ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

৯৩ ভাগ শিক্ষার্থীর সরকারি মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন অধরাই থাকলো

প্রকাশিত: ০৯:২৪ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় শতকরা ৯৩ ভাগ শিক্ষার্থীর সরকারি মেডিকেল  কলেজের ভর্তি হয়ে পড়াশুনার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। গত শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারি ৮২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন স্বাস্থ্য অধিদফতর নির্ধারিত ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেয়ে ভর্তিযোগ্য ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে আসন সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় মেধার প্রতিযোগিতায় ভর্তি হতে পারছে মাত্র ৩ হাজার ৬৯৪ জন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে ৩০টি সরকারি মেডিকেল ও ৯ ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটে সর্বোচ্চ ৯৪ দশমিক ৭৫ এবং সর্বনিম্ন স্কোর ১৭৫ দশমিক ৫। এইচএসসি ও এসএসসিতে প্রাপ্ত  জিপিএর  ভিত্তিতে ১০০ নম্বর ও ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরসহ  মোট ২০০ নম্বরের মোট প্রাপ্ত নম্বর হিসেবে মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হয়। ফলে লিখিত পরীক্ষায় ৭০ এর ওপর নম্বর পেয়েও সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালের তালিকায় স্থান হয়নি বহু শিক্ষার্থীর।
 
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে প্রতি বছরই অসংখ্য শিক্ষার্থীর সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে পড়াশুনার স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়, অদৃষ্টভেবে তারা ফলাফল মেনেও নেন । কিন্তু এবার মরার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে বিপুল সংখ্যক মেধাবী  শিক্ষার্থী সরকারিভাবে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এটা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বলে জানান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশ্নপত্র ফাঁস বিতর্কের অবসান হয়নি। শিক্ষার্থীরা বলছে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন প্রমাণ মেলেনি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহ ও অভিযোগে র্যাব রাজধানী ও ঢাকার বাইরে থেকে সরকারি ডাক্তার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি  কমিশনের একজন সহকারি পরিচালকসহ ৯ জনকে আটক, প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র ও  কোটি টাকার বেশী ব্যাংক চেক উদ্ধার করেছে। ফলে বির্তক থেকেই যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক সাবেক মহাপরিচালক ও পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) জাগো নিউজকে বলেন, দেশে ক্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তারা বলেন, ২০০৭ সালে দেশে মাত্র ১৩টি মেডিকেল এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি ডেন্টাল কলেজ/ইউনিট ছিল। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলভাবে অনেক কম ছিল। তখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করা সহজতর ছিল।

বর্তমানে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ৩৯টি। উপরন্তুু গত কয়েকবছর যাবত বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল মিলিয়ে ১৪০টি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে গ্রহণ করা হচ্ছে। চলতি বছর ৮২হাজারেরও বেশী পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ  করেছে। এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণের  জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের যে সংখ্যক জনবল প্রয়োজন তা নেই। নিজস্ব জনবল না থাকায় গত কয়েকবছর যাবত  প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (বর্তমানে ওএসডি) অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. শিফায়েতউল্লাহ যিনি পরিচালক চিকিৎসা শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন হিসেবে ছয় বছর যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি ডিজি থাকাকালে মিডিয়াকে একাধিকবার বলেছেন, সরকারি বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী হয়। এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষাগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করা দুরুহ হয়ে পড়ছে জানিয়েছিলেন।

গণ স্বাস্থ্য বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী আজ জাগো নিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা পদ্ধতি ক্রুটিপূর্ণ। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে সরকারের উচিত প্রত্যেক সরকারি মেডিকেল কলেজে পৃথকভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন স্থানে র্যাবের গ্রেফতার প্রশ্নপত্র ফাঁস বা ফাঁসের অপচেষ্টার ইঙ্গিত বহন করে ।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ণ করা হয় তাতে কোচিং বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হয়। যে শিক্ষার্থীটি ফিজিক্স, কেমিষ্ট্রি ও বায়োলজি পড়াশুনা করে পাস করলো তাকে আবার সে বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হচ্ছে। বিষয়ভিত্তিকের চেয়ে বরং ওই শিক্ষার্থীর মানসিকতা ডাক্তারি পড়ার উপযুক্ত কি না তা যাচাই করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
 
স্বাস্থ্য অধিদফতর আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি ও বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা ক্রুটিপূর্ণ এ কথার সাথে একমত নই। তিনি বলেন,  প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে আমলানির্ভরতা কমিয়ে একাডেমিশিয়ানদের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, ছাপা, সরবরাহ ও পরীক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অধিক সংখ্যায় সম্পৃক্ত  করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, মেডিকেল কলেজের প্রশ্নপত্র কয়েকটি সেটে প্রণয়ন করা উচিত। পরীক্ষার দিন সকালে কোন সেটের প্রশ্ন পরীক্ষার হলে সরবরাহ করা হবে সে ঘোষণা দেয়া হলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ আর থাকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এমইউ/এআরএস/এমএস