আইসিএমএবিতে কেন পড়বেন?
ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)-এর পথচলা শুরু আজ থেকে ৬০ বছর আগে। ১৯৫৮ সালে ‘পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাকাউন্ট্যান্টস’-এর একটি ব্রাঞ্চ হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিং পেশার যাত্রা শুরু হয়।
স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত অর্ডিন্যান্স ১৯৭৭ এর মাধ্যমে ‘ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ’ (আইসিএমএবি) নামে বাংলাদেশে কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিং পেশা পরিচালিত হতে থাকে৷ ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে ‘কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস আইন ২০১৮’ পাস হয়। আইসিএমএবি স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্য শিল্প ও কারখানার ব্যবস্থাপনার জন্য মেধাবী ও দক্ষ পেশাজীবী গড়ে তোলা।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইএফএসি), দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড (আইএএসবি), দ্য কনফেডারেশন অব এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সিএপিএ) এবং সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস (এসএএফএ) এর মতো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান সংঘের সদস্য হওয়ায় আইসিএমএবির শিক্ষার মান এখন আন্তর্জাতিক মানের৷ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে পেশাগত ডিগ্রির চাহিদা দিনদিন বাড়ছে৷ ফলে অনেকেই সাধারণ ডিগ্রির পাশাপাশি পেশাগত ডিগ্রি অর্জন করে কর্মক্ষেত্রে দ্রুত সফলতা চাচ্ছেন।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের ফলে দিনদিন দেশে নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হচ্ছে। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে আর্থিক হিসাব-নিকাশসহ নানা ধরনের কাজের জন্য প্রয়োজন একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ হিসাবরক্ষক বা ব্যবস্থাপক, যার মধ্যে পেশাগত জ্ঞান থাকা আবশ্যক। বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে ভালো চাকরি পাওয়া কষ্টকর আর পেলেও পদোন্নতিতে বিড়াম্বনায় পড়তে হয়। এজন্যই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা ডিগ্রির পাশাপাশি প্রয়োজন পেশাগত ডিগ্রি। বর্তমানে এর চাহিদাও ব্যাপক। এমনই এক ডিগ্রি হচ্ছে সিএমএ বা কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিং। ব্যবস্থাপনা আর হিসাব শাখায় দক্ষ পেশাজীবী তৈরির লক্ষ্যে সিএমএ ডিগ্রি পড়াচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)। ঢাকার নীলক্ষেতে এর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।
গত ২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) কথা হয় আইসিএমএবি’র সহকারী পরিচালক (শিক্ষা) মো. নাঈম-উজ-জামান এর সঙ্গে। তিনি জানান, বছরে দুটি সেশনে ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে ভর্তি হতে পারেন। জানুয়ারি থেকে জুন এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর সেশনে৷ দুটি পদ্ধতিতে এখানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হয়। একটি হলো ‘ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুট’; অন্যটি হলো ‘গ্রাজুয়েট এন্ট্রি রুট’। ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতিতে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন আর গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতিতে স্নাতক পাস করে ভর্তি হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতিতে ভর্তি হতে প্রার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে সর্বনিম্ন জিপিএ ৮ পেতে হয়। গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতিতে ভর্তি হতে ন্যূনতম স্নাতক পাস হতে হবে এবং এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত পরীক্ষার ফলাফলে কমপক্ষে ছয় পয়েন্ট থাকতে হবে। দুই পদ্ধতিতে যেকোনো বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সিএমএ ডিগ্রি লাভের জন্য কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন।
সিএমএ কোর্সটি দুটি পদ্ধতিতে করানো হয়। একটি কোচিং পদ্ধতি এবং অন্যটি করেসপন্ডেন্স পদ্ধতি। যারা কোচিং পদ্ধতিতে ভর্তি হন তাদের নিয়মিত ক্লাস করতে হয়। করেসপন্ডেন্স পদ্ধতিতে যারা ভর্তি হন তাদের নিয়মিত ক্লাস করতে হয় না। শুধুমাত্র অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিলেই হয়। চাকরিজীবীদের জন্য করেসপন্ডেন্স পদ্ধতিটি অধিকতর সুবিধাজনক। আইসিএমএবি-তে বছরে দুবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। জুন ও ডিসেম্বর মাসে। কোচিং ও করেসপন্ডেন্সের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরীক্ষার পদ্ধতি একই।
