‘গুজবে’ বিপাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষা প্রশাসনের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট বা পেজ খুলে সেখানে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। বিভ্রান্তিমূলক এমন তথ্যে বিপাকে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব সাইট বা পেজ থেকে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাসংক্রান্ত ভুল তথ্য পরিবেশন বা গুজব রটানো হচ্ছে। এতে শিক্ষক, অভিভাবক-শিক্ষার্থী, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও বিভ্রান্তিতে পড়ছেন।
বিগত সময়ে এ ধরনের ৯০টির মতো ওয়েবসাইট বন্ধ করা হলেও পরবর্তীতে ভিন্ন ভিন্ন নামে তারা আবার ওয়েবসাইট বা পেজ তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষা সংক্রান্ত গুজব ছড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সাধারণ বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অসংখ্য ওয়েবসাইট বা পেজ খোলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এমনকি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নামেও অসংখ্য ভুয়া পেজ খুলে নানা ধরনের ভুল তথ্য ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য প্রচার করে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা, ফলাফল প্রকাশ, প্রশ্নফাঁস, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু ও বন্ধ রাখা, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন ধরনের ভুয়া তথ্য প্রচার হচ্ছে। এসব ভুয়া তথ্যে বিভ্রান্ত হচ্ছেন জনগণ, বিপাকে পড়তে হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের নামে অনেকে ওয়েবসাইট বা পেজ খুলে ভুয়া তথ্য প্রচার করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এমনকি শিক্ষামন্ত্রীর নামেও অনেক পেজ খুলে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ ধরনের ৯০টির বেশি ওয়েবসাইট-পেজ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন করে ভিন্ন ভিন্ন নামে আবারও এ ধরনের ওয়েবসাইট খোলা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর নামেও এ ধরনের ওয়েবসাইট খুলে ভুয়া তথ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এসব কাজে যারা যুক্ত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত সপ্তাহে ‘বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা বোর্ড’ নামের একটি ওয়েবসাইটে ‘ঈদের পরে শিক্ষাপতিষ্ঠান খুলে দেয়া হচ্ছে’ এমন তথ্য প্রকাশ করে গুজব ছড়ানো হয়। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নজরে আসলে ‘তা সত্য নয়’ বলে বিজ্ঞপ্তি মারফত গণমাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। একইসঙ্গে ভুয়া ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে লিখিতভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ইন্টারনেটসহ যেকেনো মাধ্যমে শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো ধরনের ভুল তথ্য প্রচার করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। অথচ জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের নামে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে জাতীয় শিক্ষা বোর্ড নামে কোনো শিক্ষা বোর্ড নেই।’ মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন থাকতে অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যখন সময় হবে আমরা গণমাধ্যমে জানিয়ে দেব কখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে এবং কবে পরীক্ষা নেয়া হবে।’
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষাসংক্রান্ত নানা ধরনের ভুয়া তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলা হচ্ছে। এসব তথ্য আবার নানাভাবে ভাইরালও হচ্ছে। অনেকে যাচাই-বাছাই করতে আমাদের কাছে ফোন দিয়ে জানতে চাচ্ছেন। শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ছেন।
‘এ ধরনের অনেক সাইট বন্ধ করে দেয়া হলেও নতুন করে আবার তা গজিয়ে উঠছে। এ কারণে অপরাধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ওয়েবসাইট ও পেজ বন্ধ করতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের গুজবের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি দফতর-সংস্থার আবেদন পেলে আমরা তৎক্ষণাৎ তা বন্ধ করে দেই। ইতোমধ্যে এ ধরনের অনেকগুলো সাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় কারা এসব করছে, তা শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না— বলেন মন্ত্রী।
এমএইচএম/এমএআর/জেআইএম