ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের করোনা আতঙ্ক : বিদ্যালয়ে কমছে উপস্থিতি

মুরাদ হুসাইন | প্রকাশিত: ১০:১১ এএম, ১৬ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে ঢাকা মহানগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি দেখা গেছে। সন্তানকে নিরাপদে রাখতে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে যেতে দিচ্ছেন না। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নমনীয় আচরণ করছে। কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত হতে না চাইলে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে না। রোববার রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, করোনাভাইরাস আতঙ্কে সকল ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। প্রতিটি ক্লাসে ৭১ জন করে শিক্ষার্থী থাকলেও সেখানে ১৫ থেকে ৩০ জন করে দেখা গেছে। এদিন শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধের নির্ধারিত দিন হওযায় উপস্থিতি একটু বেশি পাওয়া যায়। তাও প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। স্বাভাবিক সময়ে প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত থাকে বলে জানান শিক্ষকরা।

এই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র রাহাত জাগো নিউজকে বলেন, বাবা-মা স্কুলে আসতে নিষেধ করলেও সিলেবাস থেকে পিছিয়ে না পড়তে এক-দুদিন পরপর স্কুলে আসছি। কখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাই সেই ভয় নিয়েই স্কুলে আসতে হচ্ছে। তাই জরুরিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা উচিত বলে মনে করি। নতুবা শিক্ষার্থীরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়বে বলে।

আইডিয়াল স্কুলের সামনে উপস্থিত একাধিক অভিভাবকের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের গত এক সপ্তাহ থেকে স্কুলে আসতে দিচ্ছেন না। স্কুল থেকে যোগাযোগ করে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তারা এ বিষয়টি জানিয়েছেন। সন্তানকে বাসায় রেখে মার্চ মাসের টিউশন ফি পরিশোধ করতে তারা এসেছেন।

school-corona-(1)

তারা জানান, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারি ছড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশেও কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। অথচ এখনও সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে। ছোট ছেলেমেয়েরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার দায়ভার কে নেবে? এ কারণে সন্তানের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে অনেকে স্কুলে না পাঠিয়ে তার সন্তানকে দিনরাত ঘরের মধ্যে রাখছেন বলেও জানান কেউ কেউ।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাধিক ক্লাস শিক্ষকদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমতে শুরু করেছে। যারা উপস্থিত হচ্ছে তাদের নিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে। তবে রোববার মার্চের টিউশন ফি পরিশোধের নির্ধারিত দিন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা বেশি হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত হতে না চাইলে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে না।

রাজধানীর বেইলি রোডের সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, রোববার এ বিদ্যালয়ে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তবে যারা ক্লাসে এসেছে তাদের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ভয়ে ভয়ে স্কুলে আসছি। অভিভাবকরা আসতে মানা করছে, অনেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ার ভয়ে বাধ্য হয়ে স্কুলে আসতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে স্কুল বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানাই।

school-corona-(1)

সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাহাব উদ্দিন মোল্লা বলেন, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পর প্রতিদিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। প্রতিদিন ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হলেও বর্তমানে ৪০ শতাংশ উপস্থিত হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছি। অভ্যন্তরীণ ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রীদের সুস্থতার কথা চিন্তা করে যারা ক্লাসে আসছে না তাদের জোর করা হচ্ছে না। যারা অনুপস্থিত থাকবে তাদের বাড়তি ক্লাস করানোর ব্যবস্থা করা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।

একই পরিস্থিতি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। রোববার এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬০ শতাংশের বেশি ছাত্রী অনুপস্থিত ছিল। সকাল শাখায় গড়ে ৩৫ শতাংশ ও বিকেলে ৪০ শতাংশ ছাত্রী ক্লাসে উপস্থিত হয়। দুই-তিনটি ক্লাসের পর কোনো কোনো অভিভাবক তার সন্তানকে বাড়ি নিয়ে যায়।

ভিকারুননিসার একাধিক অভিভাবক জানান, সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা আগে করতে হবে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তৈরি হলেও সরকার এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে। আমাদের সন্তানের কিছু হলে তার ভুক্তভোগী আমাদের হতে হবে। এ কারণে অনেকে তার সন্তানকে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা পাঠাচ্ছেন তারাও দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকছেন। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

school-corona-(1)

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া রোববার জাগো নিউজকে বলেন, অনেক অভিভাবক করোনা সংক্রমণের ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। এ কারণে গত এক সপ্তাহ থেকে ক্লাসে ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে গেছে। অনেকে সন্তানকে স্কুলে পাঠাবেন না বলে শিক্ষকদের ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে কেউ ক্লাসে না আসলে আমরা কাউকে বাধ্য করছি না। অনুপস্থিতির কারণে কারও কাছে জরিমানা নেয়া হবে না। যারা অনুপস্থিত থাকবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের জন্য বাড়তি ক্লাসের ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জোরালো দাবি জানালেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। ফলে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা স্কুল, কলেজ, মাদরাসা বন্ধের দাবি করেছেন। অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

এদিকে করোনাভাইরাস নিয়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দেশনা পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি মাউশির অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব অফিসে পাঠানো হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, সরকার ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার্থে সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সবার সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। এতে রোগটি ছড়ানোর কারণ ও প্রতিরোধের বিষয়েও তথ্য রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক রোববার জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়ায় এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমরা দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে সতর্কতা ও সংক্রমণ এড়াতে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছি। সকল প্রতিষ্ঠানে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আমরা সকল খোঁজ-খবর রাখছি। অভিভাবকদের স্বাধীনতা রয়েছে তার সন্তানদের স্কুলে না পাঠানোর। তবে যদি কেউ ক্লাসে না আসে পারে তার বিরুদ্ধে যেন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হয় সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মহাপরিচালক আরও বলেন, আমরা নিয়মিত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ নিচ্ছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আলোচনা করে সকল স্কুল-কলেজ বন্ধের ঘোষণা করা হবে।

এমএইচএম/বিএ/এমএস