সিএমএ কোর্সটিতে ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতিতে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের পাঁচটি লেভেল এবং গ্রাজুয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতিতে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের চারটি লেভেল সম্পন্ন করতে হয়। লেভেলগুলোর মধ্যে রয়েছে- নলেজ লেভেল, বিজনেস লেভেল, অপারেশনাল লেভেল, ম্যানেজমেন্ট লেভেল ও স্ট্র্যাটেজিক লেভেল। একটি লেভেল শেষ করতে ছয় মাস সময় লাগে। ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুটের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঁচটি লেভেল সম্পন্ন করতে মোট ২০টি বিষয়ে পড়তে হয়। গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি রুটে ছাত্র-ছাত্রীদের নলেজ লেভেল পড়তে হয় না। সেক্ষেত্রে অন্য চারটি লেভেল সম্পন্ন করতে মোট ১৭টি বিষয়ে পড়তে হয়। আইসিএমএবি থেকে পাস করা সদস্য এবং দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসব বিষয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন।
আইসিএমএবি-তে রোববার ব্যতীত সাপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে ক্লাস হয়। প্রতিটি ক্লাসের জন্য এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ। একদিনে দুটি করে ক্লাস হয়। এসব ক্লাস হয় দুই শিফটে। প্রথম শিফটের ক্লাস শুরু হয় বেলা ৩টা থেকে, শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। দ্বিতীয় শিফটের ক্লাস শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টায়, শেষ হয় রাত ৯টায়।
ইন্টারমিডিয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতিতে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নলেজ লেভেলের জন্য ভর্তি ফি দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। গ্র্যাজুয়েট এন্ট্রি রুট পদ্ধতিতে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের বিজনেস লেভেলের জন্য ভর্তি ফি ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। পরবর্তী সময়ে অপারেশনাল লেভেলের জন্য ১০ হাজার, ম্যানেজমেন্ট লেভেলের জন্য ১৪ হাজার এবং স্ট্র্যাটেজিক লেভেলের জন্য ১৮ হাজার টাকা ফি দিতে হয়।
এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের নলেজ লেভেল ও বিজনেস লেভেলের জন্য প্রতি বিষয়ে ৫০০ টাকা হারে এবং অপারেশন, ম্যানেজমেন্ট ও স্ট্র্যাটেজিক লেভেলের জন্য প্রতি বিষয়ে ৬২৫ টাকা হারে পরীক্ষার ফি দিতে হয়৷
আইসিএমএবি’র ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা ও যশোরে মোট ছয়টি শাখা রয়েছে। এর যেকোনো একটি শাখায় ভর্তি হয়ে একজন শিক্ষার্থী সিএমএ ডিগ্রি লাভ করতে পারেন।
আইসিএমএবি থেকে সিএমএ ডিগ্রি অর্জনের পর শুধুমাত্র তিনটি কেস স্টাডি পরীক্ষায় কৃতকার্য হলে ইংল্যান্ডের ‘চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস ডিগ্রি পাবেন৷ ফলে একজন সিএমএ ডিগ্রিধারী বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের ডিগ্রি পাচ্ছেন যা বিদেশে কাজ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষার্থীরা আইসিএমএবিতে কেন ভর্তি হবে বা সিএমএ ডিগ্রি কেন প্রয়োজন- এমন প্রশ্নের জবাবে আইসিএমএবি’র একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের পরিচালক নাজমুছ সালেহীন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে সিএমএ একটি সম্মানজনক পেশা। সিএমএ ডিগ্রিধারীগণ তাদের পেশাগত জ্ঞানের মাধ্যমে রুগ্ন ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করতে সক্ষম।
‘বাংলাদেশের মতো একটি সীমিত সম্পদের দেশে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে সিএমএ ডিগ্রিধারীগণ অত্যন্ত দক্ষ। ফলে চাকরির বাজারে তাদের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পেশাগত ডিগ্রি ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হওয়া অত্যন্ত কঠিন। বাংলাদেশে সিএমএ ডিগ্রিধারীদের অনেক চাহিদা। ফলে যিনি ডিগ্রি অর্জন করবেন তিনি সহজেই চাকরির বাজারে সম্মানজনক পদে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে পারবেন।’
সিএমএ ডিগ্রি লাভ করে নিজেকে দক্ষ হিসাবরক্ষক বা ব্যবস্থাপক হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে ভর্তি ও অন্যান্য বিষয়ে তথ্যের জন্য ভিজিট করতে পারেন www.icmab.org.bd- এই ঠিকানায়৷ এছাড়া ঢাকাসহ দেশের অন্য শাখাগুলোতে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।
নাহিদ হাসান/এমএআর/পিআর