ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

কু-প্রস্তাবের অভিযোগ তুলে নিতে আইডিয়াল শিক্ষিকাকে চাপ!

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০:০৭ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৯

রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (মুগদা শাখার) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আবদুস সালামের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা। অভিযুক্ত শিক্ষকের উপযুক্ত বিচারের দাবিতে অভিভাবকরা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়ার পরদিন থেকে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগকারী লিখিত অভিযোগে বলেন, অভিযোগকারী ও তার সহকর্মী শিক্ষক আবদুস সালাম মিয়ার বাসা পাশাপাশি হওয়ায় কারণে-অকারণে বাসায় আসতেন। প্রথম পর্যায়ে আকার ইঙ্গিতে নানা ধরনের কু-প্রস্তাব দিতেন। সাড়া না দেয়ায় এর মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। গত চার মাস ধরে আবদুস সালাম তাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। এক পর্যায়ে শিক্ষিকাকে ভয়-ভীতি দেখান। তাতেও কাজ না হওয়ায় বাড়িওয়ালার কাছে তাকে চরিত্রহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা জানান, তিনি তার বড়বোনের সঙ্গে মুগদা এলাকায় ভাড়া থাকেন। মাস ছয়েক আগে চাকরিতে যোগ দেন। কিছুদিন পর থেকেই বাবার বয়সী সহকর্মী আবদুস সালাম তাকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন। গত ২২ জুন তার বাবার মৃত্যুর পর যখন তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সে সময়ও ওই শিক্ষক তাকে হয়রানি ও কু-প্রস্তাব দিতে ছাড়েননি। এ ব্যাপারে তিনি অধ্যক্ষের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন।

বিষয়টি বাইরে জানাজানি হলো কীভাবে এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সমাজে নারীরা অনেক অসহায়, আমি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, আমি চাই না বিষয়টি জানাজানি হোক। এ জন্য সমাজে আমাকে সম্মানহানি হতে হবে, আপনাদের (সাংবাদিক) বিষয়টি নিয়ে ঘাটাঘাটি না করার অনুরোধ জানাই।

অন্যদিকে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা যৌন হয়রানির বিচার দাবি করেছেন অভিভাবকরা। গত রোবাবর তারা মগদা শাখার সামনে মানববন্ধন করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত ও পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান। নতুবা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির দুলা জাগো নিউজকে বলেন, একজন বয়স্ক শিক্ষক হয়ে তার সহকর্মী শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি করেছেন। এসব শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে থাকলে আমাদের মেয়েরা নিরাপদে থাকবে না। তাই অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত ও মামলা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে ৭২ ঘণ্টা সময় জুড়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সব অভিভাবকরা একত্রিত হয়ে সভাপতির অফিস ঘেরাও করা হবে।

জানা গেছে, অভিভাবকদের আল্টিমেটামের পরদিন রাতে আবদুস সালাম মিয়ার পরামর্শে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০-১২ জন শিক্ষক ওই শিক্ষিকার বাড়িতে যান। তারা সবাই অভিযোগ তুলে নেয়ার সুপারিশ করেন। তবে অভিযোগ তুলে নিতে ওই শিক্ষক সম্মতি হননি বলেও জানা গেছে।

অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, অভিযোগকারী শিক্ষিকা ও সালাম একই জেলার হওয়ায় দুজনের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কথা শোনা গেছে। ১৩ জুলাই ওই শিক্ষিকা আমার কাছে এসে সালামের নামে অভিযোগ করলে আমি তাকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলি। অভিযোগ পাওয়ার পর এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে শোকজ করা হয়, শোকজের জবাব পাওয়ার পর তাকে মুগদা শাখা থেকে বনশ্রী শাখায় ও অভিযোগকারীকে মুগদা দিবা থেকে সকাল শাখায় বদলি করা হয়।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, অভিযোগে যতটা উল্লেখ করা হয়েছে আসলে তার সবকিছু সঠিক নয়, এই শিক্ষকের সঙ্গে আগে তার ভালো সর্ম্পক ছিল। হঠাৎ তা উল্টে গেছে। যেহেতু সালামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে তাই গভর্নিং বডির সভায় বদলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অভিভাবকদের ৭২ ঘণ্টা আল্টিমেটামের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহান আরা বেগম বলেন, প্রতিষ্ঠানের সব বিষয়ে গভর্নিং বডি সিদ্ধান্ত নেবে, অভিযুক্ত শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে, পরবর্তী কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেও গভর্নিং বডি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে অভিভাবকদের দেয়া ৭২ ঘণ্টা শেষ হতে চললেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অভিযোগ তুলে নিতে অভিযোগকারীকে চাপ সৃষ্টির বিষয়টি তিনি জানেন না বলেও জানান।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, অভিযোগ পুরোটাই মিথ্যা, বানোয়াট। সে (অভিযোগকারী) আমার নিজ জেলার হওয়ায় তাকে বাড়ি খুঁজে দিয়েছি। বড় ভাইয়ের মতো আমি তার খোঁজ-খবর নিতাম। একদিন ওই শিক্ষিকার বাড়ির দারোয়ান অভিযোগ জানায় যে, শিক্ষিকার ফ্ল্যাটে দিনে-রাতে বিভিন্ন ছেলেরা যাতায়াত করেন।

তিনি বলেন, এটি জানার পর আমি তাকে সতর্ক করতে গেলে উল্টো আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে, এতো টাকা দিয়ে ভাড়া থাকেন। তার ফ্ল্যাটে কে আসবে, যাবে সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয় বলে জানিয়ে দেয়। যে দুজন লোক তার ফ্ল্যাটে আসেন তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে আছে বলেও জানান ওই শিক্ষিকা।

আবদুস সালাম বলেন, এই ঘটনার পরদিন তিনি আমার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। এ কারণে আমাকে মুগদা থেকে বনশ্রী শাখায় বদলি করা হয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এমএইচএম/জেএইচ/এমএস

আরও পড়ুন