শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাস আতঙ্ক
করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বাংলাদেশে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আতঙ্ক আর উদ্বিগ্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ কারণে সোমবার রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নির্দেশনা পেতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে।
আতঙ্ক হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, সব শিক্ষার্থী-অভিভাবকের করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরা। অনেক প্রতিষ্ঠান সচেতনতা তৈরিতে নিজেরাই নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক অভিভাবক আতঙ্কিত। অনেক অভিভাবক সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্লাসে গেলে সহপাঠীদের সঙ্গে মিশে করোনায় আক্রান্ত হতে পারে এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তারা।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল মিমের অভিভাবক ইসমত জান্নাত জাগো নিউজকে বলেন, আমার সন্তানকে স্কুলে পাঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। স্কুলে গিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে মিশলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এ চিন্তায় সন্তানকে স্কুলে পাঠাবো কি না- তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী মেহেজাবিনের বাবা ইব্রাহিম বলেন, সন্তানের পড়ালেখার আগে তার নিরাপদ জীবন, তাই সন্তানকে নিরাপদ রাখাটা বাবা হিসেবে দায়িত্ব। স্কুলে গেলে সন্তান নিরাপদ থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে প্রতিদিন স্কুলে পাঠাব কি না- তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছি। তবে পরিস্থিতি খারাপ হলে মেয়ের স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া রেজওয়ান সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেইনি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেবে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের নানা পদক্ষেপ নেয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নানাভাবে সচেতন করা হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলে সেটি কার্যকর করা হবে।
একই কথা বলেন রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস বিষয়ে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা না নিলেও আমরা শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসব বিজ্ঞপ্তি বিদ্যালয়ের বোর্ডে, ভেতরে-বাইরে ঝুলিয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছি, সেখান থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হবে- তা বাস্তবায়ন করব। এ বিষয়ে তারাও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, করোনা বিষয়ে কী করণীয় সে সংক্রান্ত এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে এ বিষয়ে আমরা সজাগ। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
যতটুকু সমস্যা ততটুকু ব্যবস্থা নেয়া উচিত উল্লেখ করে সচিব বলেন, কী করণীয় সে বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা পরিস্থিতি বুঝে যে নির্দেশনা দেবে তা বাস্তবায়ন করব। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার মতো এখনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে সারাদেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় অনেক অভিভাবক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কেউ কেউ তার সন্তানকে স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সজাগ। এ বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সচেতনা তৈরিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সবার সচেতন হওয়া জরুরি। দেশের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কী করণীয় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করোনাভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ শুরু করা হবে।
প্রসঙ্গত, রোববার (৮ মার্চ) বিকেলে বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
এদিকে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থরক্ষাকারী সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু ও সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম উদ্দিন সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তিনজনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে, এ জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক-অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে হবে এবং মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের আহ্বান জানান তারা।
এমএইচএম/জেএইচ/জেআইএম