কপাল খুলছে ২১ হাজার ইবতেদায়ি শিক্ষকের
দীর্ঘ দুই যুগ পর ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের কপাল খুলতে যাচ্ছে। সারাদেশে নিবন্ধিত ৪ হাজার ৩১২টি ইবতেদায়ি মাদরাসাকে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ২১ হাজার শিক্ষককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৯-২০ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সংক্রান্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ থেকে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে ১৯৮৪ সালে সরকারি এক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বেসরকারি বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। ইতোমধ্যে সারাদেশের ২৬ হাজার ১৯৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয়। একই সময়ে অভিন্ন আইনের বলে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি (যা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হলেও তাদের জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়নি। এ দাবিতে বিভিন্ন সময়ে রাজপথে আন্দোলন করেন শিক্ষকরা।
ইবেতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক নেতারা জানান, ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত মাসিক ৫০০ টাকা বেতন পেতেন। এ বছর এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কপাল খোলে। তাদের বেতন বেড়ে ১ হাজার টাকা করা হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় তা বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করা হয়। এরপর তৃতীয় দফায় সহকারি শিক্ষকদের (মৌলভী) সম্মানী ২৩০০ আর প্রধান শিক্ষকদের ২৫০০ টাকা করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রত্যাশা আরও বেড়ে যায়। স্কুলের মতো মাদরাসাও জাতীয়করণের জন্য তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। গত বছরের এপ্রিল মাসেও রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাসের সামনে রাজপথে বসে জাতীয়করণের দাবিতে আমরণ অনশনে নামেন তারা। পরে তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর আশ্বাসে তারা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যান। বর্তমানে সে আশ্বাস পূরণ হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন ৩ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদরাসা এবং উচ্চ স্তরের কলেজ-মাদরাসা এমপিওভুক্তির বিষয়টি অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলোর সঙ্গে ৪৩১২টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার সার-সংক্ষেপও অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপিত এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপে বলা হয়, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার আলাদা নীতিমালা ২০১৮ ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। যদিও এমপিও নীতিমালায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা অন্তর্ভুক্ত নেই। তবু এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে ৩১০ কোটি ৯৭ লাখ ৭১ হাজার ২৮০ টাকা বছরে প্রয়োজন হবে। এক মাস আগে গত ৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পাঠায়। প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব গত ১২ জুন অনুমোদন দেন। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ৫ জন করে মোট ২১ হাজার ৫৬০ শিক্ষকের কপাল খুলে যাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবন্ধিত ইবতেদায়ি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তি করা হবে।
সূত্র জানায়, এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলে শিক্ষকরা মাসিক জাতীয় স্কেলের বিভিন্ন গ্রেডে বেতন পাবেন। সে অনুযায়ী মাদরাসার প্রধানরা ১১ কোডে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবেন। এ ছাড়া দেড় হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা এবং ২৫০০ টাকা বৈশাখী ও ৬ হাজার ২৫০ টাকা উৎসব ভাতা পাবেন। আর মৌলভীরা পাবেন ১৬ কোডে ৯ হাজার ৩০০ টাকা করে। এ ছাড়া মাসে বেতনের সঙ্গে দেড় হাজার টাকা করে বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা এবং ১ হাজার ৮৬০ টাকা করে বৈশাখী ও ৪ হাজার ৬৫০ টাকা উৎসব ভাতা পাবেন।
ইবতেদায়ি শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে এ আন্দোলন করেছিল বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি। সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপনের পর সরকার আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে। ২০০৯ সালের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাসহারা বৃদ্ধি করেন। এরপর তিন ধাপে তা বাড়ানোর পর এবার বেতন স্কেলেই এমপিও দেয়ার যে উদ্যোগ নিলেন তা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে।’
তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘যেহেতু এমপিও হিসেবে বেতনভাতা দেয়া হবে, তাই তাদেরকেও ওই (এমপিও) নীতিমালায় ঢুকতে হবে। এ জন্য হয়তো ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগতে পারে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন হয়ে গেছে তাই সুবিধা পাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।’
এমএইচএম/এনডিএস/জেআইএম
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধে হাসিনার বিদায় ত্বরান্বিত হয়: প্রেস সচিব
- ২ সরকারিতে আসনের চারগুণ আবেদন, সাড়া নেই বেসরকারিতে
- ৩ সাত কলেজের ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- ৪ গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মরণসভা করার নির্দেশ
- ৫ পিএইচডি-এমফিলধারী ২০৬ শিক্ষককে সংবর্ধনা দিলো জমিয়াতুল মোদার্রেছীন