ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে না যেসব কারণে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ১১:১১ এএম, ১৬ মার্চ ২০২০

‘আমার সন্তানকে আমি গত সপ্তাহ থেকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছি। স্কুল থেকে বহিষ্কার করলে করুক।’

ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য অভিভাবক করোনা সংক্রমণ থেকে সন্তানকে রক্ষা করতে স্কুলে পাঠানো বন্ধ রাখছেন বলে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। একইসঙ্গে এখনও সরকারিভাবে কেন স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িক কিংবা গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেখিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে না, তা নিয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করছেন তারা।

সরকার ছুটি ঘোষণা না করলেও বাস্তবে করোনা আতঙ্কে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কমে গেছে। ঢাকা, জগন্নাথ, বুয়েট, চুয়েট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বিবৃতি দিয়ে ছুটি ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন।

কিন্তু সরকারের মুখপাত্ররা বলছেন, ‘এখনও দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এমন হয়নি যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। দেশে মাত্র পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের তিনজন ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। স্থানীয়ভাবে এখনও সংক্রমণ ঘটেনি।’

school-1

শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাস সম্পর্কে নিয়মিত প্রেসব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২১ জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত বিমান, স্থল, সমুদ্র, নৌবন্দর ও রেলস্টেশন দিয়ে ৬ লাখেরও বেশি মানুষ বিদেশ থেকে এসেছেন। তাদের মধ্যে বিমানবন্দর দিয়ে এসেছেন ৩ লাখ ২ হাজার জন। গত এক সপ্তাহে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত দেশ থেকে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন ৯৪ হাজার জন। তাদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন মাত্র ২ হাজার ৩১৪ জন। ফেরত আসা যাত্রীদের মাধ্যমে এখনও স্থানীয়ভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেনি বলে দাবি করছেন রোগত্তত্ববিদরা।

তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, ‘সরকার তথ্য গোপন করছে।’ ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাস স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বলে তাদের ধারণা।

রোববার (১৫ মার্চ) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অধিকতর করণীয় নির্ধারণে ১৮টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে রাজধানীসহ সারাদেশে সভা-সমাবেশ ও ধর্মীয় জমায়েত না করা, জ্বর, হাঁচি ও কাশি থাকলে গণপরিবহনে যাতায়াত না করাসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপস্থিত প্রতিনিধির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাত ধৌত করার জন্য সাবান ও স্যানিটাইজার সরবরাহ করা ও ছুটির পর স্কুলকক্ষগুলো ডেটল স্যাবলন দিয়ে মুছে ফেলাসহ নানা পরামর্শ দেয়া হয়।

school-1

শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে 

বৈঠক শেষে প্রেসব্রিফিং চলাকালে গণমাধ্যমকর্মীরা অভিভাবকদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন বন্ধ করা হচ্ছে না প্রশ্ন করেন। জবাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন,‘সভা-সমাবেশ ও ধর্মীয় জমায়েত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রতিদিন যায়। একজন আরেকজনকে চেনে। কার অসুখ হয়েছে, কার জ্বর হয়েছে, কার শরীর খারাপ, সবাই জানে। কিন্তু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অপরিচিত অনেকে আসা-যাওয়া করে। সেখানে কে অসুস্থ কিংবা কার জ্বর হয়েছে, তা বোঝা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের আক্রান্ত দেশগুলোয় আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে কম। শূন্য থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। তাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। শিক্ষার্থী বা অভিভাবকরা যেন আতঙ্কিত না হন, সে ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত করার দায়িত্ব সবার। তবে স্কুল বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি হলে সরকার অবশ্যই তা বন্ধের ঘোষণা দেবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতামূলক কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে কোনো কথা নেই। স্কুল বন্ধ করা, না করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের না।’

এমইউ/জেডএ/এমএস