সক্ষমতা ছাড়াই ৭ মে শুরু অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-পরীক্ষা
বেসরকারি ৯৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টিরই নেই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা। বাকি ৫৬টির মধ্যে কোনোটি পুরাপুরি আবার কোনোটির আংশিক অনলাইন কার্যক্রম চালানোর সামর্থ্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গেল সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরাই এই তথ্য প্রদান করেছে। অথচ এরমধ্যেই আগামী বৃহস্পতিবার (৭ মে) থেকে অনলাইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা ও সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে।
অনলাইনে কার্যক্রম চালানোর এই চিত্রের মধ্যেও সমিতির মাধ্যমে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে প্রায় একমাস ধরে চাপ দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মূলত ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ নেয়াই এই অনলাইনে শিক্ষা চালুর মূল লক্ষ্য। যে কারণে একের পর এক চাপ তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইউজিসিতে সুবিধা করতে না পেরে সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে গত ৩০ এপ্রিলের বৈঠকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বিষয়টি উত্থাপন করেন।
তাৎক্ষণিকভাবে ভর্তি ও শ্রেণিকাজ অনলাইনে চালানোর ব্যাপারে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরা সম্মত হন। পরীক্ষার ব্যাপারে চলতি সপ্তাহে লিখিত নির্দেশনা জারির কথা বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী বর্তমানে এ-সংক্রান্ত খসড়াটি তৈরির কাজ চলছে। আগামী বৃহস্পতিবার এটি জারি হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা বা অ্যাসাইনমেন্ট নেয়া কঠিন কাজ। তবে ভাইভা পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে। কেননা, শিক্ষক দেখতে পাবেন তার ছাত্র বা ছাত্রীকে। এছাড়া শিক্ষার্থী মূল্যায়নে ছুটির আগে হয়ে যাওয়া ক্লাস টেস্ট, ইনকোর্স-টিউটোরিয়াল, কুইজ বা অন্য ধরনের মূল্যায়নকে আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। সবমিলে চলতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের সেশন ধরে রাখার জন্য কী কৌশল নির্ধারণ করে দেয়া হবে-সেটাই এই মুহূর্তে তৈরির কাজ চলছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের অনলাইন সক্ষমতার কথা চিন্তা করে ইউজিসির বেশিরভাগ সদস্যই অনলাইনে পরীক্ষার অনুমতি দেয়ার পক্ষে নন। কেননা, অনলাইনে নেয়া পরীক্ষায় কার পরিবর্তে কে অংশ নেয় কিংবা কার অ্যাসাইনমেন্ট কে লেখে ইত্যাদি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ ধরনের পরীক্ষার ফল আন্তর্জাতিকভাবে গ্র্যাজুয়েটের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
ইউজিসির সদস্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মধ্যে সংযুক্ত রাখতে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্লাস কার্যক্রমের সম্পূরক অনলাইন কার্যক্রম ভাবাটা ভুল হবে। কেননা, সব শিক্ষার্থীর এই সুবিধা আছে কি-না আমরা জানি না। আবার সব বিশ্ববিদ্যালয়েরও এই সক্ষমতা নেই, সেটা আমরা জানি। তবু সবমিলে নানা পেক্ষাপটে জরুরিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।
তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, সাধারণ ছুটি শুরুর আগে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গড়ে ৭০ শতাংশ ক্লাস ও মূল্যায়ন হয়ে গেছে। ৩০ শতাংশ বাকি আছে। এ ব্যাপারে ইউজিসি গাইডলাইন তৈরি করে দিতে পারে। যদিও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির গাইডলাইনের অপেক্ষা না করে গোপনে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন করে ফল দিয়েছে বলে অভিযাগ পাওয়া গেছে। এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কয়েকটি বনানীতে ও একটি শুক্রাবাদে অবস্থিত।
জানা গেছে, খসড়ায় পরীক্ষার ব্যাপারে কয়েকটি নীতি আছে। এগুলোর মধ্যে আছে-সাধারণ ছুটির আগে যে পর্যন্ত বা যতটুকু মূল্যায়ন হয়েছে, সেটা ৭০-৭৫ শতাংশ নেয়া যায়। এছাড়া ভাইভা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কমপক্ষে ৩০ মিনিট ধরে ভাইভা নিতে হবে। সেখানে কুইজ আকারে প্রশ্ন থাকবে। অ্যাসাইন বা বড় প্রশ্নে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও কেউ কেউ সময় বেঁধে দিয়ে ‘ওপেনবুক এক্সাম’র পরামর্শও দিচ্ছেন।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেসব বিভাগের ল্যাবরেটরি পরীক্ষা ও কাজ আছে সেগুলোর কী হবে? তবে আমাদের ড্রাফট (খসড়া) তৈরি হয়েছে। দেখি কমিশন (চেয়ারম্যান ও সব সদস্য) কী সিদ্ধান্ত নেয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা অংকের টাকা উপার্জনের পরও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারীদের মার্চের বেতন আংশিক দিয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ মার্চ থেকে ‘উইদাউট পে’ করে দিয়েছে। এখন গুঞ্জন উঠেছে, এপ্রিলের বেতন-ভাতা দেয়া হবে না তাদের। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শুধু টাকা আয়ের জন্যই অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার অনুমতি দেয়া চাচ্ছে।
তবে ইউজিসি বলছে, শিক্ষা কার্যক্রম বিশেষ করে পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দেয়া হবে রক্ষাকবজ নিশ্চিত করেই। আর এই অনুমতি দেয়ার একটা উদ্দেশ হচ্ছে, যাতে শিক্ষক-কর্মচারীরা ঠিকমতো বেতন-বোনাস পান।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম এ বিষয়ে একমত পোষণ করে বলেন, ‘আসলে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে অনুমতি দেয়াটা প্রকারান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের রাস্তা খুলে দেয়ার জন্য। কেননা, শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে তাদের উপার্জন থাকে না। তবে অনলাইনে মূল্যায়ন যাতে যথার্থ হয়, শ্রেণি কার্যক্রম ঠিকমতো হয়-এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।’
এমএইচএম/এসআর/পিআর
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ পাঠ্যবইয়ে ত্রুটি, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাইকে শোকজ
- ২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধে হাসিনার বিদায় ত্বরান্বিত হয়: প্রেস সচিব
- ৩ সরকারিতে আসনের চারগুণ আবেদন, সাড়া নেই বেসরকারিতে
- ৪ সাত কলেজের ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- ৫ গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মরণসভা করার নির্দেশ