সরকারি নয়, কুদরতি সাহায্য চান কওমি শিক্ষকরা
করোনাভাইরাসের দুর্যোগে আর্থিক সহায়তা না পাওয়ায় বড় সংকটে পড়েছেন কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এতে করে অনেক কওমি মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সচলগুলোর শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
এমন পরিস্থিতিতেও দেওবন্দের নীতি বিসর্জন দিয়ে সরকারি অনুদান গ্রহণ করবে না কওমি মাদরাসা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ। কওমি শিক্ষার নীতিনির্ধারকরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি অনুদান গ্রহণ বিষয়ে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মজলিসে খাসের এক সভায় সরকারি অনুদান গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে অনেকটাই সংকটে দিনাতিপাত করছেন কওমি মাদরাসার শিক্ষকরা।
কওমি মাদরাসাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সম্প্রতি সরকারি অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত ২ মে এক সভায় সরকারি অনুদান গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় বেফাক।
ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস। বৈঠক থেকে বেফাকের সভাপতি মাওলানা আহমদ শফীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করেন।
বেফাকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকারি অনুদান গ্রহণ কওমি মাদরাসার দেড়শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি আদর্শকে বিসর্জন দেয়া। তাই এ ধরনের অনুদান গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সব কওমি মাদরাসার দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বেফাক নেতৃবৃন্দ বলেন, উপমহাদেশব্যাপী বিস্তৃত কওমি মদরাসাগুলো ভারতের বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি-আদর্শ ও শিক্ষাক্রম অনুসরণ করেই পরিচালিত হয়ে আসছে। দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠাকালে অলঙ্ঘনীয় যে ‘উসুলে হাশতেগানা’ তথা আট মূলনীতি নির্ধারণ করে, তার অন্যতম একটি হলো ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে সরকারি অনুদান গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। সুতরাং এই মূলনীতিকে বিসর্জন দিয়ে দেশের কোনো কওমি মাদরাসা সরকারি অনুদান গ্রহণ করতে পারে না। অতীতেও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কঠিন সংকটকালীন সময়ে আমাদের পূর্বসূরিরা অনুদানের জন্য সরকারের দ্বারস্থ হননি।
বেফাকের কেন্দ্রীয় সভা থেকে কওমি মাদরাসার দায়িত্বশীলদের প্রতি বিশেষ আহ্বানে বলা হয়েছে, ক্ষণিকের সংকট উত্তরণে সরকারি অনুদান গ্রহণ করে অনন্তকালের কুদরতি সাহায্যের রাস্তা বন্ধ করবেন না। আল্লাহ পাকের ওপর দৃঢ় ভরসা রাখুন। করোনার মহামারি থেকে বিশ্ববাসী ও মুসলিম উম্মার মুক্তির জন্য দোয়া জারি রাখুন।
এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে টানা লকডাউনের কারণে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতেও। লকডাউন শুরু হওয়ার পর তাদের আয় কমে গেছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষকদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছে না।
বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো মূলত স্থানীয় সাহায্য, অনুদান ও শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। দারুল উলুম দেওবন্দের রীতিনীতি অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সরকারি কোনো সহায়তা গ্রহণ করে না এসব মাদরাসা।
সাধারণত এসব মাদরাসার অনুদানের সবচেয়ে বড় অংশটি আসে রমজান মাসে। কিন্তু এই বছর রমজানে লকডাউনের ফলে বেশিরভাগ মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় মাদরাসাগুলোরও আয় হচ্ছে না। ফলে সেগুলো পরিচালনা করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সিনিয়র সদস্য মাওলানা মুফতি নুরুল আমিন বলেন, আমাদের ওই অর্থে বড় কোনো পুঁজি নেই। এই মূহুর্তে মহান আল্লাহর কাছে তাওয়াক্কুল করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। সংকট যাচ্ছে। আমরা দেওবন্দ মাদরাসার নিয়ম নীতির ওপর অটল থেকে ধৈর্য ধারণ করছি। মহান আল্লাহর কুদরতি সাহায্য কামনা করছি।
সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৩৯৭টি কওমি মাদরাসা রয়েছে। তবে কওমি সংশ্লিষ্টদের দাবি, 'সারাদেশে মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে ২২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।'
বাংলাদেশে ছয়টি পৃথক আঞ্চলিক বোর্ডের মাধ্যমে এসব মাদরাসা পরিচালিত হয়।
এমএইচএম/জেডএ/জেআইএম