুক্ত হবে না কি না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি বন্ধ রয়েছে। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরা শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে তদরিব করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এনিয়ে জাতীয় সংসদও বেশ কয়েক বার উতপ্ত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীও এমপিও ভুক্তির পক্ষে কথা বলেছেন।
সূত্রটি আরো জানায়, বর্তমানে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও প্রদানে বার্ষিক বরাদ্দ ব্যয় হয় ১১ হাজার ৮৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এই ব্যয় মন্ত্রণালয়ের মোট রাজস্ব বরাদ্দের প্রায় ৭৭ শতাংশ।
নন এমপিওভুক্ত আরো প্রায় ১০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিও পাওয়ার শর্ত পূরণ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিতে হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বছরেই ব্যয় বাড়বে অন্তত সাড়ে ১৪শ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে নন এমপিও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে ১৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দরকার। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর অনড় অবস্থানের কারণে চলতি অর্থ বছরের বাজেটে এমপিও ভুক্তির জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। অর্থ বরাদ্দ না পেলে এমপিওভুক্তিও সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিও ভুক্ত করার জন্য যে টাকা প্রয়োজন তা আমাদের কাছে নেই। এ বছর এমপিও ভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো বরাদ্দ পায়নি। যে কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে আমরা এমপিও দিতে পারছি না। যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি করে আসছি অনেক দিন ধরে। এ বিষয়ে সংসদেও অনেক কথা বলেছি। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। কারণ নন-এমপিও শিক্ষকরাও শিক্ষা পরিবারের অংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপিভুক্তির দাবিতে গত ২৬ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. ইশারাত আলী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমারের নেতৃত্বে শতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
গত ৬ নভেম্বর থেকে কয়েকদিন অনশন কর্মসূচিও পালন করেন তারা। ইতোমধ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষক অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। শূন্য থালা হাতে মিছিল ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে টানা অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তারা।
সর্বশেষ আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই বাড়ি ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি একযোগে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করেছেন। তিনি আমাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে পারেন না।
প্রসঙ্গত, একই দাবিতে ২০১২ সালে রাজধানীতে অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। পরে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে তারা আন্দোল স্থগিত করেন। কিন্তু এমপিও ভুক্তি না হওয়ায় গত বছরের ২৬ ও ২৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং ২৮ ও ২৯ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।
এনএম/এসকেডি/পিআর
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ভালো অবকাঠামো ও গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক দিচ্ছে সরকার
- ২ ষষ্ঠ-সপ্তমের নতুন পাঠ্যবই মিলবে জানুয়ারির প্রথমদিকেই
- ৩ মাউশির ৮ আঞ্চলিক কার্যালয়ে নতুন উপ-পরিচালক
- ৪ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পরীক্ষা শুরু ২ জানুয়ারি
- ৫ আওয়ামী লীগের ১২ বছরের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে ‘সত্যানুসন্ধান কমিটি’