নিজেদেরই ছাড়িয়ে গেল রাজউক
উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে শতভাগ পাস করেছে। শুধু তাই নয়, ১ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী এ প্লাস পেয়েছেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে। যা গত চার বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।
এমন ফলাফলে কলেজ ক্যাম্পাসে বইছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। আনন্দ ভাগাভাগি করতে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছেন কলেজ প্রাঙ্গণে। পাস করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রাজউকের বর্তমান শিক্ষার্থীরাও।
আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণার আগে থেকেই ঢোল নিয়ে রাজউক মডেল কলেজ মাঠে হাজির হন শিক্ষার্থীরা। দুপুর পৌনে ১টায় কলেজ প্রাঙ্গণে নোটিশ বোর্ডে ফলাফল টাঙিয়ে দেওয়ার পর থেকেই দেখা মেলে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর খুশির বন্যা।
প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, ২০১৯ সালে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ১ হাজার ৫৮৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছেন। পাসের হার শতভাগ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ বেড়েছে ৩৬৭টি।
দুপুর দুইটার কিছু আগে মাঠে নেমে আসেন প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম।
তিনি বলেন, ‘বিগত চার বছরের তুলনায় এবার রাজউক কলেজের ফলাফল সর্বোচ্চ। হয়তো ঢাকার সব কলেজগুলোর মধ্যে আমরা সেরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল এটি। তবে ভালো ফল করার চেয়ে জরুরি ভালো মানুষ হওয়া। আশা করছি, ভালো করা শিক্ষার্থীরা সুন্দর মানুষ হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।’
রাজউক কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি নেতৃত্ব দেওয়া, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রমাণ করার অনুপ্রেরণাও দেওয়া হয় বলে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী আনিসা মেহরিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিজের চেষ্টা, শিক্ষকদের সহায়তা আর বাবা-মায়ের পাশে থাকার কারণেই এই ফলাফল করতে পেরেছি।’ নিজেকে আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘পড়ালেখার কোনো বিকল্প নেই। ভালো ফল করতে নিজেকে কষ্ট করতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।’
সন্তানদের ভালো ফলাফলের এই আনন্দে যখন অভিভাবক ও শিক্ষকরাও শরিক হন তখন সেই আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অনেক অভিভাবকের চোখে দেখা যায় আনন্দাশ্রু। তবে প্রত্যাশিত ফল করতে না পারায় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই।
মেয়ের ভালো ফলাফলের আনন্দ প্রকাশ পাচ্ছিল মা সৈয়দা মেহরুবা আহমেদরে চোখেমুখেও। তিনি বলেন, মেয়েকে সবসময় ভালোটাই শেখানোর চেষ্টা করছি। আজ ওর এই ফলাফলে আমি সত্যি আনন্দিত।
বিজ্ঞানের ছাত্র সাইফ ইকবালও পেয়েছেন জিপিএ-৫। তবে দেশের কোথাও পড়ার ইচ্ছা নেই জানিয়ে সাইফ বলেন, ‘বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। এজন্য ফলাফলে খুশি। এখন বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করব।’
কলেজের একপাশে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল মেহেরুননেসা মনি নামে একজন অভিভাবকের সঙ্গে। তার খুশির মাত্রাটা যেন একটু বেশি। এক সঙ্গে দুই মেয়ে পাস করেছে তার। শুধু পাসই নয়, দুজনই জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘কলেজের পাশাপাশি টিউশনি, কোচিং থেকে শুরু করে যা যা করা দরকার ওদের জন্য তাই করেছি। আজ আমি সফল হয়েছে। ভীষণ আনন্দিত আমি।’
তার ছোট মেয়ে সাফিনা আফরিন আবৃত্তি জানালেন, ‘বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছি, প্রকৌশলী হতে চাই।’
ঢাকায় গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ রোদের তাপ ছিল বেশ। রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ড্রাম, ঢোল নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠা তরুণরা কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়। একে একে বাড়ির পথে পা বাড়াল সবাই। কারণ, এই ফলাফল হাতে নিয়েই যেতে হবে অনেক দূর। তবে যাওয়ার আগে তাদের উচ্ছ্বাস প্রেরণা দিয়ে গেল নতুনদের।
জেপি/এসআর/এমএস
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ সরকারিতে আসনের চারগুণ আবেদন, সাড়া নেই বেসরকারিতে
- ২ সাত কলেজের ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- ৩ গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মরণসভা করার নির্দেশ
- ৪ পিএইচডি-এমফিলধারী ২০৬ শিক্ষককে সংবর্ধনা দিলো জমিয়াতুল মোদার্রেছীন
- ৫ শিক্ষা প্রশাসনে ফের বড় রদবদল, এবার ৪৬ কর্মকর্তাকে পদায়ন