আন্দোলনকারী শিক্ষিকার কোলের শিশুটি বমি করছে
রোদ-বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরম। রাস্তায় অনবরত চলছে গাড়ি। গাড়ির কালো ধুয়া, অস্বাস্থ্যকর বাতাস। একের পর এক হর্নের যন্ত্রণা তো রয়েছেই। এমন যন্ত্রণা সহ্য করেই টানা ২৭ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের পাশের ফুটপাতে অবস্থান করছেন তারা। এই ২৭ দিনের মধ্যে গত ১৩ দিন ধরে তারা আমরণ অনশন করছেন।
তারা হলেন তৃতীয় ধাপেও জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাদেরই একজন নোয়াখালীর হাতিয়া থানার নলচিরার বাসিন্দা শিপ্রা রানী দে। তার সঙ্গে প্রায় দুই বছরের শিশুসন্তানও ২৭ দিন ধরে রয়েছে এখানে। এভাবে অবস্থান করাতে এই শিক্ষিকার কোলের শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) রাত থেকে তার প্রচণ্ড জ্বর। শুক্রবার সকালে বমি করেছে শিপ্রা রানীর কোলের সন্তান।
আরও পড়ুন>> ১৩ দিন ধরে অনশন : ৩ শিক্ষক ডেঙ্গু আক্রান্ত
শুক্রবার সকালে শিপ্রা রানীর সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ দিয়ে গাড়ি যাচ্ছিল। হর্নও বাজচ্ছিল অনবরত। অন্যদিকে একসঙ্গে একাধিক মানববন্ধন চলায় শব্দে কান তব্দা হওয়ার অবস্থা। এর মাঝে শিপ্রা রানী তার সন্তান অসুস্থ হওয়ার কথা, কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন। এ শিক্ষিকা মায়ের কোলে থাকা শিশুটি এর মাঝে একবারের জন্যও চোখ খুলে তাকায়নি।
নলচিরায় আল-আমিন বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করেন তিনি। তবে এখন পর্যন্ত এক টাকাও বেতন পাননি। জাতীয়করণ হলে বেতন-ভাতা পাবেন। এই জাতীয়করণের দাবিতে তিনি কোলের সন্তানকে নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন।
শিপ্রা রানী দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাল রাত থেকে আমার ছেলের ভীষণ জ্বর, সকালে বমি করেছে।’
বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহাসচিব মো. কামাল হোসেন এবং সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ খোকন জানান, ২৭ দিনের আন্দোলনে এখন পর্যন্ত মোট ২১১ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
শিপ্রা রানী বলেন, ‘আমরা কত কষ্টের মধ্যে আছি। যেখানে শিয়াল-কুকুর বসবাস করে, শিক্ষক হয়ে সেখানে আমরা বসবাস করছি। ধুলা-বালু-আবর্জনার গন্ধে থাকা যায় না। এভাবে থাকতে থাকতে আমার বাবু অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
আরও পড়ুন>> রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আমরণ অনশনে শিক্ষকরা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে এ শিক্ষিকা বলেন, ‘আজকে ২৭টা দিন ধরে এখানে। আর কত দিন থাকব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? আপনি তো সবাইকে খাবার দিচ্ছেন, মা। আমাদের কেন খাবার দিচ্ছেন না, মা?’
ছোট্ট বাবুটি বমি করলেও এখন র্পযন্ত চিকিৎসক দেখাননি বলেও জানান শিক্ষিকা শিপ্রা রানী।
সংগঠনটির সহ-সভাপতি ফিরোজ উদ্দিন বলেন, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সব উপজেলা ও জেলায় অবস্থিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের কথা জানান। নিজ কার্যালয়ের চামেলী হলে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০১২ সালের ২৭ মে’র আগের বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের আওতায় আনা হবে। তাই বাংলাদেশে কোনো বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকবে না। তিন ধাপে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হবে।
ফিরোজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে আমরা জাতীয়করণ থেকে বঞ্চিত রয়েছি। ২০১২ সালের ২৭ মে’র আগের বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আমরণ অনশন চলতে থাকবে বলেও জানান আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
পিডি/জেডএ/পিআর
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ সরকারিতে আসনের চারগুণ আবেদন, সাড়া নেই বেসরকারিতে
- ২ সাত কলেজের ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- ৩ গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মরণসভা করার নির্দেশ
- ৪ পিএইচডি-এমফিলধারী ২০৬ শিক্ষককে সংবর্ধনা দিলো জমিয়াতুল মোদার্রেছীন
- ৫ শিক্ষা প্রশাসনে ফের বড় রদবদল, এবার ৪৬ কর্মকর্তাকে পদায়ন