প্রশ্নফাঁস রোধে ৪ পদক্ষেপ, কান ঢেকে কেন্দ্রে গেলে বহিষ্কার
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস রোধে চার পদক্ষেপ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা থেকে এসব পদক্ষেপ কার্যকর করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বুধবার জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষার দিন সাতক্ষীরায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে। এ কারণে পরবর্তী ধাপের পরীক্ষা আয়োজনে আমরা আরও কঠোর অবস্থান অবলম্বন করছি। নতুন করে চারটি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হবে।
নতুন চার পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে একই জেলার প্রশ্ন প্রণয়ন ও প্রিন্টিং কাজের জন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে না। অন্য জেলায় কর্মরতদের দিয়ে এসব কাজ করা হবে। আগের মতো আর অভিন্ন প্রশ্ন সেট দিয়ে দ্বিতীয় ধাপে (২৬ জেলা) পরীক্ষা নেয়া হবে না। দুই বা তিনটি জেলায় একটি অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, প্রথম ধাপে ২৬টি জেলায় অভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় কোনো পরীক্ষার্থীকে কান ঢেকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। যদি কেউ পরীক্ষা কেন্দ্রেও কান ঢেকে রাখেন তবে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার দিন ২৬ জেলার সব কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে র্যাব, এনএসআইসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের চিঠি দিয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে শিক্ষক নিয়োগের দ্বিতীয় ধাপের মধ্যে রয়েছে- মুন্সীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, নরসিংদী, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, রাজবাড়ী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, নাটোর, লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও। এই ২৬টি জেলায় প্রায় ৬ লাখ প্রার্থী রয়েছে।
সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরীক্ষা আয়োজনে আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রশ্নপত্র হেফাজতে যেখানে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায়, সব চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমি মনে করি, বর্তমানে প্রশ্নফাঁসের সম্ভাবনা শূন্য শতাংশে নেমে গেছে। কারও পক্ষে অনিয়ম-দুর্নীতি করা সম্ভব হবে না। যে সব জেলায় পরীক্ষা হবে সে সব জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকতে নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৪ মে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ মে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা আয়োজন করার প্রস্তুতি চলছে। এ ধাপে দেশের ২৬ জেলায় প্রায় ৬ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। প্রথম ধাপের পরীক্ষায় সাতক্ষীরায় প্রশ্নফাঁস হওয়ায় বিপাকে পড়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে যাতে আর প্রশ্নফাঁসের ঘটনা না ঘটে এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বাড়ানোসহ নতুন চার ধরনের কৌশল অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষা ও প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পর একাধিক বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে একটি হয়েছে বুয়েটে। খোদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বুয়েটের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। এসময় তিনি প্রশ্নপত্র পাঠানোর প্রযুক্তির বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এছাড়া ওই কাজে কে বা কারা জড়িত সেটা জানতে চান। পাশাপাশি পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্ন আরও সুরক্ষিত করার প্রযুক্তি সম্পর্কেও আলোচনা করেন তিনি।
সচিব আরও বলেন, ৩১ মে’র পরীক্ষা সামনে রেখে ২৬ জেলার ডিসিকে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাতে জেলার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ তৎপর রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কারিগরি ও প্রযুক্তিগত কাজে কোনো শিথিলতা বা দুর্বলতা আছে কিনা তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি ব্যবস্থা নিতে বুয়েটকে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপার কাজে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাপারে আরও সতর্কতা গ্রহণ, পরীক্ষার্থীদের নজরদারি, নকল রোধে বোরখা পরিহিত পরীক্ষার্থীদের কান খোলা রাখার ব্যবস্থাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মে ১১ জেলায় প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সাতক্ষীরায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ২৯ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরে আট অভিভাবককে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রশ্নফাঁসে জড়িত স্থানীয় পাঁচ অপরাধীসহ ২১ জনকে তাৎক্ষণিক বিচারে দুই বছর করে দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
এছাড়া ইলেকট্রিক ডিভাইসসহ পাবনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরীক্ষায় অনিয়মের দায়ে সেখানে আটজন আটক এবং চারজনকে বহিষ্কার করা হয়। নোয়াখালীতেও একজনকে আটক এবং নকল সরবরাহ করায় পটুয়াখালীতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এমএইচএম/জেএইচ/জেআইএম