মা আন্দোলনে, গরমে কাঁদছে শিশু
রাজপথে খোলা আকাশের নিচে তীব্র রোদের মধ্যে পলিথিনের ছাউনির নিচে পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশুটিকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার মা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য আন্দোলন করছেন। দেখা গেল এই প্রচণ্ড গরমে শিশুটি কাঁদছে।
টানা ৩৭ দিন ধরে বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সড়কের পাশে ফুটপাতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা। এসব শিক্ষকদের সঙ্গে ছোট ছোট শিশুরাও রয়েছে। সেখানে দেখা গেল এই করুণ দৃশ্য।
টানা আন্দোলনেও দাবি পূরণ হয়নি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। তার ওপরে গত ২০ দিন ধরে পালিত হচ্ছে শিক্ষকদের আমরন অনশন। আন্দোলনে এ পর্যন্ত ২৪৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জন শিক্ষক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়া সারাদেশে প্রায় ৪ হাজার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয়করণ থেকে বাদ পরা এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। তার মধ্যে ১ হাজার ৩০০টির মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য যাচাই-বাছাই করা হলেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বেশ কিছু নারী শিক্ষক এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাদের অনেকে নিজের ছোট শিশুকে নিয়ে ফুটপাতে বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার (২২ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র রোদ আর ধুলাবালির মধ্যে খালি গায়ে শিশুদের শুইয়ে রাখা হয়েছে। গরমে শিশুদের শরীর থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরলে মা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে তা মুঝে দিচ্ছেন। কোনো কোনো শিশু তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে কাঁদছে।
আন্দোলনে যোগ দেয়া বরগুনা জেলার বিলকিস আক্তার নামে এক শিক্ষক জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কী করব? শিক্ষকতা করে পেটে ভাত নেই, তাই বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে রাজপথে এসে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ঘরে দুধের শিশুকে একা রেখে আসা সম্ভব নয় বলে তাকেও নিয়ে এসেছি। সারাদিন সন্তানকে আমার সঙ্গে রোদ আর নোংরা পরিবেশে রাস্তায় থাকতে হচ্ছে। দাবি আদায় ছাড়া বাড়ি ফিরে যাব না। নিজের জীবন শেষ হয়ে গেলেও আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকরা গত এক মাসের বেশি সময় রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় দিন-রাত কাটছে। বৃষ্টি এলে ভিজে যাচ্ছেন, সেই ভেজা কাপড়েই থাকতে হচ্ছে। তার ওপরে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব রয়েছে। এতে অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ইতোমধ্যে একজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আন্দোলনে এসে এ পর্যন্ত ২৪৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের কারো অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিজ নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
এমএইচএম/এসআর/এমকেএইচ
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সদস্য হলেন আবুল কাসেম ফজলুল হক
- ২ উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে প্রকল্পে ধীরগতি, ত্রিপক্ষীয় সভা করবে ইউজিসি
- ৩ চাকরির বয়স দুই বছর না হলে মাদরাসা শিক্ষকের বদলির সুযোগ নেই
- ৪ পাঠ্যবই ছাপাতে পাল্টা পদক্ষেপ এনসিটিবির, বেঁধে দিলো সময়সীমা
- ৫ ২৫ মার্চের আগে বই ছাপা সম্ভব নয় জানিয়ে চিঠি, পরক্ষণে চাইলেন ক্ষমা