অনলাইন ক্লাসে আগ্রহী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০% শিক্ষার্থী
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির অনুমতিক্রমে অনলাইন ক্লাস চালু থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম। তবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করতে আগ্রহী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা (আইইআর) ইনস্টিটিউটের তিন সহযোগী অধ্যাপক ড. মনিনুর রশিদ, ড. আহসান হাবীব ও ড. সাইফুল মালেক অনলাইনে এই সমীক্ষা করেন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৬০৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ ছাত্র ও ৪২ শতাংশ ছাত্রী।
সমীক্ষায় দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও গ্রামে অবস্থানকারী প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৮০ শতাংশ কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য অনলাইন ক্লাস করতে আগ্রহী। বিশেষ করে, স্নাতক (শেষ বর্ষ) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করে তাদের কোর্স সম্পন্ন করতে চান।
অনলাইন কার্যক্রমের প্রধান শর্ত হলো ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি। আর গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীরই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে অনলাইন ক্লাসের জন্য বিভাগীয় এবং জেলা সদরগুলোতে প্রয়োজনীয় ওয়াইফাই বা ব্রডব্যান্ড সুবিধা থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে মোবাইল ডাটা ছাড়া ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া দুরূহ। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৬২% মোবাইল ডাটা, ৩৬% ওয়াইফাই বা ব্রডব্যান্ড ও ২% পোর্টেবল মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা গ্রহণ করছেন।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ডাটা ক্রয় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের (৪৭ শতাংশ) জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর গ্রামে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের (৬৫ শতাংশ) জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এই ইন্টারনেট ডাটা ক্রয়। অংশগ্রহণকারীদের মতে, একটি এক ঘণ্টার ভিডিও ক্লাসের জন্য ৭০০-১০০০ মেগাবাইট ডাটা প্রয়োজন হয়। একজন শিক্ষার্থীর যদি পাঁচটি কোর্স থাকে এবং সপ্তাহে কোর্সপ্রতি একটি করেও অনলাইন ক্লাস হয়, তবে মাসে ২০টি ক্লাসের জন্য তাকে বেশ বড় ধরনের খরচ বহন করতে হবে।
গবেষণার তথ্যানুসারে, কোভিড-১৯-এর কারণে ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে শিক্ষার্থীদের ৩৬% কৃষিকাজ বা গৃহস্থালির কাজ, ২২% সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ১৫% গল্পের বই পড়া, ১১% অনলাইন বিনোদন, ৭% চাকরির প্রস্তুতি ও ৪% ত্রাণ কাজে নিয়োজিত। মাত্র ৩% শিক্ষার্থী এ সময়ে লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরেছেন। গ্রামে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৮০% কৃষিকাজ বা গৃহস্থালির অন্যান্য কাজে যুক্ত।
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী স্বল্পতার চিত্রও উঠে আসে গবেষণায়। সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই (৮৮%) নির্ভর করছেন মোবাইল ফোনের ওপর এবং মাত্র ৮% ল্যাপটপ, ৩% ডেস্কটপ কম্পিউটার ও ১% ট্যাবলেটের ওপর। এই চিত্রটি গ্রামে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও প্রকট, যাদের প্রায় ৯৬% এর অবলম্বন হলো মোবাইল ফোন। তবে মাত্র ৩% শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বিষয়ক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে আইইআরের সহযোগী অধ্যাপক ড. ম. মনিনুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ব মহামারির এই সংকটকাল কখন দূর হবে তা কেউ বলতে পারছে না। খাওয়া, পরা, চিকিৎসার মতো শিক্ষাও একটি মৌলিক কাজ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই সময়ে এগিয়ে যেতে না পারলে আমাদের জন্য খুব ভয়াবহ হবে। আমাদের সমীক্ষায় অনলাইন ক্লাস করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে স্নাতক ফাইনাল ও স্নাতকোত্তর বর্ষের শিক্ষার্থীরা। কারণ তারা আর কিছুদিন পর জব সেক্টরে ঢুকবে। তারা জব করবে।’
তিনি বলেন, ‘অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন-ডাটা কেনা, ইলেক্টনিক সামগ্রীর অভাব। এই সমস্যার সমাধানের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের সহযোগিতা নেয়ার পাশাপাশি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করতে পারে।’
ড. ম. মনিনুর রশিদ বলেন, ‘সমস্যা থাকবেই। সমস্যা ছাড়া পৃথিবীর কোনো কিছু নেই। তাই সমস্যা যাচাই করে তার সমাধান করতে হবে। প্রতিদিন আমাদের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। এছাড়া ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এখনই অনলাইন ক্লাস নেয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।’
এসআর/পিআর