প্রাথমিকে সিলেবাস কমিয়ে সমাপনী পরীক্ষা ও মূল্যায়ন
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে না। এ বছরও যথা নিয়মে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে সিলেবাস কমবে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্কুল খোলা সম্ভব হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা শেষ করা হবে। এসব কথা জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ‘যদি সেপ্টেম্বরে স্কুল খোলা সম্ভব না হয়, তাহলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষ উন্নীত করা হবে। উভয় পরিকল্পনার জন্যই সংশোধিত সিলেবাস তৈরির কাজ করছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।’
সোমবার বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েন (ইরাব) আয়োজিত ‘করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষায় চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন জানান, আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিকের ক্লাস রেডিওর মাধ্যমে প্রচার শুরু করা হবে। রেডিওর মাধ্যমে পাঠদান শুরু করতে পারলে আমরা ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে যাব। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে পাঁচ মিনিট ফোনে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে। আমরা এখন পরীক্ষা নিয়ে ভাবছি না, আমরা এখন মূল্যায়ন করব। শিক্ষার্থী পরের ক্লাসের জন্য প্রস্তুত কি না, আমরা তা মূল্যায়ন করব, এজন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ও মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে ‘রিকভারি প্ল্যান’ করছেন তারা। স্কুল খোলার পর কতটুকু সময় পাওয়া যাবে, তার আলোকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। ৪৫ শতাংশ পরিবারে টিভি আছে বলে আমাদের জরিপে এসেছে। অন্যের বাড়ি গিয়ে কিছু শিক্ষার্থী টিভির ক্লাস দেখছে।
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, এই মহামারির মধ্যে শিক্ষায় বৈষম্য বাড়ছে, টিভির ক্লাসের আকর্ষণ হারিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের ওপর করের বোঝা কেন আরোপ করা হলো? কোনো অদৃশ্য কারণে এটা প্রত্যাহার করা হল না? অবিলম্বে এটা প্রত্যাহারের দাবি করছি, নইলে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ রাখা সম্ভব না। অনলাইন ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ কীভাবে গড়ব?
অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে রাশেদ রাব্বী নামে একজন অভিভাবক বলেন, তার দুই সন্তান ঢাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। সংসদ টিভির ক্লাস তাদের খুব কম কাজে আসছে, কারণ এই টিভির শব্দ ও ছবি ‘নিম্নমানের’।
রংপুর ক্যাডেট কলেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রওশন আরা বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী পরিবারের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত হয়েছে। টিভির মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত শিক্ষা পৌঁছানো ‘বেশ কষ্টসাধ্য’।
ঝালকাঠির কীর্তিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিমুল সুলতানা হ্যাপী বলেন, স্থানীয় কেবল অপারটেরদের মাধ্যমে টিভির ক্লাস প্রচার করা হলে তা অনেক বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাবে।
এসময় করোনায় প্রাথমিক শিক্ষায় কয়েকটি চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ তুলে ধরে ইরাব। এগুলো হচ্ছে- টেলিভিশন ও অনলাইন শিক্ষায় মফস্বলের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। এতে ঝরে পড়ার হার বাড়বে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে, উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ও সিলেবাস নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গ্রামের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পড়ালেখার বাইরে অবস্থান করছেন, এতে শিক্ষায় বৈষম্য বাড়বে। শহরের বস্তিবাসী, কর্মজীবী শিশু, চরাঞ্চল, পাহাড়ি ও প্রতিবন্ধী শিশুরা আগের চেয়েও পিছিয়ে পড়ছে। কিন্ডারগার্টেনের শিশুদের খোঁজ নিচ্ছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।
সুপারিশ হচ্ছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের অবশিষ্ট সময়কালে টেলিভিশন ও অনলাইন শিক্ষার উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের সংযোগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে টেলিভিশন পাঠদানকে আরো আনন্দদায়ক ও শিশুতোষ করার পাশাপাশি তা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানোর কৌশল বের করতে হবে। পিইসি পরীক্ষা বন্ধের দাবি উঠেছে, সে বিষয়টি নিয়ে ভাবা যেতে পারে। স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি তা অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করতে হবে। বিশেষ করে করোনায় চলে যাওয়া সময়ের বিপরীতে সিলেবাস সংক্ষেপ করা হবে কিনা বা অবশিষ্ট সময়ে কতটুকু পড়ানো হবে- তা প্রকাশ করা জরুরি। দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল চালু রাখতে চাইলে এগুলোর ক্ষেত্রে নিবন্ধন নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। নিবন্ধনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া জরুরি।
ইরাব সভাপতি মুসতাক আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইরাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাব্বির নেওয়াজ।
এমএইচএম/এসএইচএস/পিআর